হযরত খালিদ ইবনে ওলীদ (রাঃ)এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা – পর্ব ২
হযরত খালিদ ইবনে ওলীদ (রাঃ)এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত খালেদ (রাঃ) বলেন, ভাইয়ের চিঠি পাওয়ার পর মদীনায় যাওয়ার জন্য আমার মন উদগ্রীব হইয়া উঠিল এবং ইসলামের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়া গেল। আরো খুশী লাগিল যে, রাসূল (সাঃ) আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিয়াছেন। এমন সময় একদিন আমি স্বপ্নে দেখিলাম যে, যেন আমি দুর্ভিক্ষ কবলিত সংকীর্ণ একস্থানে রহিয়াছে। অতঃপর সেখান হইতে আমি সবুজ শ্যামল ও প্রশস্ত একস্থানে বাহির হইয়া আসিলাম। ভাবিলাম, ইহা নিশ্চয় সত্য স্বপ্ন হইবে। তিনি শুনিয়া বলিলেন, তোমাকে সে আল্লাহ তায়ালা ইসলামের প্রতি হেদায়াত দান করিয়াছেন ইহাই তোমার সবুজ শ্যামল ও প্রশস্ত এলাকায় বাহির হইয়া আসার ব্যাখ্যা। আর নিজেকে যে সংকীর্ণ স্থানে দেখিয়াছ, তাহা তোমার পূর্বেকার শিরকের অবস্থা।
হযরত খালেদ (রাঃ) বলেন, আমি যখন রাসূল (সাঃ)-এর নিকট যাইবার দৃঢ়সঙ্কল্প করিলাম তখন চিন্তা করিলাম কাহাকে সঙ্গে লইব? এই ব্যাপারে সফওয়ান ইবনে উমাইয়ার সহিত সাক্ষাৎ করিয়া বলিলাম, হে আবু ওহাব? তুমি কি আমাদের অবস্থা দেখিতেছি না? বর্তমানে আমাদের সংখ্যা মাড়িদাঁতের ন্যায় কমিয়া গিয়াছে। অপরদিকে মুহাম্মাদ (সাঃ) আরব অনারব সকলের উপর জয়ী হইয়া গিয়াছেন। অতএব আমাদেরও মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নিকট যাইয়া তাঁহার অনুগত হইয়া যাওয়া উচিত। কারণ মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সম্মান আমাদেরই সম্মান। সফওয়ান আমার প্রস্তাব অত্যন্ত কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করিয়া বলিল, আমি যদি একাকীও থাকিয়া যাই তবুও তাহার আনুগত্য কখনই করিন না।
এই কথার পর আমি তাহার নিকট হইতে চলিয়া আসিলাম এবং ভাবিলাম, লোকটির পিতা ও ভাই বদরযুদ্ধে নিহত হইয়াছে। এইজন্য সে মানিতে পারিতেছি না। অতঃপর ইকরামা ইবনে আবি জাহলের সহিত সাক্ষাৎ হইল। তাহাকেও সেরূপ বলিলাম যেরূপ বলিলাম যেরূপ সফওয়ানকে বলিয়াছিলাম। ইকরামাও সফওয়ানকে মতই জবাব দিল। আমি তাহাকে বলিলাম, আমার কথাগুলি গোপন রাখিও। সে বলিল, আচ্ছা, কাহাকেও বলিব না। তারপর আমি ঘরে আসিয়া আমার সওয়ারী প্রস্তুত করিতে বলিলাম এবং সওয়ারী লইয়া বাহির হইলাম। চলার পথে ওসমান ইবনে তালহার সহিত সাক্ষাৎ হইল।
মনে মনে ভাবিলাম, সে তো আমার বন্ধু। তাহার কাছেই মনের কথা খুলিয়া বলিব। কিন্তু (মুসলমানদের হাতে) তাহার বাপ-দাদা নিহত হওয়ার কথা স্মরণে হওয়াতে তাহার সহিত আলোচনা করা সমীচীন মনে করিলাম না। আবার মনে হইল, আমার কি আর ক্ষতি হইবে? আমি তো এখনই রওয়ানা হইয়া যাইব। সুতরাং তাহার সহিত বর্তমান পরিস্থিতির অবনতি সম্পর্কে আলোচনা করিয়া বলিলাম, আমাদের অবস্থা তো গর্তের ভিতর আত্মগোপনকারী সেই শৃগালের ন্যায় হইয়া গিয়াছি যে, এক বালতি পানি গর্তের মুখে ঢালিয়া দিলেই বাহির হইয়া আসিবে। কথা প্রসঙ্গে উপরোক্ত দুইজনের সহিত
যাহা বলিয়াছিলাম, তাহাও বলিলাম, শুনিয়া সে তৎক্ষণাৎ রাজি হইয়া গেল। আমি বলিলাম, আমি তো আজই রওয়ানা হইতে ইচ্ছা করিয়াছি। আমার সওয়ারী ফাজ্জ নামক স্থানে প্রস্তুত হইয়া রহিয়াছে। তারপর আমরা উভয়ে স্থির করিলাম যে ইয়াজুজ নামক স্থানে আমরা পরস্পর মিলিত হইব। সে আগে পৌঁছিয়া গেলে তাহার জন্য অপেক্ষা করিব।
সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা
হযরত খালিদ ইবনে ওলীদ (রাঃ)এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা – শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন