হযরত ইউসুফ ইবনে হুসাইন রাযী (রঃ) – পর্ব ৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তার অমূল্য উপদেশসমূহ ছিল নিম্নরূপ যথাঃ
১. হযরত ইউসুফ (রঃ) বলেন, মারেফাতপস্থী সুফী সাধকগণের পক্ষে পরিবার-পরিজন বড় বিপদজ্জনক।
২. আল্লাহ পাকের একাগ্র ধ্যানই মানুষকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু ভুলিয়ে দেয়।
৩. বন্ধুর স্মরণে যে বাঁধা সৃষ্টি করে তার থেকে দূরে থাকাই হল প্রকৃত বন্ধুত্ব ও প্রেমের লক্ষণ।
৪. গোপন প্রেম ও গোপন সাধনা দু’টির সাধুতা ও সততার নিদর্শন।
৫. আল্লাহর একত্বে যিনি নিমগ্ন, তাঁর সত্য-তৃষ্ণা ক্রমবর্ধ্মান। অন্য কিছুতে তাঁর পিপাসার নিবৃত্তি হয় না। কেননা যিনি সত্যের পিয়াসী, একমাত্র আল্লাহকে পাওয়ার মধ্যেই তাঁর তৃষ্ণা দূর হয়।
৬. পার্থিব জীবনে সর্বাঙ্গসুন্দর বস্তু হল ইখলাস। যদিও তা অর্জন করা দারুণ দূরুহ। মন থেকে কপটতা দূর করার বহু চেষ্টা করেছি, লোক দেখানো ব্যাপারগুলি অর্জন করতে। কিন্তু দেখলাম, একদিন দিয়ে সেগুলি তাড়িয়ে দিলে অন্য দিক দিয়ে এসে হাজির হয়।
৭. আমৃত্যু আল্লাহর অনুসন্ধানে ব্যাপৃত থাকাই হল প্রকৃত জেহাদ বা তরকে দুনিয়ার একমাত্র নিশানা।
৮. যে কোন অবস্থায় দাসসুলভ মনোবৃত্তি নিয়ে চুপচাপ থাকাই হল প্রকৃত দাসত্ব।
৯. মানুষের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ হল সত্যবাদী আর ধৈর্যশীল। আর সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট লোভী ব্যক্তি।
তাঁর অন্তিম প্রার্থনাঃ
হযরত ইউসুফ (রঃ) যখন বুঝতে পারলেন তাঁর মত্য আসন তখন তিনি আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা জানান, প্রভু গো! আমি মানুষকে কথায় ও নিজকে কাজের মধ্যমে উপদেশ দিয়ে
এসেছি। অতএব হে প্রভু, সে উপদেশের বিনিময়ে আমার পাপসমূহ মাফ করুন। তাঁর মৃত্যুর পর কোন লোক স্বপ্নে দেখলেন, হযরত ইউসুফ (রঃ) শান-শওকতের সঙ্গে বেশ আড়ম্বরপূর্ণ জীবন যাপন করছেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, আপনার জীবন তো বেশ সুখে-শান্তিতে কাটছে। কোন আমলের ফলে আপনি এমন মহার্ঘ্য জীবন পেলেন? উত্তরে তিনি জানান, আমি পার্থিব-জীবনে কোনদিন সত্য ও মিথ্যাকে মিশিয়ে দেইনি।
হযরত ইউসুফ (রঃ) অসাধারণ এক সিদ্ধপুরুষ ছিলেন। সদা-সর্বদা রোজা রাখার অভ্যাস ছিল তাঁর। এক মহাজ্ঞানী শ্রেষ্ঠ আরেফ। মারেফাতের মাহাত্ম্য প্রচার তাঁর জীবনের ব্রত ছিল। তিনি বহু জ্ঞানী-গুণী ও তাপস দরবেশের সাহচর্যে আসেন।
তাঁদের সঙ্গে তাঁর ছিল প্রগাঢ় বন্ধত্ব ও সৌহার্দ্য। হযরত যুননুন মিসরী (রঃ)-এর প্রধান খলীফাগণের সঙ্গেও তাঁর সু-সম্পর্ক ছিল। খ্যাতনামা সাধক হযরত আবু তুরাব (রঃ) ও হযরত আবু সাঈদ ছিলেন তাঁর প্রাঙ্গণের বন্ধু। কোহিস্তান ও রা-বাসীদের পীর ছিলেন তিনি। আল্লাহর অশেষ ইচ্ছায় তিনি সুদীর্ঘকাল জীবিত ছিলেন। এ জন্য অন্যান্যদের তুলনায় তিনি অনেক বেশি কাল ধরে আল্লাহর এবাদতের সুযোগ পান।
এবাদত, রিযাজত ও মারেফাতের সাধনায় হযরত ইউসুফ (রঃ) সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাধক ছিলেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত ইউসুফ ইবনে হুসাইন রাযী (রঃ) – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন