হযরত ওমর (রাঃ) এর শাসন ব্যাবস্থা
খোলাফায়ে রাশেদীনের শাসনকাল ছিল ত্রিশ বছর। এ ত্রিশ বছর খোলাফায়ে রাশেদীন পরিচালনা করা হয়েছিল যে নিয়ম-নীতির দ্বারা তাঁর মূল উদ্বাবক হল হযরত ওমর (রাঃ)। সৈয়দ আমীর আলী বলেছিলেন, খিলাফতের ৩০ বছরের আমলে হযরত হযরত ওমর (রাঃ) জীবিত থাকাবস্থায় এবং মৃত্যুর পরে তাঁর অনুমোদিত নীতি উদ্ভুতন্ত্রের যে বীজ রোপণ করেছিলেন, এর পূর্ণ বিকাশ ও রুপায়িত করলেন হযরত ওমর (রাঃ)।
গণতন্ত্রের বিভিন্ন নিয়ম নীতিলামা সংস্করণ করতে না পারলেও শাসন ব্যবস্থার যে বিকাশ করেছিল এটাতে তাঁর কোন তুলনা হতে পারে না। হযরত ওমর (রাঃ) শাসন পদ্ধতির পদক্ষেপ হিসেবে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেছিলেন। হযরত ওমর (রাঃ) এর খিলাফত আমলে কোন প্রকার জটিল সমস্যা হলে পবিত্র কুরআন এবং সুন্নাহ মোতাবেক মজলিসে শুরার সাহায্যে ঐ সমস্যার সমাধান করতেন।
তাঁর রাজ্য শাসনের ব্যাপারে মজলিশ-উশ-শুরার সদস্য ব্যতীতও জনগণের মতামত তিনি গ্রহণ করতেন। হযরত ওমর (রাঃ) বিভিন্ন প্রদেশ এবং জেলায় শাসনকর্তা নিয়োগ করার ব্যাপারে সে অঞ্চলের জনসাধারনের মতামত জানতেন। যদি কোন শাসকদের বিরুদ্ধে জনগণের কোন অভিযোগ থাকত তাহলে তিনি তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করতেন। কুফার সাধারণ জনগণ অভিযোগ করলেন কুফার শাসনকর্তা সা’দ ইবনে আবি অয়াক্কাস (রাঃ) এর বিরুদ্ধে। এ কারনেই হযরত ওমর (রাঃ) সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ)-কে সে পদ হতে অপসারণ করেছিলেন।
হযরত ওমর (রাঃ) এর নির্দেশ অনুসারে সব নাগরিকেরই অধিকার বজায় থাকত। প্রকাশ্যভাবে সাধারণ জনগণ তাঁদের অভিযোগ এবং দাবির কথা বলতে পারতেন। হযরত ওমর (রাঃ) এর শাসনামলে সকল শ্রেনীর লোক সমান অধিকার ভোগ করতে পারতেন। হযরত ওমর (রাঃ) কোন কোন সময় বলতেন, আমি নিশ্চয় তোমাদের মত একজন। আমার মনগড়া কোন নির্দেশ দিলেই তোমরা তা মেনে চলবে এ আশা আমি করব না। হযরত ওমর (রাঃ) এর আমলে সাম্রাজ্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধর্মের লোকের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং তাঁদের সবাইকে বিভিন্ন রকমের সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হত।
অমুসলিমদেরকে রাষ্ট্রের জিম্মি বলা হয়ে থাকে। জিজিয়া কর দিয়ে জিম্মিরা সব রকমের সুযোগ-সুবিধা পেতেন। তাঁরা কর প্রদান করার জন্য তাঁদেরকে বৈদেশিক আক্রমণ হতে রক্ষাণাবেক্ষণ করা হত। যদি কোন ক্রমে খলিফা তাদের রক্ষাণাবেক্ষণ করতে ব্যর্থ হত তা হলে তাদের কাছে হতে আদায়কৃত কর ফেরত দেয়া হত। অমুসলিমদের মধ্যে যারা সম্পদশালী ছিল তাঁদের নিকট হতে খারাজ আদায় করা হত।
এর কারণ হল তাঁদের সম্পতি সরকার রক্ষণাবেক্ষণ করতেন। অমুসলিমদেরকে হযরত ওমর (রাঃ) সহানুভূতির নজরে দেখতেন। সাম্রেজ্যের যে কোণ কাজে হযরত ওমর (রাঃ) সাম্রাজ্যের পরামর্শ গ্রহণ করতেন। হযরত ওমর (রাঃ) বার্ধক্য ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন।