হযরত খিজির (আঃ)

নাম ও বংশ পরিচয়ঃ ইতিহাসবিশারদের এক দলের মতে খিজির হযরত খিজির (আঃ)-এর নাম নয়। এটা তাঁর উপাধি। তাঁর নাম সম্পর্কে ওলামাদের একাধিক মতামত ব্যক্ত হয়েছে। (১) বালইয়া বিন মালকান। (২) ইলইয়া বিল মালকান। (৩) খজরুন (৪) মোয়াম্মার প্রভৃতি। কিন্তু অধিকাংশের মতে তাঁর নাম বালইয়া বিল মালকান। আবুল আব্বাস তাঁর পিতৃপদবী যুক্ত নাম। খিজির তাঁর উপাধি। তিনি শাহী খান্দানের সন্তান। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তিনি সংসারের মায়া মমতা ত্যাগ দরবেশী অবলম্বন করেছিলেন। যদিও বাহ্যিকভাবে যুলকারনাইনের ওযীর ছিলেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন সংসারত্যাগী দরবেশ ছিলেন।

খিজির শব্দের অর্থ সবুজ সতেজ তরুলতা। একদিন তিনি তরুলতা বিহীন এক ধূধূ মাঠে বসার সাথে সাথে উক্ত সবুজ তরুলতা দিয়ে সতেজ হয়ে উঠেছিল। এজন্যই তাকে খিজির বলা হত। হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন, তিনি নামাজ পড়তে থাকলে তাঁর আশে পাশের স্থান সবুজ সতেজ হয়ে উঠত, তাই তাকে খিজির বলা বলা হত।

অধিকাংশ আলেমের মতে হযরত খিজির (আঃ) হযরত নূহ (আঃ)-এর উত্তর পুরুষ। হযরত ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, তিনি হযরত আদম (আঃ)-এর ঔরষজাত সন্তান। কারও কারও মতে তিনি ফেরেশতা, মানুষ নন। কিন্তু মোহাক্কেক আলেমদের মত হল যে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর যে সব কাজকর্মের কথা উল্লেখ করেছেন তা অনেকটা তকদীর সম্পর্কে কাজ করার দায়িত্বে নিযুক্ত ফেরেশতাদের কার্যের অনুরূপ। ফেরেশতাদের জ্ঞান এবং রাসূলের জ্ঞানের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। আল্লাহ পাক হযরত মূসা (আঃ)-কে দর্শন করিয়ে দিলেন যে, আল্লাহ পাকের এমনও বহু বান্দাহ আছে যারা আমার হুকুমগুলো ফেরেশতা ন্যায় পালন করে থাকে। তারা যে সকল কর্ম সম্পাদন করছে এর পিছনে কি রহস্য রয়েছে তা একমাত্র মহান আল্লাহই জানেন আর কারো বুঝার ক্ষমতা নেই। হযরত খিজির (আঃ) আদম সন্তান হওয়া সত্বেও তার মধ্যে ফেরেশতাদের বৈশিষ্ট্যগুলো প্রাধান্য লাভ করা কোন অসম্ভব ব্যাপার নয়। তাই এমন কার্য তাঁর দায়িত্বে অর্পণ করা হয়েছে যা ফেরেশতাদের দায়িত্বে দেয়া হয়ে থাকে। তিনি কি কারণে সর্ব সাধারণের দৃষ্টির বাইরে থাকতেন। তা একমাত্র আল্লাহই জানেন।

হযরত খিজির (আঃ) নবী ছিলেন কি ছিলেন না এ নিয়ে ওলামাদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। কারো কারো মতে তিনি নবী ছিলেন না বরং ওলী ছিলেন। কারো কারো মতে তিনি নবী ছিলেন। উভয়পক্ষে নিজ নিজ দাবীর স্বপক্ষে দলীল পেশ করেছেন।

হযরত খিজির (আঃ) এখনও জীবিত আছেন না কি ইন্তেকাল করেছেন এ সম্পর্কেও ওলামাদের মাঝে মতবিরোধ পরিলক্ষিত হচ্ছে। অধিকাংশ ওলামাদের মত হল যে, তিনি এখনও জীবিত আছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকবেন। কথিত আছে যে, তিনি আবেহায়াত পান করেছেন। ইতোপূর্বে হযরত যুলকারনাইনের আলোচনায় এ বিষয় আলোচিত হয়েছে। দজ্জাল যে ব্যক্তিকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবে তিনি হযরত খিজির (আঃ)। তাঁর পরে আর কাউকেও দাজ্জাল

হত্যা করতে সামর্থ হবে না। কিয়ামতের কিছু সময় পূর্বে যখন কোরআনে উঠিয়ে নেয়া হবে তখন তাঁর ইন্তিকাল হবে। অনেকে খুব দৃঢ়তার সাথে দাবী করেন যে, হযরত খিজির (আঃ) এখনও জীবিত আছেন এবং তাদের সাথে তাঁর সাক্ষাত হওয়ার ও কথোপকথনের অগণিত ঘটনাও বর্ণনা করেন। তবে যারা তাঁর ইন্তিকাল হয়েছে বলেন অভিমত পোষণ করেন তাদের যুক্তি, তিনি জীবিত থাকলে অবশ্যই রাসূল (সাঃ)-এর পবিত্র খিদমতে হাজির হয়ে তাঁর প্রতি ঈমান আনতেন এবং তাঁর সাথে জিহাদে শরীক হতেন। অথচ তিনি এরূপ করেছেন বলে প্রমাণ নাই। অধিকন্তু কোরআনে উল্লেখিত হয়েছে-

وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍ مِّن قَبْلِكَ الْخُلْدَ

অর্থঃ আপনার পূর্বে কোন মানুষকে চিরস্থায়ী জীবন দান করিনি। এ আয়াত হতে প্রমাণিত হয় যে, কোন মানুষই চিরস্থায়ী নয়।

বুখারী হাদিসে এক হাদিসে আছে রাসূল (সাঃ) মৃত্যুর এক মাস পূর্বে বলেছেন এখন যারা দুনিয়ার জীবিত রয়েছে একশত রয়েছে পর তাদের কেউই জীবিত থাকবে না। যারা হযরত খিজির (আঃ) এখনও জীবিত আছেন বলে মত প্রকাশ করেছেন- তারাও এক হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়েছেন যে হযরত আনাস বিন মালেক ও হযরত আবদুল্লাহ বিন জাবির (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সাঃ)-এর ওফাতের পর সাদা দাঁড়ি বিশেষ একজন মহাপুরুষ রাসূল (সাঃ)-এর পবিত্র শবদেহের নিকট এসে খুব ক্রদন করেন এবং উপস্থিত সাহাবাদেরকে সবুরের উপদেশ দিয়ে চলে গেলেন। তাঁর প্রত্যাগমনের পর হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, চারজন নবী জীবিত আছেন। তাদের দুজন দুনিয়াতে রয়েছেন তাঁদের একজন হযরত খিজির (আঃ) আর অপর জন হযরত ইলইয়াস (আঃ)। তাঁরা প্রত্যেক মৌসুমে একে অপরের সাথে দেখা করেন। অপর দুজন রয়েছেন আসমানে। একজন হযরত ইদরীস (আঃ) আর অপরজন হযরত ঈসা (আঃ)।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।