হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ) – শেষ পর্ব
হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ) – পর্ব ১৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তিনি এবার লোকটিকে বললেন, দেখলে! রাজত্ব ছেড়ে দিয়ে আমি খুব তুচ্ছ জিনিসই লাভ করেছি, তাই না?
বলা বাহুল্য, নিজের ভুল বুঝতে পেরে সে মহাসাধকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। তাঁরা পৌঁছলেন এক কেল্লায়। কেল্লার দরজায় অনেকগুলি কাঠের টুকরো পড়ে ছিল। কাছে ছিল একটি ঝর্ণা। সুতরাং তাঁরা সে রাতটি সেখানেই কাটাবেন বলে স্থির করলেন। রাতের দিকে কাঠের টুকরো গুলি জ্বালানো হল।
এক সাথী-দরবেশ বললেন, আমরা এখন যদি হালাল গোশত পেতাম, তাহলে দিব্যি রান্না করে খেতে পারতাম। হযরত ইব্রাহিম (রঃ) তখন নামাজ পড়ছেন। কথাটি কানে গেল তাঁর। নামাজ শেষ করে তিনি বললেন, আল্লাহর অসীম শক্তি। ইচ্ছা করলে তিনি আমাদের জন্য হালাল গোশতের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন। এই বলে তিনি আবার নামাজে রত হলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে দরবেশগণ বাঘের ডাক শুনতে পেলেন। আর দেখতে দেখতে একটি বাঘ এক বুনো হরিণ তাড়া করে সেখানে নিয়ে এল। তাঁরা এই হরিণকেই জবেহ করে সেটির গোশত দিয়ে কাবাব বানিয়ে খেলেন। কাছে বসে বাঘটি সবকিছু দেখল।
একবার তিনি চলেছেন হজ্জের নিয়তে কাবার পথে। কয়েকজন সঙ্গীও রয়েছে। যেতে যেতে একজন বলল, আমি কপর্দকশূন্য হুজুর। আমাদের কাছে কোন পাথেয় নেই।
হযরত বললেন, তোমার কি আল্লাহর ওপর এতটুকু ভরসা নেই? ধন-সম্পদ প্রতি এতই যদি তোমার আগ্রহ তাহলে ঐ গাছটির দিকে তাকাও।
তার কথা শুনে লোকটি দেখল, গাছটির মূল, কাণ্ড, শাখা-প্রশাখা, পাতা সবকিছুই সোনার।
একবার কুয়া থেকে পানি তুলবেন বলে তিনি বালতি নামালেন। বালতি উঠে এলে দেখা গেল, পানির বদলে উঠে এসেছে এক বালতি সোনা। তিনি আবার বালতি ফেলেলন, এবার উঠে এল এল বালতি রূপা আবারও বালতি নামালেন এবার উঠল এক বালতি মোতি। তখন আল্লাহর দরবারে তিনি আরজ করলেন, প্রভু গো! আপনি কি আমাকে পরীক্ষা করছেন? সোনা-রূপা মোতি নিয়ে আমি কি করব? পবিত্রতা অর্জনের জন্য আমার শুধু পানির প্রয়োজন।
হযরত ইব্রাহীম (রঃ) শেষ জীবনে পরিপূর্ণ নির্জনতায় ডুবে যান। সুতরাং তাঁর মৃত্যুর কোন প্রত্যক্ষদর্শী ছিল না। কোথায়, কখন, কিভাবে তাঁর মৃত্যু হয় কেউ জানতে পারেনি। কিন্তু মৃত্যুর পর মুহূর্তে একটি অদৃশ্য শব্দ বহু মানুষের শ্রুতিগোচর হয়েছিল। তা হল, তোমরা জেনে রেখো দুনিয়ার শান্তি দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছে। এই আসমানী ঘোষণার মাধ্যমে পৃথিবীর লোকের কাছে তাঁর মৃত্যু সংবাদ প্রচারিত হয়ে যায়। তিনি কোথায় সমাধিস্থ হন তা নিয়ে পণ্ডিত মহলে মতপার্থক্য আছে। কেউ বলছেন বাগদাদে, কেউ বলছেন শাম দেশে। শাম দেশে হযরত লুত (আঃ)-এর কবরের পাশে তাঁকে দাফন করা হয় বলেও একটি কথা চালু আছে। একমাত্র আল্লাহ পাকই জানেন তাঁর প্রিয় বন্ধু কোথায়, পৃথিবীর কোন অংশের মাটিকে ধন্য করে নিরবিছিন্ন শান্তির ঘুমে ঘুমিয়ে আছেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া