হযরত ইউসুফ ইবনে হুসাইন রাযী (রঃ) – পর্ব ১

অপূর্ব জ্যোতিময় এক তরুণ এসে পড়েছেন আরব মরুভূমির এক জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। নিজের জন্মভূমি ছেড়ে এক অচেনা জায়গায়। এ কাফেলার সহযাত্রী হিসেবে তিনি এসেছেন। সঙ্গীদের সঙ্গে বাস করছেন আরবের একটি গোত্রের বাসভূমিতে।

বাতাস যেমন সুগন্ধ ছড়ায়, তাঁর রূপলাণ্যের খবরও তেমনি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র এলাকায়। দীর্ঘকায়, পৌরুষ-দীপ্ত উজ্জ্বল দেহকান্তি। যেন আল্লাহ পাকের প্রিয়দর্শী। নয়নরঞ্জন নবী ইউসুফ (আঃ)-এর অনুরূপ হযরত ছিলেন ইউসুফ রাযী (রঃ)।

এদিকে, ঐ এলাকার গোত্রধিপতির এক কন্যার রূপের খ্যাতিও মানুষের মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায়। বহু তরুণ হৃদয়ের তিনিও মর্মলোক মানসী। ঘটনাক্রমে অনিন্দ্যসুন্দরী তরুণী একদিন দেখে ফেললেন তরুণ প্রবাসীকে। প্রথম দৃষ্টিই তাঁর মনে বুনেছিল প্রণয়ের বীজঙ্কুর। রূপতৃষ্ণা প্রেম-পিপাসায় পরিণত হল। আর সে পিপাসা এত তীব্র হয়ে উঠল যে, তিনি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না। এক গভীর রাত্রে অভিসারিকা হয়ে চলে এলেন প্রেমাষ্পদের কাছে।

কিন্তু কী আশ্চর্য, বহু তরুণ হৃদয়ে যে অনন্ত যৌবনা রূপসী তুফান তুলেছিলেন, তিনি এ প্রাবাসী তরুণের হৃদয়ে সামান্য একটি তরঙ্গও সৃষ্টি করতে পারলেন না। তাঁর অভিসার তাঁকে লজ্জিত করল। তরুণ একবার চোখ তুলেও তাঁর দিকে তাকালেন না। বরং, আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে বুক কেঁপে উঠল তাঁর। বেগম জুলায়খার আকর্ষণ উপেক্ষা করে হযরত ইউসুফ (আঃ) যেমন দৌড়ে গিয়েছিলেন দরজার দিকে, তেমনি তিনিও রূপসী তরুণীর প্রেম নিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ঐ এলাকা পরিস্থিতির করা ভাবতে ভাবতে সেই বিমূঢ় তরুণ হাঁটুর ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। স্বপ্নে দেখলেন, তিনি চমৎকার একটি জায়গায় উপস্থিত হয়েছেন। অসাধারণ তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আরও দেখলেন, সবুজ রঙের পোশাক পরিহিত একদল লোক। আবার তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আশ্চর্য সুন্দর একটি মানুষ। আভিজাতিক অস্তিত্ব নিয়ে বসে রয়েছেন এক অমূল্য আসনে। পুলক-চঞ্চল বিস্ময়ে তিনি ঐ সুপুরুষ ও তাঁর দলবলের পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। একজন উত্তর দিলেন, তাঁরা আল্লাহর ফেরেশতা। আর ভূবন ভোলানো রূপ নিয়ে যিনি বসে রয়েছেন তিনি হলেন হযরত ইউসুফ (আঃ)। তিনি আরও বললেন, হযরত ইউসুফ রাযী (রঃ)-এর সঙ্গে মোলাকাতের উদ্দেশ্যে তাঁরা সেখানে সমবেত হয়েছেন।

তরুণ বর লজ্জা পেলেন। তাঁর মতো সামান্য একটি মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য হযরত ইউসুফ (আঃ) সদলবলে সেখানে উপস্থিত। এও কি সম্ভব। বুক ঠেলে কান্না এল তাঁর। তিনি এসব ভাবছেন, হঠাৎ মহিমান্বিত ইউসুফ (আঃ) আসন ছেড়ে উঠে তাঁর সঙ্গে আলিঙ্গন করলেন। তারপর তরুণকে নিয়ে তাঁর পাশের আসনে বসিয়ে দিলেন। তখন আনতমুখে অনুচ্চস্বরে তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমার মতো অতি তুচ্ছ এক অধমকে এত বেশী সম্মান প্রদর্শন করছেন কেন, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত ইউসুফ ইবনে হুসাইন রাযী (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।