হযরত ওমর (রাঃ) এর যুদ্ধ
পৃথিবী জয়ের পূর্বে এ পৃথিবীর মানুষ কোনদিনই বিশ্বাস করতে পারেনি যে, শুধুমাত্র কয়েক হাজার মরুচারী আর বেদুঈন তদানীন্তন পৃথিবীর বড় বড় শক্তিকে এভাবে উড়িয়ে দিবে। এ জয়ের পেছনে রয়েছে ইসলামের অবিশ্বাস্য শিক্ষা। পারস্য সম্রাট খসরু যখন কোন উপায় খুঁজে পেলেন না তখন তিনি চীন সম্রাটের কাছে সহযোগিতা আব্দার করলেন। চীন সম্রাট তখন মুসলমানদের গতি-বিধি সম্পর্কে সংবাদ নিয়ে পারস্য সম্রাট খসরুকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, মুসলমান জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাবে এমন কোন পাগল কি আছে।
কাদিসিয়ার লড়াইয়ের সময় বিখ্যাত আবু রেজা ফারসীর পিতামহ সেখানে হাজির ছিলেন, তিনি বলেছেন, আমার মনে হয়েছিল আরবের তীরগুলো ছুচের মতই দুর্বল, কিন্তু পরবর্তীতে লক্ষ্য করলাম যে, সে দুর্বল ছুইটিই পারস্য সাম্রাজ্যেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।
প্রকৃত অর্থে মুসলমানদের ন্যায়-নীতি, সততা অকৃত্রিমতা, অকপটতা, সাধুতা, সরলতা এবং ত্যাগ- তিতিক্ষার মাধ্যমেই তাঁরা বিশ্বকে জয় করতে পেরেছে। ইসলামী শিক্ষার, সংস্কৃতি, সভ্যতা ইত্যাদি যত কিছুই গড়ে উঠেছিল, সব কিছুর কারণ ছিল পবিত্র কুরআনের মূল্যানের জন্য এবং তাঁর জ্ঞান চর্চার জন্য। এ পবিত্র কুরআন হতেই মরুচারী আরবগণ সেদিন জয় করেছিল শত শত সোনার সিন্ধুকের চাবি। এজন্য তাঁদের মাথার মনি ছিল একমাত্র কুরআন।
আর পবিত্র কুরআন কে লক্ষ্য করেই উদ্ভাবিত হয়েছিল তাঁদের জ্ঞান, বিজ্ঞান, সাহিত্য এবং সংস্কৃতি।
এ কুরআনকে পরবর্তী যুগে কেন্দ্র করেই পুণ্যাত্মা খলিফাগণ কালের আবর্তনে, সমাজের বিবর্তনের আসল পাঠ্যক্রম পবিত্র কুরআনের সঙ্গে মিল রেখেই কিছু সংস্কার এবং সম্প্রসারণ করা হয়েছিল। এ সম্পর্কে নিচে বর্ণনা করা হলঃ
পবিত্র কুরআন শরিফঃ ইসলামী শিক্ষার নির্ভুল এবং মৌলিক পাঠ্যক্রম।
পবিত্র হাদীস শরীফঃ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মুখের বাণী এবং জীবন প্রণালী।
ফেকাহ শাস্ত্রঃ ইসলামের গাণীতিশাস্ত্র।
কিয়াসঃ কিয়াস হল ইসলামী শাস্ত্রের চতুর্থ ভিত্তি। পবিত্র কুরাআন এবং হাদীসে নিয়ম-নীতি অনুযায়ী বিচার করা, অনুমান করা এ দুটিকে লক্ষ্য করে কিয়াসের রচনা করলেন খলিফা হযরত ওমর (রাঃ)
ইজমাঃ ইজমা হল পবিত্র কুরআন এবং হাদীসে কোন কিছু না পেলে তখন সকলে একত্রিত হয়ে এ উজমার উপর নির্ভর করত। আর এ ইজমা প্রচলন করলেই ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)।
ইজতিহাদঃ ইজতিহাদ হল বিবেকের প্রয়োগ। একদা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মুয়ার বিন জাবলকে ইয়ামেনের গভর্নর নিয়োগ করে পাঠালেন। অতঃপর তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন যে, তুমি বিচার করবে কিভাবে? তিনি তখন জবাব দিলেন যে, আমি বিচার করব পবিত্র কুরআন হতে। এরপর হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আবার বললেন, যদি তুমি করআনেও না পাও তখন তুমি কি করবে?
এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন যে, হাদীস এর সাহায্য নেব। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আবারও বললেন, যদি হাদিসে না পাও তাহলে কি করবে?
তখন তিনি উত্তর দিলেন সে মুহুর্তে নিজের বিবেক হতে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর উত্তর শুনে খুব আনন্দের সঙ্গে বলে ছিলেন যে হে আল্লাহ্! আপনি আমাকে এমন একজন উম্মত দিয়েছেন, যে তাঁর নিজের বিবেককে কাজে লাগাতে চায়।