হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর দাওয়াত-শেষ পর্ব
হযরত ছোলায়মান (আঃ) বললেন, একটু থাম, আমার সকল মেহমানেরা আসলে একত্রে খাবার দিব। মাছ বলল, ততক্ষন আমার ধৈর্যে মানাবে না। যদি তুমি দয়া করে এখন কিছু দাও তবে খেয়ে যাব না হয় উপবাসী হয়ে চলে যাব। হযরত ছোলায়মান (আঃ) দেখলেন অনুপায়। যদি মাছে খালিমুখে ফেরত দেয়া হয় তবে ভীষণ কলঙ্ক হবে। তাঁর চেয়ে কিছু খাবার দিয়ে তাকে আগে ভাগে বিদায় দিলেই এ দিকের এন্তেজাম ভাল হবে। তাই তিনি মাছ কে বললেন, যদি তুমি অপেক্ষা করতে না পার তাহলে ময়দানে যে সমস্ত খাবার আছে তা থেকে যা তোমার পছন্দ হয় তা খেয়ে যাও। মাছ তখন দীর্ঘ আট মাসের সংগ্রহীত খাবার সমস্ত খাদ্যস্তূপ এক গ্রাসে খেয়ে ফেলল এবং চিৎকার দিয়ে বলল, বাকি আর কোথায় কি আছে দাও। আল্লাহ তায়ালা প্রতিদিন আমাকে তিন গ্রাস খাবার দিয়ে থাকেন। আজকে তোমার এখানে বেশি খাবার পাব বলে আশা করে এসেছি। এখন মাত্র এক গ্রাস খাবার দিলে। বাকি খাবার কোথায়?
হযরত ছোলায়মান (আঃ) এ দৃশ্য দেখে বেহুঁশ হয়ে সিংহাসনের পাশে পড়ে গেলেন। সমস্ত উপস্থিত মেহমানগণ এ দৃশ্য দেখে হতভম্বর হয়ে গেল। তারা কত আশা নিয়ে দাওয়াত খেতে এসেছিলেন। কিন্তু একটি মাছ সব কিছু সাবা করে দিল। এখন তারা আর কি খাবে। সকলের মুখ মলিন হয়ে গেল। কর্মকর্তা কর্মচারি সকলে হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর নিকট গিয়ে হাজির হয়ে দেখল তিনি সঙ্গাহীন অবস্থায় পড়ে আছেন। তখন আর কারো বিবেক বুদ্ধি স্থির রইল না। যে যেখানে ছিল নির্বাক অবস্থায় দাড়িয়ে রইল। মেহমানবৃন্দ অবস্থা দেখে যার যার পথ ধরল।
দীর্ঘ সময় পরে হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর জ্ঞান ফিরল। তখন তিনি সেজদায়ে পড়ে আল্লাহর দরবারে আরজ করে বললেন, দয়াময়! আমি তোমার হুকুমে যে উপাত্তপনা জাহির করেছি, তাঁর উপযুক্ত জবাব আমি পেয়েছি। তুমি আমার এ অপরাধ ক্ষমা কর। এ কথা চির সত্য যে তুমি ছাড়া রিজিকের জামিন হতে পারে না। আমি এত বড় সাম্রাজ্যের অধিপতি হয়ে এত খাদ্য সম্ভার করেও মাত্র একটু জিবের একবেলার খাদ্য আমি দিতে সক্ষম হইনি। আর তুমি সারা জাহানের সমস্ত জিবের খাদ্য প্রতিদিন নিয়মিত ভাবে দিয়ে আসছ। যাতে একটু প্রাণী অনাহারী থাকছে না। অতএব তোমার কুদরত অসীম। যা বুঝার ক্ষমতা আমার নেই। আমার এ অবাঞ্ছিত আশা করা ছিল মহা অন্যায় কাজ, যা আমি নিজ জ্ঞান দ্বারা বুঝতে পরেছি। এখন তুমি আমাকে ক্ষমা না করলে আমি সেজদা থেকে মাথা উত্তোলন করব না। নবীর তওবা আল্লাহ কবুল করে তাকে ক্ষমা প্রদান করেন। হযরত ছোলায়মান (আঃ) এ ঘটনার পরে জীবনে আর কোন দিন লজ্জায় আকাশের দিকে তাকান নি। বাকি জীবন তিনি এমন বিনম্রভাবে কাটিয়েছেন যা নজির বিহীন। তিনি বাকি জীবনে আর রাত্রি বেলায় ঘুমান নি। সারারাত তিনি এবাদাতের মধ্যে কাটিয়ে দিতেন।
হযরত ছোলায়মান (আঃ) এর দাওয়াত-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন