হযরত ইকরামা (রাঃ) ইবনে আবি জাহলের ইসলাম গ্রহণ – পর্ব ১
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন ইকরামা ইবনে আবি জাহলের স্ত্রী হযরত উম্মে হাকীম বিনতে হারেস ইবনে হিশাম ইসলাম গ্রহণ করিবার পর বলিলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! ইকরামা আপনার নিকট হইতে ইয়ামানের দিকে পালাইয়া গিয়াছে। সে আশঙ্কা করিতেছিল যে, আপনি তাহাকে কতল করিয়া দিবেন। অতএব তাহাকে নিরাপত্তা দান করুন। রাসূল (সাঃ) বলিলেন, সে নিরাপদ।
ইকরামার স্ত্রী হযরত উম্মে হাকীম (রাঃ) তাহার রোমদেশীয় গোলামকে সঙ্গে লইয়া স্বামীর সদ্ধানে বাহির হইলেন। পথিমধ্যে গোলাম তাহাকে অপকর্মের জন্য ফুসলাইতে আরম্ভ করিল। হযরত উম্মে হাকীম (রাঃ) তাহাকে আশা দিয়া আগের এক গোত্রের নিকট যাইয়া উঠিলেন এবং তাহাদের নিকট গোলামের ব্যাপারে সাহায্য চাহিলেন। গোত্রের লোকেরা গোলামকে উত্তমরূপে বাঁধিয়া রাখিল। হযরত উম্মে হাকীম (রাঃ) ইকরামার নিকট এমন সময় পৌঁছিলেন যখন তিনি তেহমার সমুদ্র উপকূলে পৌঁছিয়া নৌকায় চড়িয়া বসিলেন।
নৌকার মাঝি বলিতে লাগিল, এখলাসের কালেমা পড়িয়া লও। ইকরামা জিজ্ঞাসা করিলেন, কি বলিব? মাঝি বলিল, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ। ইকরামা বলিলেন, আমি তো এই কালেমা হইতেই পলায়ন করিয়া আসিয়াছি। ইতিমধ্যে হযরত উম্মে হাকীম (রাঃ) ও সেখানে পৌঁছিলেন এবং কাপড় নাড়াইয়া তাহার মনোযোগ আকর্ষণ করিতে লাগিলেন এবং এই বলিয়া তাহাকে লাগিলেন যে, হে আমার চাচাত ভাই, আমি তোমার কাছে এমন ব্যক্তির নিকট হইতে আসিয়াছি যিনি সর্বাধিক সম্পর্ক স্থাপনকারী, সর্বাপেক্ষা সদাচারী ও উত্তম ব্যক্তি। তুমি নিজেকে নিজে ধ্বংস করিও না।
ইকরামা এই সকল কথা শুনিয়া থামিলে হযরত উম্মে হাকীম (রাঃ) তাহার নিকট পৌঁছিয়া গেলেন এবং বলিলেন, আমি রাসূল (সাঃ)-এর নিকট হইতে তোমার জন্য নিরাপত্তা চাহিয়া লইয়াছি। ইকরামা (অবাক হইয়া) বলিলেন, সত্যই তুমি নিরাপত্তা লইয়াছ? হযরত উম্মে হাকীম (রাঃ) বলিলেন, হ্যাঁ, আমি তাঁহার সহিত এই ব্যাপারে আলাপ করিয়াছি। তিনি তোমাকে নিরাপত্তা দান করিয়াছেন। অতএব ইকরামা তাঁহার সহিত ফের রওয়ানা হইলেন। হযরত উম্মে হাকীম (রাঃ) পথিমধ্যে রুমী গোলামের ঘটনা সম্পর্কে তাহাকে অবহিত করিলেন। ইকরামা (ক্ষুদ্ধ হইয়া) গোলামটিকে কতল করিয়া দিলেন। তিনি তখনও মুসলমান হইয়াছিলেন না।
ইকরামা যখন মক্কার নিকটবর্তী হইলেন, তখন রাসূল (সাঃ) সাহাবা (রাঃ) দেরকে বলিলেন, ইকরামা ইবনে আবি জাহল মুমিন ও মুহাজির হিসাবে তোমাদের নিকট আগমন করিতেছে। তোমরা তাহার পিতাকে গালমন্দ করিও না; কারণ মৃত্যুকে গালমন্দ করিলে তাহার জীবিত আত্মীয়-স্বজন কষ্ট পায়, মৃতের নিকট তাহা পৌঁছায় না।বর্ণনাকারী বলেন, (মক্কায় চলার পথে) ইকরামা স্ত্রীর সহিত সহবাস করিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিলে স্ত্রী অস্বীকৃতি জানাইলেন এবং বলিলেন, তুমি কাফের আর আমি মুসলমান, এমতাবস্থায় ইহা সম্ভব নহে। ইকরামা বলিলেন, যে বিষয়টি তোমাকে আমার সহিত মিলন হইতে বাঁধা দিয়াছে তাহা নিঃসন্দেহে একটি বিরাট বিষয়।
সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা
হযরত ইকরামা (রাঃ) ইবনে আবি জাহলের ইসলাম গ্রহণ – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন