হযরত খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রঃ) – ৩য় পর্ব
হযরত খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রঃ) – ২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অয্যোধ্যার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে তিনি হিজরী ৬৫৫ সালের ১০ ই রজব তিনি শায়খ ফরিদ উদ্দীন গঞ্জেশর্কর (রঃ) খানেকায় উপস্থিত হন। তাঁর খানকা শরীফ ছিল অয্যোধ্যায়। হযরত শায়খ (রঃ) ফরিদ গঞ্জেশর্কর (রঃ) কে পরম শ্রদ্ধাভরে কদমবুসি করলেন। প্রথম পর্বেই যেন সোনার সোহাগার মিলন ঘটল। গঞ্জেশর্কর (রঃ) এর যা কিছু দেবার ছিল, এর সবই মাহবুবে ইলাহী (রঃ) কে দান করলেন। তিনি স্বীয় চারতফি টুপী পরিয়ে দিলেন। স্বীয় খড়ম জোড়া ও খেরকাত তাঁকে দান করলেন।
উক্ত যে সমস্ত চারতফিওয়ালা টুপি খড়ম ছিল, ঐগুলো যে তাঁর কাছে অমূল্য রতন রূপে মনে হলো। তাঁর পর তিনি বললেন, আল্লাহর যে নেয়ামত আমার কাছে ছিল তা কাকেও দান করার কথা আমি ভাবছিলাম। পরক্ষণেই তিনি ভাবলেন হিন্দুস্থানের বেলায়েত কাকে দেয়া যায়, এ নিয়েও চিন্তা ভাবনার অন্ত ছিল না। এমন সময় গায়েবী আওয়াজের মাধ্যমের তাঁকে জানানো হল ধৈর্য্য ধর, নিজামউদ্দিন আসছে, হিন্দুস্থানের বেলায়েত তাঁকেই দান কর।
এই রূপ ভাবেই হযরত নিজামুদ্দিন তাঁর ওস্তাদের কাছ থেকে এলমে মারেফাতের বেলায়েত লাভ করে ইসলাম প্রচার ও প্রসারের কাজে নিজেকে মনোনিবেশ করিলেন।
মুর্শিদের দরবারে গিয়ে আধ্যাত্মিকতা শিক্ষা নিলেনঃ মুর্শিদের দরবারে তিনি মারেফাতের কামিলিয়্যাত হাসিলের বিশেষ সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি যে দরবারে উপস্থিত হয়েছিলেন তা তিনি সেকালের বিখ্যাত দরবার শরীফ। যার কথা পূর্বেই বর্ণনা করেছি। যে হযরত শায়খ ফরিদউদ্দিন গঞ্জেশর্কর (রঃ) এর দরবারে সর্বদাই বিখ্যাত সাধক ও আউলিয়াদের পদাচারণে আলংকৃত ছিল এবং তাদের সকলেই সাধ্যত পবিত্র দরবারে কাজে থাকতেন। আর দরবারে কাজেই তারা নিজেদের আধ্যাত্মিক উন্নতির মূল প্ররণা বলে মনে করতেন। সেখানে অত্যন্ত দীনহীন চিত্তে গ্রহণ করতেন এবং আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর পবিত্র মুহব্বত লাভের দিকে ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতেন। মারেফত আয়ত্ব করার জন্যে।
কথিত আছে যে গঞ্জেশর্কর (রঃ) এর মুরীদগণের মাঝে বেশি সংবেদন ছিলেন মাহবুবে ইলাহী (রঃ) একদিনের ঘটনা। তাঁর সেদিন বাজার করার কথা, এমনকি নিজের কাছেও পয়সা ছিল না। হযরত নিজামউদ্দিন ভাবলেন সামান্য লবণ বা ছাড়া কোন ক্রমেই খাওয়া যাবে না। সেই জন্য তিনি অপর এক পীর ভাইয়ের কাছ হতে কিছু পয়সা ধার গ্রহণ করে লবণ খরিদ করে তরকারী পাক করে, হযরত গঞ্জেশর্কর (রঃ) এর সামনে পরিবেশন করলেন।
উক্ত ঘটনা কিন্তু পীর সাহেবের অগোচরে সংঘটিত হয়েছিল। যখন খাদ্য পরিবেশনের সময় হল, তিনি পীর কেবলা হযরত গঞ্জেশর্কর (রঃ) এর সামনে খাদ্য পরিবেশন করা মাত্রই তিনি বলে উঠলেন, আহার্য্য বস্তু প্রত্যক্ষ করে আমি জানতে পারলাম যে উক্ত আহার্য্য বস্তুতে অপচয়ের গন্ধ মিশে আছে। এই তরকারীতে ব্যবহৃত লবণ কোথা হতে সংগ্রহ করা হয়েছে?
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত খাজা নিজামউদ্দিন আউলিয়া (রঃ) – ৪র্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন