হযরত ওমায়ের ইবনে ওহব জুমাহী (রাঃ) এর দাওয়াত প্রদান ও তাহার ইসলাম গ্রহণ – শেষ পর্ব
তারপর হযরত ওমায়ের (রাঃ) বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি আল্লাহর নূরকে নির্বাপিত করিবার চেষ্টা করিতাম এবং যাহারা আল্লাহর দ্বীন গ্রহণ করিত তাহাদিগকে অত্যাধিক কষ্ট দিতাম। অতএব আমার একান্ত ইচ্ছা এই যে, আপনি আমাকে অনুমতি দান করুন যেন আমি মক্কায় যাইয়া লোকদিগকে আল্লাহ ও তাঁহার রাসূল এবং ইসলামের প্রতি দাওয়াত দিতে পারি। হয়ত আল্লাহ
তায়ালা তাহাদিগকে হেদায়াত দান করিবেন। অন্যথায় মক্কার লোকদিগকে তাহাদের ধর্মের কারণে আমি ঠিক তেমনিভাবে কষ্ট দিব যেমন আপনার সাহাবীদিগকে তাহাদের দ্বীনের কারণে কষ্ট দিতাম। রাসূল (সাঃ) তাহাকে অনুমতি দিলে তিনি মক্কায় চলিয়া গেলেন।
এদিকে হযরত ওমায়ের ইবনে ওহব (রাঃ) মদীনার উদ্দশ্যে রওয়ানা হইবার পর সফওয়ান বলিয়া বেড়াইতেছিলেন মধ্যেই তোমরা এমন এক সুসংবাদ পাইবে, যাহা তোমাদের অন্তর হইতে বদরের সকল দুঃখ গ্লানি মুছিয়া দিবে এবং হযরত ওমায়ের (রাঃ) সম্পর্কে মক্কায় আগত আরোহীদের নিকট হইতে খবরাখবর লইতেন। অবশেষে একজন আরোহী আসিয়া হযরত ওমায়ের (রাঃ)এর ইসলাম গ্রহণের সংবাদ দিলে সফওয়ান কসম খাইলেন যে, তাহার সহিত কখনও কথা বলিবেন না এবং তাহার কখনও কোন উপকার করিবেন না। (বিদায়াহ)
ইবনে জারীর (রহঃ) হযরত ওরওয়া (রাঃ) হইতে উক্ত ঘটনা সম্পর্কে এক দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করিয়া উহাতে অতিরিক্ত এই কথাও উল্লেখ করিয়াছেন যে, হযরত ওমায়ের (রাঃ) মক্কায় আসিয়া ইসলামের প্রতি দাওয়াত দিতে আরম্ভ করিলেন এবং যে কেহ বিরোধিতা করিত তাহাকে কঠিন শাস্তি দিতেন। এইভাবে তাহার হাতে বহুলোক ইসলাম গ্রহণ করেন।
অপর এক রেওয়াতে বর্ণিত হইয়াছে যে, আল্লাহ তায়ালা হযরত ওমায়ের (রাঃ)কে হেদায়াত দান করায় মুসলমানগণ অত্যন্ত আনন্দিত হইলেন। হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) বলিলেন, ওমায়ের যখন মদীনায় আসিল তখন সে আমার নিকট শুকর অপেক্ষা নিকৃষ্ট মনে হইতেছিল, আর আজ সে আমার নিকট আমার ছেলে অপেক্ষা অধিক প্রিয় (এসাবাহ)
হযরত আমর ইবনে উমাইয়া (রাঃ) হযরত ওমায়ের ইবনে ওহব (রাঃ) ইসলাম গ্রহণের পর মক্কায় আসিয়া সোজা নিজের ঘরে গেলেন। সফওয়ান ইবনে উমাইয়ার সহিত করিলেন না। তিনি আপন ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ করিয়া দাওয়াত দিতে আরম্ভ করিলেন। সফওয়ান এই সংবাদ পাইয়া বলিলেন, যখন ওমায়ের আমার সহিত প্রথমে দেখা না করিয়া ঘরে চলিয়া গিয়াছি আমি তখনই বুঝিতে পারিয়াছি যে, সে যে জিনিস হইতে বাঁচিতে চাহিয়াছে উহাতেই যাইয়া পতিত হইয়াছে এবং বেদ্বীন গিয়াছে। আমি আর কোন দিন তাহার সহিত কথা বলিব না। তাহার ও তাহার সন্তানদের কোন উপকার করিব না। একদিন সফওয়ানকে হাতীমের ভিতর দাঁড়াইয়া থাকিতে দেখিয়া হযরত ওমায়ের (রাঃ) তাহাকে ডাকিলেন, কিন্তু সফওয়ান অন্যদিকে মুখ ঘুরাইয়া নিলেন। হযরত ওমায়ের (রাঃ) তাহাকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন, আপনি আমাদের একজন সর্দার, আপনিই বলুন, আমরা পাথরের পূজা করিতাম, উহার নামে পশু বলি দিতাম। ইহা কি কোন দ্বীন হইতে পারে? আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, আল্লাহ ব্যতিত কোন মাবুদ নাই এবং হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও তাঁহার রাসূল। সফওয়ান কোন জবাব দিলেন না। (ইসতীআব)
সফওয়ান ইবনে উমাইয়ার ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে হযরত ওমায়ের ইবনে ওহব (রাঃ)এর প্রচেষ্টা সম্পর্কে ইতিপূর্বে রেওয়াত উল্লেখ করা হইয়াছে।
সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা