হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) এর জামানার ঘটনা
একদা এক বাঘ পথ রোধ করে দাড়াল। ফলে মানুষের যাতায়াতে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছিল। পরে হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) সেই পথ অতিক্রমের সময় বাঘটিকে লক্ষ্য করে বললেন, পথ ছেড়ে দাও। সাথে সাথে সে লেজ দোলিয়ে পথ ছেড়ে দিল। মানুষের স্বাভাবিক যাতায়াত শুরু হল।
এ সময় কেউ মন্তব্য করল, নবী করীম (সাঃ) যথার্থই বলেছেন, যে আল্লাহকে ভয় করে তাকে সকলে ভয় করে। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সাঃ) হযরত আলাবিন হাজরামী (রাঃ) এর নেতৃত্বে একদল মুজাহিদকে এক অভিযানে প্রেরণ করলেন। পথে তাঁরা এক সমুদ্রের সম্মুখীন হলেন। সেখানে পারাপারের কোন ব্যবস্থা ছিল না। পরে তাঁরা কোন নৌযান ছাড়াই আল্লাহর নামে সমুদ্র অতিক্রম করলেন।
হযরত ইমরানকে ফেরেশতারা সালাম করতেন এবং তিনি ঐ সালামের আওয়াজ শুনতে পেতেন। পরে তিনি কোন ব্যাধির কারণে লোকের সেবা গ্রহণ করতে শুরু করলে ঐ সালাম বন্ধ হয়ে এক বছর পর তা পূনরায় শুরু হয়েছিল।
হযরত সালমান ও আবূ দারদা (রাঃ) এর সামনে একটি পানির পেয়ালা রক্ষিত ছিল। হঠাৎ তা সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ পড়তে আরম্ভ করল।
মোট কথা, সাহাবে কেরাম দ্বারা বহু কারামত প্রকাশ পেয়েছে। তবে এ কথা সত্য যে, সাহাবে কেরামের তুলনায় ওলী আল্লাহদের দ্বারা অনেক বেশী কারামত পেয়েছে। প্রশ্ন উঠতে পারে যে, সাহাবারা আল্লাহ পাকের দরবারে বেশী মর্যাদার অধিকারী হওয়া সত্বেও ওলিদের তুলনায় তাদের কারামতের সংখ্যা কম কেন? এ প্রশ্নের জবাবে হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল বলেন, সাহাবায়ে কেরাম এমন দৃঢ় ঈমানের অধিকারী ছিলেন যে, তাকে মজবুত করার জন্য কোন প্রকার কারামত ও অস্বাভাবিক ঘটনা দেখাবার প্রয়োজন হয়নি। পক্ষান্তরে পরবর্তী উম্মতদের ঈমান ছিল সে তুলনায় কম। তাই অনেক কারামত ও অস্বাভাবিক ঘটনার প্রয়োজন হয়েছে। এ কারণেই এ পক্ষের কারামতের সংখ্যা অধিক হয়েছে।
শায়েখ তরিকত হযরত শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী (রহঃ) বলেন, বস্তুত কারামত ও স্বাভাবিকরুদ্ধ ঘটনাসমূহ মানুষের দুর্বল ঈমানকে সবল করার জন্যেই প্রকাশ করা হয়। আর ওলী আল্লাহদের কারামত নবীদের মোজেযারই ফসল বটে। কারণ ওলীরা স্বীয় নবীর এত্তেবা করেন। বুজুর্গ উস্তাদ ইমাম আবুল কাসেমের মতামত হল- আল্লাহওয়ালাদের কারামত প্রকৃত পক্ষে নবীগনের মু’যিয়ারই অন্তর্ভুক্ত।
আরেকটি জরুরী বিষয় হল কারামত ও যাদুর পার্থক্য বিষয়ে আমাদের সুষ্পষ্ট বক্তব্য হল যাদু কাফের মোশরেকও নাফরমানদের নিছক ধোঁকা ও ভেলকিমাত্র, যা অসার ও বিলীয়মান। আর কারামত হল সারগর্ভ ও অবিলীয়মান এটা শুধু আল্লাহ ওয়ালাদের দ্বারা প্রকাশ পায়।
উপরের আলোচনায় আমি কারামত সম্পর্কে শরীয়তের দৃষ্টি ভঙ্গির বিবরণ দেয়ার চেষ্টা করেছি।