হযরত ওয়ায়েস কারনী (রঃ)-পর্ব ২
হযরত ওয়ায়েস কারনী (রঃ)-পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তিনি কি আপনাকে দেখেছেন। তবে দেখেছেন নয়ন দিয়ে। তিনি যদি আপনার এতই গুণ মুগ্ধ, তাহলে আপনার সমীপে উপস্থিত হন না কেন?
আল্লাহর নবী বললেন, তার দু’টো কারণ আছে। প্রথম, আল্লাহ ও আল্লাহর নবীর প্রেমে তিনি এমনই বিভোর যে, তাঁর কোথাও যাওয়ার অবস্থা নেই। আর দ্বিতীয় কারণটি হল, তিনি শরীয়তের নির্দেশ পালনে নিয়ত নিরত। বাড়িতে তাঁর বৃদ্ধা মা আছেন। তিনি অন্ধ। ওয়ায়েস ছাড়া তাঁকে দেখার আর কোন লোক নেই। মায়ের ভরন-পোষণ, দেখা-শোনা, সেবা-পরিচর্যা ইত্যাদি যাবতীয় দায়দায়িত্ব তাঁকেই বহন করতে হয়। আবার রুজি-রোজকারের জন্য তাঁকে উটও চরাতে হয়।
একান্ত অনুচরবর্গ অবাক হয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কথা শুনতে থাকেন। এমন একটি মহিমাময় মানুষকে দেখার ইচ্ছা পুষ্পিত লতার মতো বেড়ে ওঠে সবার মনে। তাঁরা বলেন, তাঁর সাথে কি আমাদের দেখা হবে না? না, পার্থিবজীবনে তোমাদের সাথে তাঁর দেখা হবে না, হযরত আবু বকর (রঃ)-কে লক্ষ্য করে তিনি বললেন, আপনিও আপনার জীবনে তাঁকে দেখতে পাবেন না।
তবে উমার ও আলীর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হবে। অতঃপর তিনি ওয়ায়েস কারণীর দৈহিক বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করলেন। তাঁর সমস্ত শরীর অপেক্ষাকৃত বড় বড় লোমে ঢাকা। আর দু’হাতের বাম দিকে একটা করে সাদা দাগ আছে। অবশ্য তা শ্বেতী নয়। আসন্ন মৃত্যুর প্রাক্কালে মহানবী (সাঃ) তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী হযরত ওমর (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ)-কে বললেন, আমার মৃত্যুর পর আমার খেরকা ওয়ায়েস কারনীকে দেবে। তাঁকে আমার সালাম জানিয়ে বলবে, তিনি যেন আমার গুনাহগার উম্মতের জন্য দোয়া করেন।
নবীজীর এ আদেশও যথা সময়ে পালিত হয়।
হযরত ওমর (রাঃ) এর শাসনকাল। মহানবীর নির্দেশ ভুলে যাননি তিনি। হযরত আলী (রাঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে একদিন বেরিয়ে পড়লেন মহাতাপসের সন্ধানে কুফার পথে। কুফার মসজিদে খোতবা পাঠকালে হযরত ওমর (রাঃ) উপস্থিত লোকজনদের ওয়ায়েস কারনী (রাঃ) এর কথা জিজ্ঞেস করলেন। কিন্তু তেমন সুবিধা হল না।
মানুষ তাঁকে দেখেছে। কিন্তু তাঁর ভেতরের জ্যোতির্ময় ব্যক্তিত্ব সনাক্ত করতে পারেনি। যেটুকু সংবাদ পাওয়া গেল তা হল সে একটা পাগল। লোকালয় ছেড়ে জনবিরল এলাকায় বাস করে। মাঠে উট চরায়। দিনের শেষ শুকনো রুটি খায়। লোকে যখন হাসে, সে তখন কাঁদে। আর লোকে যখন কাঁদে, সে তখন হাসে। খাপছাড়া আস্ত এক পাগল।
এই সংবাদের ওপর ভিত্তি করে তাঁরা দু’জন কারন এলাকায় গেলেন। ওয়ায়েস তখন এক মনে নামাজ পড়ছেন। পাশেই তাঁর উট চরছিল। আল্লাহর ফেরেশতাগণ উটের পাল দেখাশোনা করছিলেন। নামাজ শেষ করে তিনি অতিথিদের কাছে এসে সালাম জানালেন। তাঁরা বললেন, আপনার নামটি জানতে পারি কি?
তিনি বললেন, আবদুল্লাহ।
হযরত ওমর (রাঃ) বললেন, আপনার আসল নামটি বলুন।
-ওয়ায়েস।
দয়া করে আপনার হাতখানা দেখাবেন?
তিনি হাত বাড়িয়ে দিলেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত ওয়ায়েস কারনী (রঃ)-পর্ব ৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন