হযরত ওমর (রাঃ) এর বংশ পরিচয়, বাল্য, কৈশোর ও যৌবন
৫৮২ ঈসায়ী সনে ওমর ফারুক আরবের পবিত্র মক্কা শহরে বিখ্যাত কুরাইশ বংশের আদিয়া গোত্রের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম খাত্তাব এবং দাদার নাম নুফাইল ইবনে উজ্জা। আর নুফাইল উজ্জা ছিলেন কুরাইশ বংশের প্রধান বিচারপতি।
হযরত ওমর (রাঃ) এর মাতার নাম খাশতানাহ, মাতামহ হিশাম। তাঁর সপ্তম পুরুষ ছিলেন আদ এবং তাঁদের আপন ভাই মোররাহ। কাব দু’জনেরই বংশধর। তিনি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সপ্তম পুরুষ ছিলেন। হযরত ওমর ও হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন একই বংশের লোক। সে বংশটি আরবে বিখ্যাত ছিল। হযরত ওমর (রাঃ) এর ডাম নাম ছিল হাফস। মক্কায় জাবালে তাকিরের কাছেই ছিল হযরত ওমর (রাঃ) এর বাসস্থান। ইসলামী যুগে তাঁর নাম অনুসারে পাহাড়টির নামকরণ করা হয় জাবালে ওমর বা ওমরের পাহাড়। হযরত ওমর (রাঃ) ছিলেন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমান ও লম্বা প্রকৃতির।
কিশোর ও যৌবনে ছিপছিপে, গায়ের রং ছিল গৌরবর্ণের মাথা বড় হাত বুক প্রশস্ত, উজ্বল চোখ, পা হতে মাথা অবধি একটি অসাধারণ দেহের অধিকারী ছিলেন। কৈশোরের তাঁর পিতা তাঁকে উটের রাখালিতে নিয়োজিত করেছিলেন। তিনি মক্কার কাছে দাজনান নামক স্থানে উট চড়াতেন। সে যুগের জীবিকার্জের প্রধান উৎস ছিল ব্যাবসা- বানিজ্য ও শিকার করা। এ কারণে তখনকার দিনে লেখা পড়া আপেক্ষা শরীর চর্চা, কুস্তি, অশ্বরোহণ ও অস্ত্র চালনা ইত্যাদি শিক্ষাই ছিল খুবই জনপ্রিয়। তিনি এসব বিদ্যায় খুবই পারদর্শী ছিলেন। যদিও তখনকার দিনে লেখাপড়ার খুব একটা প্রচলন ছিল না।
তাই বলে জ্ঞান শিক্ষার অভাব ছিল না। হযরত ওমর (রাঃ) এ জ্ঞান চর্চার অধিকারী ছিলেন। তিনি সুশিক্ষিত পিতার কাছে লেখাপড়া শিক্ষা করেছিলেন এবং উচ্চমানের বক্তৃতা দানের ক্ষমতাও অর্জন করেছিলেন। তাঁর হাতে লেখা ছিল খুবই সুন্দর। তিনি নিজে কাব্য পছন্দ করতেন এবং নিজেও কবিতা লিখতে পারতেন। যৌবনে তিনি যুদ্ধবিদ্যা, কুস্তি, বক্তৃতা ও বংশ তালিকা শিক্ষা আয়ত্ব করেন। তিনি একজন যুবক ছিলেন, অত্যন্ত মেজাজী প্রকৃতির ও বলবান ছিলেন, যৌবনে ব্যাবসায়ে মনোযোগী হন এবং দক্ষতার পরিচয় দেন। তিনি যদিও মেজাজী প্রকৃতির ছিলেন তবুও তাঁর চরিত্রে সততা, বিশ্বস্ততা, ন্যায়পরায়ণতা, নির্ভীক ছিল জীবনের ভূষন।
তাঁর চরিত্রের একটি মহৎ গুন ছিল যে কাজ আন্তরিকভাবে পছন্দ করতেন তা সমাধা করার জন্য বিপন্ন করতেও দ্বিধা করতেন না। তখনকার সময়ে মক্কার সমাজের যে কয়জন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন তাঁদের মধ্যে হযরত ওমর (রাঃ) ছিলেন অন্যতম। তিনি পার্শ্ববতী দেশসমূহ ভ্রমণ করে একজন সুপ্রসিদ্ধ বণিক রুপে পরিগণিত হয়েছিল। মক্কাবাসীদের খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ফলে তিনি শ্যাম ও ইরাকের রাজ দরবারে রাজকীয় অতিথি হিসাবে গণ্য হতেন এবং রাজন্যবর্গ তাঁকে সম্মানের চোখে দেখতেন।