হযরত ঈসা (আঃ) এর এনতাকিয়া শহরে দূত প্রেরণ-শেষ পর্ব

হযরত ঈসা (আঃ) এর এনতাকিয়া শহরে দূত প্রেরণ-পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

এদিকে শামউন মনে মনে আল্লাহর দরবারে দোয়া করতেছিলেন। আল্লাহ পাকের অশেষ রহমতে মৃত্যু ব্যক্তি জীবন লাভ করল। সে উঠে দাড়াল। আর উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ্য করে বলল, আমি একজন মুশরিক আজ সাতদিন যাবত মৃত। আমাকে জাহান্নামের সাতটি গর্তে প্রবিষ্ট করা হয়েছে। তোমরা যে ধর্ম হিসাবে গ্রহণ করেছে তা তোমাদের জন্য ভয়াবহ বিপদ হয়ে দাঁড়াবে। তাই আমি তোমাদের এ সম্পর্কে সতর্ক করতেছি। 

সুতরাং তোমরা আল্লাহ পাকের প্রতি ঈমান আন। সে আরও বলল, আমি আসমানের দরজায় নিচে এক সুন্দর যুববের ঐ তিন ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে দেখেছি। বাদশাহ জিজ্ঞেস করল। ঐ তিন ব্যক্তি কে? সদ্য জীবিত ব্যক্তি বলল, তাঁদের একজন হল শামউন। আর অপর দু’জন হল ঐ দু’জন। এ বলে সে সাদিক ও সুদুকের দিকে ইঙ্গিত করল। শামউন বুঝলেন যে, এখন আর  নিজেকে গোপন রাখা সম্ভব নয়। তাই তিনি বাদশাহের সামনে নিজের প্রকৃত পরিচয় দান করলেন। 

অতপর শামউন বাদশাহকে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার জন্য আহবান জানাল।  বাদশাহ তাঁর আহবান সাড়া দিল না বরং আল্লাহ পাকের প্রতি ঈমান গ্রহণের আহবানকে বার বার ঠাট্টা  বিদ্রুপের বিষয় তৈরি করে নিয়েছে। ফলে আল্লাহ পাক বাদশাহ ও তাঁর দেশবাসীর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে বৃষ্টি বন্ধ করে দিলেন।  অনাবৃষ্টির ফলে দেশে ওভাব দেখা দিল। তবুও তাঁদের হুশ হল না তাঁরা এটাকে নিজেদের কর্মের প্রতিফল হিসাবে গ্রহন না করে আল্লাহ পাকের প্রতি ঈমান আনার দাওয়াতের প্রতিফল বলে মনে করল। 

অতপর বাদশাহ তাঁদের দাওয়াতের কাজ পরিহার করার জন্য হুমকি দিয়ে বলল, যে তোমরা যদি দাওয়াতের কাজ পরিহার না কর তবে তোমাদের প্রতি নির্যাতন চালানো হবে। এমনকি তোঁমাদের কে পাথর মেরে ক্ষত বিক্ষত করতে দ্বিধা বোধ করব না।  তাঁদের হুমকির পর ঐ তিন বুযুর্গ বললেন, তোমাদের প্রতি আপতিত বিপদের কারণ হতে পারে না। বরং সত্য ও হক গ্রহন না করে অসত্যের প্রতি ঝুকে পড়া বিপদের কারণ হয়ে থাকে। যদি তোমরা সকলে সত্য ও হক পথ গ্রহন করতে তাহলে তোমাদের প্রতি কোন দিন বিপদ আসত না।  কিন্তু এনতাকিয়ার কাফের অধিবাসীরা এতেও ক্ষান্ত হল না। তাঁরা আরও রাগান্বিত হয়ে উঠল।  তাঁরা তাঁদেরকে হত্যা করার পরিকল্পনা করতেছিল। এদিকে হাবিব নাজ্জার জানতে পারল যে, শহরবাসী ঐ তিন মহান ব্যক্তির সাথে ভাল আচারণ করতেছে না।  এমনকি বাদশাহের পরামর্শে তাঁদেরকে হত্যা করার  পরিকল্পনা করতেছে।  তাই সে উদ্বিগ্ন হয়ে দৌড়ায়ে স্বীয় সম্প্রদায়ের লোকদের নিকট আসল।  আর তাঁদের এ জন্য ষড়যন্ত্রের ভয়াবহ পরিনামের কথা স্মরণ করিয়ে দিল। 

সে বিভিন্ন ভাবে তাঁদেরকে বুঝাবার চেষ্টা করল।  এমনকি নিজের ঈমান গ্রহনের বিষয়টিও প্রকাশ করে দিল।  তা শুনা মাত্র তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল এবং তাঁকে মারপিট শুরু করে দিল।  অবশেষে তাঁর প্রতি পাথর নিক্ষেপ করল।  পাথরের আঘাতে জর্জারিত অবস্থায়ও নিজ সম্প্রদায়ের লোকদের জন্য আল্লাহ পাকের দরবারে দোয়া করতেছিল, হে আল্লাহ! আমার সম্প্রদায়ের লোকদেরকে সুপথ প্রদর্শন করুন। তবুও জালেমদের অন্তর নরম হল না। শেষ পর্যন্ত তাঁরা হাবিব নাজ্জাকে হত্যা করে  ফেলল, এ শহরেই হাবিব নাজ্জারকে দাফন করা হল। কোন কোন তাফসীরকারদের মতে উল্লেখিত মহান ব্যক্তিত্রয় অথ্যাৎ শামউন, সাদিক ও সুদুককেও হত্যা করেছিল। কিন্তু সহী কোন তাফসীরে তাঁদের তিনজনের শেষ অবস্থান কোন আলোচনা আসে নি। 

হাবিব নাজ্জার শহীদ হওয়ার সাথে সাথেই আল্লাহ পাকের পক্ষে হতে তাঁকে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে, যে তুমি বেহেস্তে প্রবেশ কর। কিন্তু তিনি কখনও স্বীয় সম্প্রদায়ের লোকদেরকে ভুলে নি। বরং সম্প্রদায়ের লোকদের নাজাতের জন্য আফসোস করতেছিল যে, উল্লেখিত মহান ব্যক্তিত্রয়ের অনুসরণ করার কারণে। আল্লাহপাক তাঁকে মাফ করে দিয়েছেন।  যদি তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরাও তাঁদের অনুস্মরণ করত তাহলে তারাও অনুরুপ পুরষ্কার লাভ করত। 

এবার আল্লাহ পাক তাঁদের ধ্বংসের ফয়সালা করলেন, হযরত জিব্ররাঈল (আঃ) কে পাঠিয়ে দিলেন তাঁদেরকে ধ্বংস করার জন্য। হযরত জিবরাঈল (আঃ) এনতাকিয়া শহরে পৌঁছে শহরের উভয় পার্শে  হাত রেখে খুব শক্তভাবে আওয়াজ করলেন। আওয়াজের গর্জনে শহরের সমস্ত লোক কলিজা ফেটে মৃত্যুবরণ করল। 

হযরত ঈসা (আঃ) এর এনতাকিয়া শহরে দূত প্রেরণ-পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।