হযরত ইমাম আবু হানিফা (রঃ)-পর্ব ৪
হযরত ইমাম আবু হানিফা (রঃ)-পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সেদিন থেকে তিনি পাঁচ’শত রাকাআত নফল নামাজ পড়তে শুরু করলেন। আবার একদিন তাঁকে দেখিয়ে কয়েকজন লোক বলাবলি করছিল, ইনি রোজ রাতে হাজার রাকাআত নফল নামায আদায় করেন। সেদিন থেকে তিনি সত্যিই হাজার রাকাআত নামাজ পড়তে লাগলেন। আরও কিছুদিন পর তাঁর এক শিষ্য এসে বললেন, লোকের ধারনা, আপনি সারা রাত নামাযে কাটিয়ে দেন। সেদিন থেকে সত্যিই সারারাত নফল নামাযে রাত কাটাতে শুরু করলেন। আর তখন থেকে একটানা ত্রিশ বছর এশার ওযুতে ফরজ আদায় করতেন। মানুষের উচ্চ ধারণার কী অপরিসীম মূল্য তিনি দিয়েছেন।
হযরত দাউদ তায়ী (রঃ) যখন শাসনকর্তার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তখন তাঁর কর্তব্য সম্বন্ধে তিনি ইমাম আজমের পরামর্শ চান। তিনি বললেন, এখন থেকে তোমার এলেম অনুযায়ী কাজ করা উচিত। কেননা, এলোমানুরুপ কাজ যে করে না, তাঁর দেহ প্রাণহীন গোশত পিন্ডের মতো।
একদিন এক শহরে এক হাম্মামখানায় এক উলঙ্গ ব্যক্তিকে দেখে তিনি চোখ বুজে ফেলেন। লোকটি তাঁকে বলল, কবে থাকে আপনার দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেয়েছে? তিনি তৎক্ষাণাৎ উত্তর দেন, যেদিন থেকে তোমার হায়া- শরম নির্মুল হয়েছে।
একদিন বাজারে যেতে তাঁর কাপড়ে কিছু কাদামাটি লেগে গেল। তিনি তখনই নদীতে গিয়ে গা ধুয়ে ফেলেন। কেউ কেউ বললেন, আপনি যে পরিমাণ ময়লা জায়েয রেখেছেন, এতো তাঁর চেয়ে কম। না ধুলেও চলত। তিনি বললেন, আমি যা বলেছি, ওটা ফতোয়ার কথা। আর যা করলাম তা পরহেজফারী। রাসূলে কারীম (সাঃ) একদিন হযরত বেলাল (রাঃ)- কে বললেন, কোন সময় আধখানা রুটি ও জমা করে রাখবে না। অথচ কোন এক সময় তিনি তাঁর পত্নীদের জন্য প্রায় এক বছরের খাবার ও জমা করে রেখেছিলেন।
এক ব্যক্তি ঈর্ষা করে- প্রণোদিত হয়ে হযরত ওসমান (রাঃ) কে ইহুদী বলতে ইমাম আজম একদিন তাঁকে ডেকে বললেন, আপনার কন্যার সঙ্গে অমুক ইহুদীর বিয়ে দেব। সে বলল, আপনি নিজে মুসলিম হয়ে ইহুদীর সঙ্গে আপনার মেয়ের বিয়ে দিতে চান। ইমাম বললেন, কেন, রাসূল (সাঃ) তো ইহুদীর সঙ্গে দু’জন মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন, লোকটি তাঁর কথার মর্ম বুঝতে পেরে ভীষন লজ্জিত হয়ে তাঁর কাছে তওবা করে ক্ষমা চেয়ে নিল।
একদিন এক ধনী ব্যক্তিকে তাঁর ধন সম্পদের জন্যই তিনি বেশ সম্মান দেখান। কিন্তু পরে অনুতপ্ত হয়ে এক হাজার বার কোরআন শরীফ খতম করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রর্থনা করেন। তিনি আরও একটি নিয়ম পালন করতেন। কোন কঠিন মাসআলার সম্মুখীন হলে চল্লিশ বার পবিত্র কোরআন খতম করে সমাধানে রত হতেন।
তৎকালীন খলীফা রাতে স্বপ্ন দেখলেন, আযরাইল ফেরেশতাকে তাঁর আয়ুর কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি হাতের পাঁচটি আঙ্গুল দিকে ইশারা করে দেখালেন। বিভিন্ন পণ্ডিতের কাছের স্বপ্নের ব্যাখ্যা চেয়ে ব্যর্থ হয়ে তিনি হযরত আবু হানিফা (রঃ) কে ধরলেন। তিনি বললেন, পাঁচটি আঙ্গুল দ্বারা পাঁচটি বিষয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে যা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না। সেগুলি হল-
(১) কিয়ামত কবে হবে। (২) বৃষ্টি কখন হবে। (৩) জরায়ুতে পুত্র সন্তান না কন্যা সন্তান আছে, (৪) কোন জায়গায় কার মৃত্যু হবে। (৫) আগামীকাল কী ঘটবে। হযরত আবু আলী (রঃ) বলেন, তিনি এক রাতে হযরত বেলাল (রাঃ) – এর কবরের পাশে শুয়েছিলেন। সে রাতে স্বপ্ন দেখেন, তিনি যেন মক্কায় আছেন। আর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বৃদ্ধকে শিশুর মতো কোলে নিয়ে বনী শায়বা দরজা দিয়ে বের হয়ে এলেন।
তিনি তাড়াতাড়ি গিয়ে তাঁর কদমবুসি করলেন। তিনি তখন অবাক হয়ে ভাবছিলেন নবী কারীম (সাঃ) এর কোলে কে এই বৃদ্ধ? নবীজি বললেন, আজমের মৃত্যুর পর তিনি স্বপ্ন দেখেন- কিয়ামত হয়ে গেছে। সমস্ত মানুষ হাশরের মাঠে হাজির। রাসূলে কারীম (সাঃ) দাঁড়িয়ে আছেন হাওজে কাওসারের কাছে। তাঁর ডানে-বামে প্রচুর বিজ্ঞ-জ্ঞানীর ভিড়। তিনি দাঁড়িয়ে আছেন মহানবীর দিকে মুখ করে।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া