হযরত ঈসা (আঃ) এর আসমানে গমন-পর্ব ৫
হযরত ঈসা (আঃ) এর আসমানে গমন-পর্ব ৪ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এরা নবী-রাসূলগণের শত্রু, আল্লাহর শত্রু। এ ব্যাপারে তোমাদের সাহায্য কল্পে যা কিছু প্রয়োজন তা আমি দিতে সম্মত আছি। এটি একটি সওয়াবের কাজ। এতে আমি অংশীদার থাকতে পাওরলে নিজেকে ধন্য মনে করব। বাদশাহর উৎসাহ দানের পরে সকলে সমবেতভাবে সিদ্ধান্ত নিল যে ঈসাকে সর্বক্ষণ অনুস্মরণ করতে হবে।
যখন তাঁকে একাকী পাওয়া যাবে তখন তাঁর ইহলীলা শেষ করে দিতে হবে। এ হত্যা সিদ্ধার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়ার পরে তারা মিটিং শেষ করল।
পরের দিন থেকে তারা নবীর পিছনে লেগে গেল। সর্বক্ষণ তাঁকে অনুস্মরণ করে ধর্মদ্রোহীরা পর্যায়ক্রমে নিয়মিত ডিউটি দিতে আরম্ব করল।
অনেক দিন যাবত তারা নবীকে একাকী পাইবার চেষ্টা করেও সফল হল না।
মুসলমানেরা যখন কাফেরদেরকে মার মুখী অবস্থা লক্ষ্য করল তখন তারা রীতিমত নবীকে পাহারা দিয়ে রাখার ব্যবস্থা নিল। ফলে কাফেররা নবীকে আর একাকী ধরার কোন সুযোগ পেল না। অবশেষে তারা সিদ্ধান্ত নিল নবীর প্রহরীদের সহ আক্রমণ করা হবে। তারা সর্বদা নিরস্ত্র থাকে। অতএব তাদেরকে কাবু করা খুব কঠিন হবে না।
একদিন হযরত ঈসা (আঃ) তাঁর সঙ্গীদেরকে নিয়ে আইনে ছালুক নামক এক গৃহে পৌঁছালেন। এ খবর জানতে পেরে কাফেররা দলবদ্ধভাবে সে গৃহ ঘেরাও করল। এ সময় হযরত জিব্রাইল (আঃ) সেখানে উপস্থিত হয়ে ঘরের ছাদ ফাটিয়ে হযরত ঈসা (আঃ) কে উর্ধলোকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন। নবীকে সোজা চতুর্থ আসমানে তুলে নিয়ে বিশ্রামের জায়গা করে দিলেন। এদিকে কাফেররা দীর্ঘ সময় ঘর ঘেরাও করে রাখার পরে যখন দেখল হযরত ঈসা ও তাঁর অনুসারীরা ঘর থেকে বের হচ্ছে না। তখন তাদের সর্দার সইউ এক উলঙ্গ তরবারী নিয়ে লাফাতে লাফাতে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল। ঘরের সকল কক্ষে হযরত ঈসা (আঃ)কে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তাঁর কোন পাত্তা পেল না। তখন সে বাইরে তার দলের নিকট ফিরে আসতে আরম্ভ করল। এমন সময় হযরত জিব্রাইল (আঃ) তার মুখমন্ডলে একটি ফুঁক দিলেন।
অমনি তার চেহারা হযরত ঈসা (আঃ) এর চেহারায় রুপান্তরিত হল। এমতাবস্থায় যখন বাইরে দলের নিকট সে আসল তখন তারা তাকে হযরত ঈসা মনে করে আক্রমণ করল। সইউ চিৎকার দিয়ে বলল, তোমরা কি করছ? আমি তোমাদের সর্দার সইউ, আমাকে তোমরা আক্রমণ করছো কেন? হযরত ঈসাকে না পেয়ে কি এখন আমাকে হত্যা করবে। আমি তো হযরত ঈসাকে খুজে হয়রান হয়েছি। তাঁকে কোথাও পেলাম না। তাই বলে তোমরা এখন কি উদ্দেশ্যে আমাকে আক্রমণ করছ। কাফেররা বলল, হ্যাঁ, মানুষ বাঁচার জন্য অনেক বাহানা করে। তুমি এখন বলছ, তুমি নাকি আমাদের সর্দার সিইউ। তাহলে ঈসা কোথায়? সইউ বলল, তোমরা বিশ্বাস কর আমি তাঁকে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি কিন্তু কোন পাত্তা পেলাম না। কাফেররা তার কথা শুনে হেসে উঠল।
সইউ জানত না যে, তার চেহারা পরিবর্তন হয়ে হযরত ঈসা (আঃ) এর রূপ নিয়েছে। তাই সে চিৎকার দিয়ে বলতে লাগল, ভাইয়েরা ভুল করে আমাকে আক্রমণ করছ। তোমাদেরকে নিয়ে আমি যাকে হত্যা করার জন্য এখানে এসেছি, তাঁকে ঘরের মধ্যে কোথাও পেলাম না। মনে হয় ঈসা একজন যাদুকর। তাই সকলের চোখে ধুলা দিয়ে সে পালিয়েছে। এ সব কথা শুনে তাকে ভাল করে নিরীক্ষণ করা হল। লোকটার শরীরের উপরিভাগ দেখে মনে হয় সে ঈসা (আঃ) আর নিচের দিকে দেখলে মনে হয় সে সইউ। এ ছাড়া তার কথার শব্দ সইউর ন্যায়। এ অবস্থায় কতকলোক বলল, ঘটনাটি চিন্তার বিষয়। অতএব তোমরা একে হত্যা কর না, বন্দী করে রাখ। পরে ভাল করে দেখে শুনে যা করার তা করা যাবে। কিন্তু গুটি কয়েক লোকের কথায় কেউ কর্ণপাত করল না। তাঁরা ঈসার রুপধারী সইউকে বেঁধে ফেলল। চিন্তাশীল লোকেরা বলল, হযরত ঈসা যাদুর বলে সইউকে তার চেহারায় রূপান্তর ঘটিয়ে সে পালিয়েছে।