হযরত ওয়াসে (রঃ)- পর্ব ১
‘হে প্রভু! আপনি আপনার প্রিয় বন্ধুগণের ন্যায় আমাকেও অভাবগ্রস্ত করে রেখেছেন। কিন্তু আমি বুঝতে পারি না, আমার কোন গুনে মুগ্ধ হয়ে আপনি আমাকে এ মর্যাদা দান করেছেন?’
প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে এক মহান তাপসের এ মোনাজাতে স্পষ্ট হয়, দারিদ্রতাকে তিনি কি উচ্চ মর্যাদায় মহিমান্বিত করেছেন। অভাবগ্রস্থ হওয়াও মানুষের একটি গুণের মর্যাদা – একথা তিনিই পরম গভীর অনুরাগে উচ্চারণ করেন।
এই মহা-তাপসের নাম হযরত ওয়াসে (রঃ)। সে যুগের এক প্রখ্যাত আলেম ও সাধক ছিলেন তিনি। সারাজীবনে শুধু শুকনা রুটি পানিতে ভিজিয়ে খেয়েছেন। অন্য কোন সু-স্বাদু উওম মুখরোচক খাদ্য গ্রহণ করেননি। তিনি বলতেন, যারা, এরূপ আহার করে, তাদের কখনও অন্যের মুখাপেক্ষী হতে হয় না।
তাঁর জীবনে এমন বহুবার হয়েছে যে, হয়ত দু’চার দিন চলে গেল, খাবার কিছুই জুটল না। হযরত হাসান (রঃ) এর দরবারে তাঁর যাতায়াত ছিল। তাঁকে দেখে হযরত হাসান বসরী (রঃ) খুব বেশি খুশী হতেন। সেখান থেকে কিছু খেয়ে আসতেন মাঝে মাঝে।
তাঁর সম্পর্কে হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলতেন, তাঁর মতো ভাগ্যবান ব্যক্তি আর নেই, যিনি পেটে ক্ষুধা নিয়ে সকাল বেলায় বিছানা থেকে ওঠেন আর ক্ষুধা নিয়েই রাতের বেলায় বিছানায় যান। আর এত কষ্ট সত্ত্বেও আল্লাহর এবাদতে বিমুখ হন না।
পরমুখাপেক্ষী আর পরনির্ভরশীল না হওয়াকেই তিনি বলতেন প্রকৃত বাদশাহী। তাঁর কথা, তুমি যদি বেলায়েতের অধিকারী হতে চাও এবং কারও কাছ থেকে কোন কিছু প্রত্যাশা না কর আর সৃষ্টিজগতকে একমাত্র আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল বলে মনে করতে পার, তাহলে তোমাকে আর কারও মুখাপেক্ষী হতে হবে না, কারও প্রতি কোন কাজে নির্ভরও করতে হবে না।
হযরত মালেক দীনার (রঃ) এর সঙ্গে তাঁর আলাপ-পরিচয় ছিল। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পার্থিব জীবনের ধন-সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ অপেক্ষা রসনা সংযত করাই কঠিন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া