হযরত ইসহাক ইব্রাহীম ইবনে আহমদ খাওইয়াস (রঃ) – পর্ব ১

হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) ও হযরত আবুল হাসান খেরকানী (রঃ)-এর সমকালীন সাধক ছিলেন হযরত আবু ইসহাক ইব্রাহীম ইবনে আহমদ খাওয়াস (রঃ)। মুতাওয়াক্কেল অর্থাৎ নির্ভরশীল নামে তিনি খ্যাত। কেননা, তাওয়াক্কুল বা নির্ভরতার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন শীর্ষস্থানীয়। তরীকত ও হাকীকতের খনি সদৃশ এই মহাতাপস সত্যনিষ্ঠ আলেম হিসেবেও সম্যক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। শুধু অধ্যাত্ম বিষয়ে নয়, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও পারস্পারিক আচরণ সংক্রান্ত বহু গ্রন্থের প্রণেতা তিনি। জাম্বল তৈরি করতেন বলে তাঁকে খাওয়াস খেতাব দেয়া হয়।

হযরত আবু ইসহাক (রঃ) রায় নগরে জন্মগ্রহণ করেন। আর সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন ২৯১ হিজরী সনে। তাঁর প্রবৃত্তির ওপর কি অপরিসীম নিয়ন্ত্রণ ছিল তা বোঝা যায়, যখন একটি সেব ফল সুগন্ধ নিতে নিতে তিনি এক বিশাল প্রান্তর পার হয়ে যান। কিন্তু তা খেয়ে ফেলেননি।

হযরত আবু ইসহাক (রঃ) সব সময় কাছে রাখতেন সুচ, কাঁচি ও চামড়ার তৈরি পানপাত্র। কেননা তিনি মনে করতেন, এতে তাওয়াক্কুল বা নির্ভরতা ব্যাহত হয় না। পাছে নির্ভরতার ক্ষতি হয়, এজন্য তিনি হযরত খিজির (আঃ)-এর সঙ্গে তাঁর ইচ্ছা সত্ত্বেও দেখা করতে রাজি হননি। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও শ্রেষ্ঠত্ব ও সম্মান হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়, তাঁর এ ভয়ও ছিল।

এক প্রান্তরে তাঁর সাক্ষাৎ হয় এক আবেগবিহবল রমণীর সঙ্গে। মহিলার অনাবৃত মাথা লক্ষ্য করে তিনি বলেন, তোমার মাথা ঢেকে রাখ।

মহিলা বলেন, আপনি আপনার চোখ দুটিকে সাবধানে রাখুন।

খাওয়াসঃ আমি প্রেমিক। প্রেমিক কখনও চোখ বন্ধ করে না। এমন আমার দৃষ্টি তোমার ওপর।

মহিলাঃ আমি নেশায় বিভোর। যে নেশায় বিভোর সে কখনও মাথা ঢেকে রাখে না।

খাওয়াসঃ তুমি কোন শরাবখানা থেকে শরাব পান করেছ?

মহিলাঃ এখানে কি আরও কোন শরাবখানা আছে? (অর্থাৎ আল্লাহ প্রেমের নেশা ছাড়া আর কোনও নেশার স্থান তার জানা নেই।)

খাওয়াসঃ তুমি কি আমার সঙ্গে থাকবে?

মহিলাঃ চলে যাও। নিয়ত খারাপ করো না। আমি তেমন নারী নয় যে, পুরুষের সঙ্গ অবলম্বন করব। বরং আমি আল্লাহর সঙ্গ-কামিনী।

একবার ঈমানের হাকীকত সম্বন্ধে হযরত ইসহাক (রঃ)-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ কথার জবাব পাবে না। কেননা, আমি যা বলব, তা শুধু কথার কথা হবে। আমি কর্মের মাধ্যমে এর জবাব দিতে চাই। পথের মধ্যে তোমার কথার উত্তর পাবে। প্রশ্নকারী তখন তাঁর মক্কা সফরের সহযাত্রী হল।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত ইসহাক ইব্রাহীম ইবনে আহমদ খাওইয়াস (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।