হযরত ইয়াহইয়া মাআয (রঃ) – পর্ব ৪
হযরত ইয়াহইয়া মাআয (রঃ) – পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
(১৬) মুসলিম তিনটি বিষয় আমল করা জরুরী। (১) তাঁদের উপকার কর। যদি একান্তই তা না পার, তাহলে অন্তর ক্ষতি করো না। (২) ব্যবহার দ্বারা তাঁদের খুশি কর। যদি তা না পার, তাহলে অন্তত ব্যবহার দ্বারা তাঁদের অসন্তুষ্ট করো না। (৩) মুসলিমদের প্রশংসা ও গুণকীর্তন কর। যদি তা কোনরুপেই সম্ভব না হয়, তবে অন্তত তাঁর কুৎসা প্রচার দুর্নাম রটনা থেকে বিরত থাক।
(১৭) জাহান্নাম লাভের উপযোগী এবাদত করে জান্নাতের আশা করা নির্বুদ্ধিতা।
(১৮) তওবা করার পর একটি পাপ তওবা-পূর্ব সত্তরটি পাপ অপেক্ষা মারাত্মক। দু’পাশে দুটি বাঘের মুখে পড়লে শেয়ালের যে অবস্থা হয়, বিশ্বাসীদের মনে পাপ ভীতি ঠিক ঐ রকম।
(১৯) রোগ বেড়ে যাবে বলে লোকে কুপথ্য আহা করে না। অথচ শাস্তি পেতে হবে জেনেও পাপ কর্ম থেকে বিরত হয় না- মানুষের এই বিপরীত-মুখী ক্রিয়াকলাপ বিস্ময়কর।
(২০) দুনিয়া শয়তানের দোকান ঘর। সাবধান, এ দোকান থেকে কেউ যেন কিছু চুরি করো না, তাহলে কিন্তু শয়তান তা পেছনে উঠে পড়ে লাগবে।
(২১) দুনিয়া এক নববধূর মতো। যারা তাঁকে মনের মত ভোগ করতে চায় তাঁরা নানাভাবে সাজিয়ে তাঁর রুপ সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে নেয়। কিন্তু যাদের নিকট অপছন্দনীয় তাঁরা রাগে ও বিরক্ততে এর চুল উপড়ে ফেলে মুখে চুন-কালি মাখিয়ে দেয়।
(২২) দুনিয়া এক শরাবখানা। এই শরাবে বিভোর মানুষকে জাগিয়ে তোলার জন্যই পরকালে আজাবের প্রয়োজন হয়।
(২৩) আল্লাহ বলেন, দাসগণ আমার প্রতি অভিযোগ করে। অথচ তাঁরা ভাবে না, আমি জান্নাত ও জাহান্নামের মালিক হয়েও আমাদের মন যুগিয়ে চলি।
(২৪) দুনিয়া মানুষের জন্য এমনই এক নিকৃষ্ট বস্তু যে, তাঁর কামনা করলেই সে আল্লাহ থেকে দূর করে দেয়। এটা চিন্তার বিষয় নয় কি যে, দুনিয়া হাসিল করলে কী অবস্থা দাড়াতে পারে।
(২৫) তিন প্রকার লোকই প্রকৃত বুদ্ধিমান। যথা (১) সংসারত্যাগী (২) মৃত্যুর আগেই যে কবরের মাল-পত্র সঞ্চয় করে ও (৩) আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার সঙ্গে যে তাঁকে সন্তুষ্ট করে।
(২৬) এ যুগে মানুষের সামনে দু’টি বড় বিপদ- যা আগের যুগের মানুষ কল্পনাও করেননি। কেননা, তাঁরা সম্পদ সঞ্চয়ের অভ্যস্ত ছিল না। বিপদ দু’টি হল, এখন না খেয়েও মানুষ সঞ্চয় করে। কিন্তু মৃত্যুকালে তা অন্য হাতে চলে যায়। এই সম্পদের হিসাব কিন্তু সঞ্চয়কারীকেই দিতে হএব।
(২৭) ধন-দৌলত হল পাপ ও বিছার মতো। মন্ত্র না শিখে সাপ ও বিছার গায়ে হাত দেবে না। কেননা তাতে প্রাণ-নাশের সমূহ সম্ভাবনা। ধন-সম্পদ বৈধভাবে উপার্জন করা ও সৎপথে ব্যয় করা হল তার মন্ত্র।
(২৮) পশমী কম্বল করে দরবেশের পোশাক ধারণ একটি ব্যবসার মত। আর সংসারত্যাগের আলাপ-আলোচনা একটি পেশার মত।
(২৯) উপবাস জ্যোতি সদৃশ আর পরিতৃপ্ত আহার আগুন তুল্য।
(৩০) সাধক তিন প্রকার। (১) যাহেদ যারা ধৈর্য্যের দ্বারা নিজের হৃদরোগের চিকিৎসা করেন। (২) মুশতাক- যারা কৃতজ্ঞতা দ্বারা মানসিক রোগের চিকিৎসা করেন। (৩) ওয়াসেল-দ্বারা বন্ধুত্ব মানসিক ব্যাধির চিকিৎসা করেন।
(৩১) সাধক চারটি স্থানে যেকোন একটিতে শান্তি পান। যথা (১) ঘরের নির্জন কোণ, (২) মসজিদ, (৩) কবরস্থান ও (৪) জন বিরল স্থান।
(৩২) ধৈর্যশীলের পরিচয় সষ্কটকালে আমল তিনটি বিষয়ের নির্ভরশীল (১) ধর্মীয় জ্ঞান, (২) পবিত্র সঙ্কল্প ও (৩) আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য।
(৩৪) তাওইয়াক্কুল মানুষকে অধীনতা মুক্ত করে। তাঁর সাথে সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য যুক্ত হয়ে সুফল আনে। আর আল্লাহর নির্দেশ রাজি থাকার কারণে জীবন সুখের হয়।
(৩৫) ঈমান তিনটি বস্তুর মধ্যে নিহত। যথাঃ (১) ভয়, (২) আশা ও (৩) প্রাম। ভয়- আল্লাহর আজাবের ভয় দ্বারা পাপ দূর হয়। আশা-জান্নাতের এবাদতে মন আকৃষ্ট হয় ও পদমর্যাদা বৃদ্ধি পায়। আর প্রেম- আল্লাহর প্রেম দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।
(৩৬) প্রকৃত আরিফ তিনিই, যিনি আল্লাহর যিকির ছাড়া কোন কিছুকেই বেশী ভালোবাসেন না।
(৩৭) মারেফাতের হক পুরোপুরি আদায় না করলে অন্তরে তা প্রতিষ্টিত হয় না।
(৩৮) অন্তরে আল্লাহর ভয় এক বৃক্ষ স্বরূপ। প্রার্থনা আর কান্না তাঁর ফল স্বরূপ। মানুষ যখন আল্লাহ-ভীরু হয়, তখন তাঁর শরীরে সকল অঙ্গ- প্রত্যঙ্গই তাঁর দাসত্ব করে এবং সে আল্লাহর নাফরমানী থেকে বিরত থাকে। সব জিনিসেরই একটি শোভা বা সৌন্দর্য থাকে। উপাসনার শোভা হল আল্লাহ ভীতি। আল্লাহ- ভীতির নিদর্শন হল পার্থিব থাকে। উপাসনার শোভা হল আল্লাহ ভীতি। আল্লাহ-ভীতির নিদর্শন হল পার্থিব আশা-আকাঙ্ক্ষার বিলুপ্তি। নিজেকে ক্ষুদ্র মনে কর হল উঁচুদরের ধর্মবীরুতা।
(৩৯) তওহীদ হল জ্যোতি আর শেরক হল আগুন। তওহীদের আলো পাপের আগুণকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
(৪০) ধর্মনিষ্ঠ দু’রকমের । যথা (১) জাহেরী ও (২) বাতেনী। জাহেরী ধর্মনিষ্ঠ তাকেই বলে।
যখন আল্লাহর নির্দেশের বিরুদ্ধে কিছু কর না হয়। আর আল্লাহ ছাড়া অন্তরে অন্য কিছু স্থান না দেওয়াকে বলে বাতেনী ধর্মনিষ্ঠ।
(৪১) যোহদ শব্দটি তিনটি হরফ দ্বারা গঠিত। যথা যা, হা, দাল তিনটি বর্জনীয় বস্তুর আদ্যক্ষর দ্বারা শব্দটি তাৎপর্য ব্যন্ডিত হয়েছে। যেমন, যা দ্বারা যীনাত বা সৌন্দর্য্য বুঝানো হয়েছে, যা বর্জনীয়। হা দ্বারা হাওয়া বা ইচ্ছা বুঝানো হয়েছে, তা-ও বর্জনীয়। আর দাল দুনিয়া সাস্কেতিত হয়েছে। আর দুনিয়া তো বর্জনীয় বস্তুর মধ্যে প্রধান।
(৪২) মৃত্যু ও বিনাশ দুটি বস্তু। সৃষ্টি সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হওয়ার নাম মৃত্যু। আর আল্লাহর সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হওয়াই হল বিনাশ।
(৪৩) খাঁটি তওবার লক্ষণ তিনটি যথাঃ (১) খুব বেশী রোজা রাখার কারণে খুব কম খাওয়া, (২) বেশী নামাজ পড়ার জন্য খুব কম ঘুমানো ও (৩) আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকার কারণে খুব কম কথা বলা।
(৪৪) আল্লাহর ধ্যান যাবতীয় পাপকে ডুবিয়ে দেয়। আল্লাহর রেজামন্দী যাবতীয় কামনার অবসান ঘটায়। আল্লাহর প্রেম অন্তরে ভয়-ভীতির সঞ্চয় করে অন্য যেকোণ বন্ধুত্বকে ভুলিয়ে দেয়। হযরত ইয়াহইয়া (রঃ) কে প্রশ্ন করা হয়, আল্লাহ আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট কিনা তা কি করে বুঝবে?
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া