হযরত ওয়াসে (রঃ)- শেষ পর্ব
প্রখ্যাত সাধক কোতায়বা (রঃ) এর সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ ছিল। একদিন তিনি তাঁর দরবারে হাজির হন অতি সাধারণ জীর্ণ পোশাকে। হযরত কোতায়বা (রঃ) তাঁর পোশাকের অবস্থা দেখে বললেন, আপনি এমন পোশাক পরেছেন কেন? হযরত ওয়াসে (রঃ) কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকলেন। তিনি আবারও বলেন, কী হল! কথা বলছেন না যে! এবার তিনি বললেন, আপনার প্রশ্নের কি উত্তর দিব ভেবে পাচ্ছি না। আমি উভয় সংকটে পড়েছি।
যদি বলি দরবেশ- ফকীরের পোশাক এরূপ সাদা সিধা অনাড়ম্বর হওয়া উচিত, তাতে একটা অহমিকা ভাব ফুটে ওঠে। আবার যদি বলি, আল্লাহ আমাকে দামী পোশাক পরার তওফীক দেন নি, তিনি যেভাবে রেখেছেন সেই ভাবে সে রকম পোশাক পরে আছি, তাতেও মনে হয় আল্লাহর ওপর কিছু অভিমান-অভিযোগ প্রকাশ পায়। তাই আমি কিছু না বলে চুপ করে থাকাই শ্রেয় মনে করি।
অর্থাৎ সামান্য অহমিকাও তাকে বিব্রত করত। আর বিলাসিতার ব্যাপারটি তিনি মটেও মেনে নিতে পারতেন না। তাঁর পুত্রের মধ্যে অহমিকা ও বিলাসিতার কিছু আভাস পেয়ে তাকে কাছে ডেকে বললেন, তুমি কেন, তা কি তুমি জান? তোমার মাকে মাত্র দু’শ দেরহাম দিয়ে বিয়ে করে এনেছি। আর আমি তোমার পিতা – সকলের চেয়ে আক অধম মুসলমান। আল্লাহর এক দীনতম দাসানুদাস। এখন ভেবে দেখ, মা-বাবা যার তুচ্ছতম দাস-দাসী, তাদের সন্তান হয়ে অহংকার প্রকাশ করা কি তোমার শোভা পায়?
এক লোক তাকে জিজ্ঞেস করেন, হুজুর, আপনি ভালো ও সুস্থ মনে আছেন তো? তিনি জবাব দেন, প্রতি মুহূর্তে জীবনের আয়ু ক্ষয় হয়ে চলেছে। কিন্তু পুণ্য বলতে কিছু নেই। বরং পাপের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় কি ভালো থাকা যায়? না মনে-প্রাণে সুস্থ থাকা সম্ভব?
হযরত ওয়াসে প্রায়ই বলতেন, আমি সব জিনিসের মধ্যেই আল্লাহর নিদর্শন দেখি। তাঁকে প্রশ্ন করা হয় আপনি কি আল্লাহকে চিনেছেন? তিনি কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে থাকেন। তারপর বললেন, আল্লাহকে যে চিনেছে সেই নির্বাক ও নিস্তব্দ হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহকে চিনবার পর মানুষ আর বেশি কথা বলতে পারে না। আর আল্লাহর অশেষ ইচ্ছায় যায় মানমর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে, সে কখনো আল্লাহ ছাড়া আর কারো দিকে ফিরেও দেখে না। তিনি আরও বললেন, কেউ কোন দিন প্রকৃত বিশ্বাসী হতে পারে না, যতদিন না তার মনে আশা ও নিরাশা সমানভাবে বিরাজ করে।
বহু অলী-দরবেশের সংস্পর্শ-ধন্য মহান আল্লাহ-প্রেমী এই সাধক আধ্যাত্ম-জগতের এক বিস্ময়কর আদর্শ হিসেবে আলোক স্তম্ভের মতো মনোলোকে বিরাজ করছেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া