হযরত ইমাম জাফর সাদেক (রঃ)- পর্ব ১

পরিচিতঃ পরম করুণাময়, অন্তর দয়াময় মহান আল্লাহ মানুষ সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জন্য যে ধর্ম নির্দিষ্ট করে দেন, সেই সর্বোত্তম অবিনশ্বর ধর্মের বাণী বহন করে যুগে যুগে একদল অত্যুজ্জ্বল আলোকময় পুরুষ ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছেন। তাঁরা আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত এবং প্রেরিত। এই আলোকবাহী দূতগণকে আমরা রাসূল বা নবী নামে আখ্যায়িত করি। 

হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত  আলোক অভিযাত্রীগণের এ যেন এক সুদীর্ঘ অভিযাত্রা। যেন প্রতিযোগিতা পদ্ধতিতে তাঁরা ধারাবাহিক এসেছেন সমকালের মানুষের মাঝখানে। একজনের দৌড় যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে তিনি তার হাতের দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন অন্য জনের হাতে। দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনিও তখন দৌড় শুরু করেছেন। তারপর  পরবর্তী জনের হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়ে তিনিও থেমে গেছেন। 

দীর্ঘ অভিযাত্রার শেষতম ব্যক্তি হলেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তার আপাতত যাত্রা- বিরতী ঘটেছে ১২ রবিউল আউয়াল, ১১ হিজরী। সোমবার সকালবেলা। ইংরেজী ৭ জুন, ৬৩২ খ্রীষ্টাব্দে ১। আপাতত – বিরতী বলেছি এই কারণে যে, রাসূল কারীমের ইন্তেকালের পরেও আলোকাভিসার বন্ধ হয়নি। বন্ধ হবেও না কোন দিন ইনশাল্লাহ। আল্লাহ প্রদত্ত এই নূরের আগুন কখনও নিভবে না। রাসূলুল্লাহ যে জীবনে- ধর্মের আদর্শ রেখে গেছেন। 

তার সুযোগ্য সোনালী জ্যোতির্ময় উত্তরপুরুষের দল সে আদর্শ বুকে বহন করে এসেছেন যুগের পর যুগ। তার পরে পরেই যারা তার আদর্শিক জীবন বহন করেন, তাঁরা হলেন, অব্যবহিত আলোকিত অনুগামীর দল- সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) তারপরে তাবেয়ীদের স্থান। আর এদের একজন হলেন ইমাম জাফর সাদেক (রঃ)  

বংশ-ঐতিহ্যঃ জাফর সাদেক (রঃ) এর কুনিয়াত আবু মুহাম্মদ। হযরত আলী (রাঃ) এর সুযোগ্য বংশধর তিনি।  অতএব সে হিসাবে রাসূলে কারীমেরও আহলে বায়ত তথা পরিবার-পরিজনের অন্তর্ভূক্ত। বলা হয়েছে, প্রসিদ্ধ বারো জন ইমামের মধ্যে তিনিও একজন। বহু হাদিস বর্ণনা করেছেন। কোরআন ও ফেকাহ শাস্ত্রে তার অসাধারণ ব্যুৎপত্তি ছিল।  আর আমরা যাকে বলি এলমে মারেফাত- তাও তার দখল ছিল অপরিসীম সমকালের সেরা। 

এ বিষয়েও প্রচুর তত্ব-পূর্ণ বাণী তিনি রেখে গেছেন। অর্থাৎ শরীয়তও  মারেফাত- দু’দিক দিয়েই তিনি প্রজ্ঞাবান ছিলেন। আধ্যাত্মিকাঃ তখন মুসলিম- দুনিয়ার খলীফা ছিলেন মনছুর বিল্লাহ। হিজরী চতুর্থ শতকের প্রথম দিকে তিনি খলীফার কার্যভার গ্রহণ করেন। ইমাম জাফর সাদেক (রাঃ)-এর আলোকময় ব্যক্তিত্বের নাম খ্যাতি,জনগণের উপর তার বিশাল প্রভাব, তার প্রতি জনগণের অঢেল ভক্তি ও ভালবাসা খলীফাকে চিন্তাতুর করে তুলল। হয়তো ঈষা।  অথবা ভয়। কে জানে, হয়ত তিনিই একদিন খিলাফতের দাবী করে বসবেন। অথবা তার ভক্তজনেরা মনসুর বিল্লাহর তখতে ইমাম জাফরকেই বসিয়ে দেবেন। অতএব আগে ভাগে সাবধান হওয়া দরকার । মনসুর বিল্লাহ একদিন তার মন্ত্রীকে আদেশ দিলেন- জাফর সাদেককে বন্দী করে দরবারে আনা হোক। তিনি তাঁকে হত্যা করবেন। 

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত ইমাম জাফর সাদেক (রঃ)- দ্বিতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।