হযরত ওমর (রাঃ) এর মানব সেবা – পর্ব ১
হযরত আবু বকর (রাঃ) এর ইন্তেকালের পর খলিফার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন হযরত ওমর (রাঃ)। হযরত ওমর (রাঃ) আরব সাম্রাজ্যের খলিফা বা বাদশাহ হয়ে অতি সাধারণ ব্যক্তির ন্যায় জীবন-যাপন করতেন। তাঁর সম্বন্ধে অনেক কাহিনী প্রচলিত আছে।
গভীর রাতে একদিন খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) একজন দেহরক্ষী হিসাবে আব্বাসকে সঙ্গে নিয়ে সাধারণ নাগরিকের ছদ্মবেশে শহরে নির্জন পথ দিয়ে চলতে চলতে তাঁরা একটি পাতার কুটিরের সামনে এসে পড়লেন। শুনতে পেলেন একটি শিশু মেয়ে কাঁদছে। কুটিরের ভাঙা বেড়ার ফাক দিয়ে তাঁরা দেখতে পেলেন একটি বৃদ্ধা উনুনের পাশে বসে আছে।
তাঁর আশেপাশে কয়েকটি ছেলেমেয়ে ক্ষুধায় কাতর হয়ে কাঁদছে। অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করে তিনি বিরক্ত হয়ে কুটিরে প্রবেশ করলেন। জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এখনও তাঁদের খাবার দিচ্ছো না কেন? রাত্রি অনেক হয়েছে, এরা ক্ষুধায় অতিশয় কাতর হয়ে পড়েছে। অতি তাড়াতাড়ি তাঁদের খাবার খেতে দাও। বৃদ্ধা আগন্তুকের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ঘরে খাবার জিনিস কিছুই নেই। কি খেতে দেব তাঁদেরকে।
হযরত ওমর (রাঃ) বললেন, কেনো, ওই হাড়িতেই তো খাবার রান্না করছ, সে খাবার তাঁদের খেতে দাও। বৃদ্ধা দু’ চোখ হতে পানি গড়িয়ে পড়লো। উত্তর দিলেন, হাড়িতে শুধুমাত্র পানি আর পাথর। হযরত ওমর (রাঃ) আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এমন করার কারণ কি? বৃদ্ধা খুব ধীরে ধীরে জবাব দিলেন, এরা খাবারের আশায় কেঁদে কেঁদে হয়রান হয়ে পড়বে। অতঃপর ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়বে। তখন আমিও ওদের আবদার হতে রক্ষা পাব।
হযরত ওমর (রাঃ) এর মন তাঁদের প্রতি মায়ায় গলে গেল। তখন হযরত ওমর (রাঃ) বললেন, আহা, খুব তো কষ্ট তোমাদের! এ ছেলেমেয়েদের পিতা কোথায়? বৃদ্ধা স্ত্রীলোকটি বললেন, সে ছিল আমার এক মাত্র পুত্র। গত বছর সে আর এ সন্তানদের জননী জান্নাতবাসী হয়েছে। এদের নিয়ে পড়ে আছি মহাবিপদে। কিভাবে যে এদের আহার যোগাবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।
হযরত ওমর (রাঃ) বললেন, এ শিশুদেরকে আরও কিছুক্ষন ভুলিয়ে রাখ, আমরা কিছু খাবার তাঁদের জন্য নিয়ে আসছি। এ কথা বলে হযরত ওমর (রাঃ) সেখান থেকে চলে গেলেন। তিনি ফিরে গিয়ে খাদ্য ভাণ্ডার খুলে তেল, মসলা, এবং কিছু জ্বালানী কাঠ হাতে দিলেন। অতঃপর এক বস্তা ময়দা নিজের পিঠের উপর তুলে নিলেন, সঙ্গীটি ঐ ময়দার বস্তাটি তাঁর কাঁধে নিতে চাইল। কিন্তু হযরত ওমর (রাঃ) তাঁর প্রস্তাবে রাজি হল না। বললেন, আমার অপরাধের বোঝা আমাকেই বইতে দাও।
রোজ কিয়ামতের দিন আমার পাপের বোঝা তোমরা কেউ বইতে আসবে না। দু’জনে বৃদ্ধার জীর্ন কুঠিরে ফিরে এলেন। হযরত ওমর (রাঃ) নিজের হাতে রুটি তৈরি করলেন এবং শিশুদেরকে পেট পুরে আহার করালেন। আহার করার পরে তাঁদের মুখে হাসি ফুটে উঠল। শিশুদের হাসি দেখে হযরত ওমর (রাঃ) এর মুখেও তৃপ্তি হাসি ফুটে উঠল। হযরত ওমর (রাঃ) তাঁর সঙ্গীকে নিয়ে বিদায় গ্রহনের সময়ে বৃদ্ধাকে বললেন, বুড়ি মা, এ বাচ্চাদের ভাবনা তোমাকে আর ভাবতে হবে না।
হযরত ওমর (রাঃ) এর মানব সেবা –শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন