হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ) – পর্ব ৩
হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তারপর এলেন নিশাপুরে। আশ্রয় নিলেন এক অন্ধকার গুহায়। দেখতে দেখতে ন’বছর পার হয়ে গেল আল্লাহর এবাদত-বন্দেগীতে। এবাদত মানে সে কঠিন তপস্যা। প্রতি শুক্রবার গুহা থেকে বের হয়ে তিনি বনে-জঙ্গলে কাঠ সংগ্রহ করে বিক্রি করতেন নিশাপুরের বাজারে। তাতে যে আয় হত, তা দিয়ে রুটি কিনতেন। সে রুটির অর্ধেক দান করতেন গরীব দুঃখীকে, আর অর্ধেক নিজে খেতেন। খুবই সামান্য খাবার। তাই খেয়ে জুম্মার নামাজ পড়ে আবার ঢুকতেন গুহায়। বেরিয়ে আসতেন পরবর্তী শুক্রবারে।
শীতের এক গভীর রাত। গুহার মধ্যে নামাজে নিমগ্ন তিনি। প্রবল শীত। তার ওপর তুষারপাত। হাঁড়-কাঁপুনে ঠাণ্ডায় একরকম জমে গেলেন তিনি। প্রচণ্ড ছর্দি। অবস্থা খুবই ঘোলাটে। তবুও এবাদতে কোন ব্যতিক্রম নেই, শৈথিল্য নেই। দেহ অবশ। মাথা ভারী হয়ে উঠল পাহাড় সমান। হয়তো এবাদতে এবার বিঘ্ন ঘটবে। আর হয়তো পারবেন না। একটু আগুনের যদি ব্যবস্থা হত এ সময়, তাহলে কী চমৎকারই না হত। এসব কথা ভাবছেন, মনে হল কে যেন তাঁকে একটি চামড়ার তৈরি গরম পোশাক পরিয়ে দিল। গরম হয়ে উঠল গা-গতর। পরম নিশ্চিন্তে এবাদতে রাত কেটে গেল তাঁর। পরদিন সকালে দেখলেন, গরম পোশাক নয়, তাঁকে জড়ীয়ে আছে এক বৃহৎ অজগর। বলাবাহুল্য তাঁর মনে ভীতির সঞ্চার হল।
আল্লাহর কাছে মোনাজাত করলেন, দয়াময়, যাকে আমি আপনার ভীষণ গজবস্বরূপ মনে করি, তাকেই আপনি আপনার রহমতস্বরূপ নামিয়ে দিলেন। আপনার কুদরত বোঝা ভার। ধন্য আপনার কারিগরি। দেখতে দেখতে মাথা নিচু করে অজগর অদৃশ্য হয়ে গেল।
হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ) এবাদত-বন্দেগীর কথা ক্রমশঃ লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে। দলে দলে মানুষ ছুটে এল গুহাবাসীকে দেখতে। গভীর অরণ্য জনারণ্যে পরিণত হল। ফলে গুহা ত্যাগ করে তিনি মক্কায় চলে গেলেন।
শোনা যায়, পরিত্যক্ত গুহাটি দেখতে এসেছিলেন অন্য এক দরবেশ হযরত আবু সাঈদ (রঃ)। নিছক কৌতুহলবশেই তিনি এসেছিলেন। কিন্তু এসে অবাক হয়ে গেলেন। গুহার মধ্যে অপূর্বে এক সুগন্ধ ঘুরপাক খাচ্ছে। মৃগনাভির চেয়েও যা উত্তম। সে এক জান্নাতী সুবাস যার সঙ্গে কোন কিছুর তুলনা করা চলে না। বনে অবস্থানকালে এক জ্ঞানী ব্যক্তি তাঁকে ইসমে আজম অর্থাৎ আল্লাহ পাকের মহান শ্রেষ্ঠ নাম শিক্ষা দেন বলে শোনা যায়। ঐ জ্ঞানী ব্যক্তি হলেন হযরত খিজির (রঃ) এর ভ্রাতা ইলিয়াস। একদিন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসে হযরত খিজির (রঃ) কথা প্রসঙ্গে এ কথা বলেন। দু’জনের মধ্যে নানা কথাবার্তা হয়। কথিত আছে, সেদিনই তিনি তাঁর কাছে দীক্ষা
গ্রহণ করেন। আর এই সাধনাপথেই মারেফাতের জ্ঞানের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করেন। এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে সক্ষম হন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া