হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর বিবাহ-১ম পর্ব

আল্লাহ্‌ তা’য়ালার নির্দেশ না আসা পর্যন্ত হযরত ইব্রাহীম (আঃ) নমরুদের পজ্জ্বলিত অগ্নিকুন্ডের মধ্যে কাটালেন। একাধারে চল্লিশ দিন অতিবাহিত হবার পরে আল্লাহ্‌ তা’য়ালা নবীকে অগ্নিকুন্ড থেকে বের হয়ে সিরিয়া যাত্রার  নির্দেশ দিলেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহ্‌র নির্দেশ পেয়ে আর বিলম্ভ না করে অগ্নিকুন্ড থেকে বের হয়ে আসলেন। নবীকে দেখার জন্য সেখানে হাজার হাজার জনতার ভিড় জমে গেল।

সবাই নবীর সাথে সাক্ষাৎ করলেন, তাঁর কুশলাদি জিজ্ঞেস করলেন। এ সমস্ত লোকের মধ্যে অধিক সংখ্যক ছিলেন মুসলমান, যারা হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর হাত ধরে মুসলমান হয়েছেন অথবা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে দূরে বসে কলেমা পাঠ করেছেন। এ ছাড়া অনেক কাফের মোশরেকও অবস্থা দেখার জন্য সেখানে হাজির হয়েছিল।

হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর চেহারার উজ্জ্বলতা কয়দিনে কয়েক গুন বৃদ্ধি পেয়েছিল। যাতে করে অনেক লোক প্রথম দৃষ্টিতে তাঁকে চিনতেই পারে নি। নমরুদের আত্নীয়-স্বজনেরাও হযরত ইব্রাহীম (আঃ)- কে এক নজর দেখার জন্য সেখানে সমবেত হয়েছিল। বহুলোক সমাবেশে কলেমা পাঠ করে ইসলাম গ্রহণ করেন।

নমরুদ যদিও হযরত ইব্রাহীম (আঃ)- কে দেশ ত্যাগের নির্দেশ দিবে বলে মনে মনে আশা পোষণ করেছিল। কিন্তু অবস্থা ও পরিস্থিতি দেখে সে খুব ভীত হয়ে পড়ল। কি করতে গিয়ে কি হয়। না হামানের ন্যায় চক্ষু ঝলছে যায়, না অন্য কোন বিপদ ঘটে। এতএব ইব্রাহীম (আঃ)-এর প্রতি পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে তাঁকে খুব ইতস্তত করতে হল।

এক পর্যায়ে বদদোয়ার ভয়ে সে ইব্রাহীম (আঃ)-এর নিকট গিয়ে বলল, তোমার খোদাকে আমি শ্রদ্ধা করি । আমি তাঁর কয়েকশত উট কোরবানি করতে চাই এবং কয়েক লক্ষ রৌপ্য মুদ্রা গরীব মিসকিনকে দান করার নিয়ত করেছি। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) নমরুদের কথা শুনে বললেন, আমার খোদা ঘুষ খান না। তিনি মোশরেকদের দান গ্রহণ করেন না। তুমি প্রথমে আল্লাহ্‌ তা’য়ালার প্রতি ঈমান আন। পরে দান ছদকা কর। আল্লাহ্‌ তা’য়ালাকে লোভ দেখানোর চেষ্টা কর না । তিনি মানুষের অন্তস্থলের সব খবর পরিজ্ঞাত আছেন। তোমার যত অর্থ সম্পদ রয়েছে তা সবই মহান আল্লাহ্‌ তা’য়ালার দান। তিনি যাকে ইচ্ছা তাঁকে রাজ্যদান করেন, আর যাকে ইচ্ছা তাঁকে রাজ্যচ্যুত করে ফকির বানিয়ে দেন। আমি তোমাকে সেই করুণাময় আল্লাহ্‌ তা’য়ালার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের আহকাম জানাচ্ছি। নমরুদ হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর কথায় গভীরভাবে চিন্তামগ্ন হল। সে মনে মনে ভাবল তাঁর খোদায়ী দাবি ও বিশাল রাজ্যের একচ্ছত্র মালিকানা ত্যাগ করে ইব্রাহীম (আঃ)-এর খোদার দাসত্ব গ্রহণ করা এবং বালক ইব্রাহীম (আঃ)- কে নবী হিসেবে স্বীকার পূর্বক তাঁর অনুগত হওয়া নমরুদের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়। তাই হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর কথার কোন জবাব না দিয়ে সে নিজ মহলে চলে গেল।

হযরত ইব্রাহীম (আঃ) নমরুদ ও জনসাধারণের সাথে কথাবার্তা সমাধা করে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে যখন রওয়ানা করলেন তখন নবীর ভক্তবৃন্দেরা তাঁকে সিরিয়া যেতে বাধা দিলেন এবং তাঁর আগামী নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণের ওয়াদা দিলেন। নবী তাদের কথার জবাবে বললেন, নবীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ্‌ তা’য়ালার উপর। কোন মানুষের উপর তাদের নিরাপত্তা নির্ভয় করে না।

সূত্রঃ কুর আনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর বিবাহ-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন  

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।