হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ) – পর্ব ১

মহা-প্রতাবশালী বাদশাহর দাপুটে পৃথিবী কম্পমান। প্রভূত ঐশ্বর্যের অধিকারী তিনি। শান-শওকত ভরপুর। যখন রাস্তা দিয়ে চলেন, তখন তাঁর অগ্রভাগে চলে স্বর্ণঢালধারী চল্লিশ জন অশ্বারোহী। পশ্চাদ্ভাগে আরও চল্লিশ জন দেহরক্ষী।

রাত্রি গভীর। নিস্তব্ধ পৃথিবী। বাদশাহ কিন্তু নিদ্রিত নন। এবাদতে মগ্ন। হারেমের সুবর্ণ পালঙ্গে, সুকোমল শয্যায় তিনি ধ্যানরত। হঠাৎ কাছে কোথাও কার যেন পদশব্দ শুনলেন তিনি। মনে হল, ছাদের ওপর দিয়ে গিয়ে কে যেন ক্রন্ত পায়ে চলে গেল। কে, কে ও? তিনি জিজ্ঞেস করেন।

উত্তর এল, আমি তোমার এক বন্ধু। আমার একটি উট হারিয়েছে। তাই খুঁজছি। বন্ধু? উট হারিয়েছে বলে সেটা সে খুঁজতে এসেছে রাজপ্রাসাদের ছাদের ওপর? বিরক্ত হয়ে তিনি তাকে মুর্খ বলে ধমক দেন। কিন্তু ও পক্ষ থেকে জবাব আসে, আমার এ কাজটিকে তুমি মুর্খতা বলছ। কিন্তু তুমি কি করছ? সোনার পালঙ্গে শুয়ে, সুবর্ণ জরির মহার্ঘ্য পোশাকে ভূষিত হয়ে আল্লাহর ধ্যান করছ। তোমার কাজটি কি এর চেয়েও বোকামী নয়?

চেতনার ওপর চাবুক এসে পড়ে। শুরু হয়ে যায় এক অভূতপূর্ব আলোড়ন। অনুশোচনায় তিনি দগ্ধ হতে থাকেন। অদৃশ্য বন্ধু রাতের ঘন অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে গেল। কেড়ে নিয়ে গেল মহাশক্তির শাহেনশাহর চোখের ঘুম। দারুন দুশ্চিন্তায় রাত ভোর হয়ে এল।

পরদিন। পাত্রমিত্র-পরিবৃত অবস্থায় রাজদরবারে তিনি উপবিষ্ট। এমন সময় মহাতেজস্বীঃ এক পুরুষ দরবারে কক্ষে প্রবেশ করলেন। বাদশাহ বললেন, কে আপনি? কি চান? আমি এক মুসাফির। এ মুসাফিরখানায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে চাই। কিন্তু এটা তো মুসাফিরখানা নয়। আমার বাসভবন। তাই?

আপনার আগে এখানে কে বাস করতেন?

আমার পিতা।

তাঁর আগে?

আমার পিতামহ।

তাঁর আগে?

আমার পিতামহ।

তাঁরা সব কোথায়?

তাঁরা সব চলে গেছেন।

এখানে যখন একজন আসে আর চলে যায়, তখনও আপনি এটিকে মুসাফিরখানা বলবেন না? এ যদি স্থায়ী বাসভবন হত, তাহলে তাঁরা আজ এখানে বাস করতেন। বলে সেই তেজস্বী পুরুষ যেমন এসেছিলেন, তেমনি চলে গেলেন। তাঁকে তখন কেউ যেমন বাধা দেয়নি, তেমনি এখনও বাধা পেলেন না। দরবারে কক্ষ ছেড়ে সদর্পে চলে গেলেন।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত ইব্রাহীম আদহাম (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।