হযরত ইউসুফ আসবাত (রঃ) – শেষ পর্ব
তাঁর উপদেশসমূহঃ
১. মাত্র একটি রাতের স্বনিষ্ট এবাদত জেহাদের পুণ্য অপেক্ষাও মূল্যবান।
২. নিজের চেয়ে অন্য যেকোন লোককে উৎকৃষ্ট মনে করাকেই তাওয়াযু বিনয় বলে।
৩. সামান্য বিনয়ের মূল্য অধিক ধর্ম সাধারণ সমান।
৪. বিনয়ীর পরিচয় হল, সে শরীয়তের নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করে। সকলের সঙ্গে নম্র ও ভদ্র আচরণ করে, নিজের চেয়ে উচ্চপদস্ত লোককে সম্মান দেয় আর যেকোন ক্ষয়ক্ষতিতেই ধৈর্য ধারণ করে। আল্লাহর অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আল্লাহকে স্মরণ করে, উপাসনার দ্বার ক্রোধ প্রশমিত করে এবং আত্মমর্যাদা নিয়ে গণ্যমান্যদের কাছে যাতায়াত করে।
৫. তওবার চিহ্ন হল দশটি। যথাঃ (১) দুনিয়া থেকে দূরত্বে থাকা। (২) নিষিদ্ধ কাজ না করা, (৩) অহঙ্কারী লোকদের সঙ্গে মেলামেশা না করা, (৪) বিনয়ী ও নম্র লোকদের সঙ্গ অবলম্বন করা, (৫) পুন্যবান লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, (৬) তওবার ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত থাকা, (৭) তওবার পর পাপ কর্ম না করা, (৮) অন্যের হক আদায় করা, (৯) গণিমতের মাল গ্রহণ করা, (১০) অন্যায় শক্তি বর্জন করা।
৬. যোদদেরও দশটি চিহ্ন। যথাঃ (১) সঞ্চিত জিনিসপত্র ছেড়ে দেওয়া, (২) ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করা, (৩) দান করা, (৪) গুপ্ত শুদ্ধতা অর্জন করা, (৫) সম্মানী ব্যক্তির সম্মান করা, (৬) বন্ধুজনের সম্মান করা, (৭) সিদ্ধ কাজ অবলম্বনের ক্ষেত্রেও যোহদ রক্ষা করা, (৮) পরকালের কল্যাণ কামনা করা, (৯) আরাম-আয়েশ হ্রাস করা ও (১০) সুখ-শান্তির লিপ্সা কমিয়ে দেয়া।
৭. কোন কিছু গ্রহণ ও বর্জনের সময় সংশয়ের ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে হবে।
৮. সন্দেহ যুক্ত জিনিসপত্র পরিহার করতে হবে।
৯. ভালো ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করতে হবে।
১০. সুদ-ঘুষ থেকে মুক্ত হতে হবে।
১১. অসৎ চিন্তা-ভাবনা থেকে দূরে সরে যেতে হবে।
১২. আল্লাহর ইচ্ছার ওপর রাজি থাকতে হবে।
১৩. আমানত রক্ষা করতে হবে।
১৪. সমকালের দুঃখ-বিপর্যয় সতর্কতার সঙ্গে যেতে হবে।
১৫. বিদ্রোহ-বিপ্লবকালে ভীতিপ্রদ ব্যক্তি ও বস্তু সমূহ থেকে দূরে অবস্থান করা।
১৬. ধৈর্যের চিহ্ন দশটি। যথাঃ (১) রিপু সংযত রাখা, (২) শিক্ষা দৃঢ় রাখ, (৩) তালেবের নিরাপত্তা অক্ষুণ্ণ রাখা, (৪) চঞ্চলতা বর্জন করা, (৫) ধর্ম-নিষ্ঠার শক্তি সঞ্চয় করা, (৬) এবাদতে সহায়তা করা, (৭) ওয়াজিব কাজগুলি সম্পূর্ণ আদায় করা, (৮) আচারে-ব্যবহারে ভদ্রতা রক্ষা করা, (৯) সাধনার ধারা অব্যাহত রাখা, (১০) অপরাধ ও পাপ কর্মের প্রশ্রয় না দেয়া।
১৭. মোবাকাবার চিহ্ন হল ছয়টি। যথাঃ (১১) আল্লাহর প্রিয় বস্তু পছন্দ করা, (২) আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক রাখা, (৩) কম-বেশী যাই হোক, সবই আল্লাহর তরফ থেকে হয় বলে ধারণা করা, (৪) আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি ও শান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা, (৫) সৃষ্টি থেকে দূরে থাকা ও (৬) আল্লাহর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করা।
১৮. সত্য ও সততার চিহ্ন ছয়টি। যথাঃ (১) মন ও জিভকে শাসন করা, (২) কথায় ও কাজে মিল রাখা, (৩) প্রশংসার আকাঙ্কা না করা (৪) প্রভুত্বের প্রত্যাশা না করা, (৫) সৃষ্টি থেকে দূরে থাকা ও (৬) আল্লাহর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করা।
১৯. তাওয়াক্কুল বা আল্লাহ নির্ভরতার চিহ্ন নয়টি। যথাঃ (১) আল্লাহর দেয়া বস্তু দ্বারা শান্তি ও ধৈর্য লাভ করা, (২) যা কিছু পাওয়া যায় তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, (৫) দাসের মতো জীবন যাপন করা, (৬) তাকাব্বুরী থেকে বিরত থাকা, (৭) নিজের অধিকার বিলীন করে দেয়া, (৮) সৃষ্টিজগতের কোন কিছুরই প্রত্যাশা না করা, (৯) হাকীকতের ভেতরে ঢুকে গুপ্ততত্ত্ব অর্জন করা।
২০. যে আমল ছাড়া মুক্তির কোন উপায় নেই, চিন্তা-ভাবনা করে সেগুলিই গ্রহণ করবে। আর মনে এই দৃঢ় আস্থা স্থাপন করে নির্ভরতা অবলম্বন করবে যে, যা আগেই নির্দিষ্ট হয়েছে ভার বেশী পাওয়া কোনক্রমেই সম্ভব নয়।
২১. প্রেমের লক্ষণ পাঁচটি। যথাঃ সর্বদা নির্জনে থাকা, (২) মানুষের সঙ্গে মেলামেশা পছন্দ না করা , (৩) শুধু আল্লাহর যিকিরেই স্বাদ পাওয়া, (৪) মোজাহাদা ও সাধনায় শান্তি লাভ করা, (৫) এবাদতের রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা।
২২. কথা বলার আগে পরিণতির কথা চিন্তা করা খুব জরুরী। কিন্তু যে ক্ষেত্রে খোঁজ নেয়া লজ্জাজনক, সেক্ষেত্রে ঐসব থেকে দূরে থাকা।
মুখে কোনরূপ কুকথা বলবে না, কানে কোনরূপ অশ্লীল কথা শুনবে না, ব্যভিচার থেকে দূরে থাক, হালাল রুজি ভক্ষণ কর, দুনিয়া ত্যাগ কর ও মৃত্যুকে চোখের সামনে রাখ।
২৪. সুখ-শান্তির সময় মৃত্যুকে স্মরণ করবে। আনন্দে বিভোর হয়ে উঠলে জীবনকে শত্রু মনে করবে। সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় নিজেকে আল্লাহর ধ্যানে ডুবিয়ে দেবে। আল্লাহর কোন নেয়ামত নষ্ট হলে অস্থিরতা প্রকাশ করবে। আল্লাহ পাকের সৃষ্টিকলা সম্বন্ধে গবেষণা করবে। আর হৃদয়পটে কিছু ভেসে উঠলে আনন্দ প্রকাশ করবে।
২৫. জামাতে নামাজ আদায় করা ফরজ নয়, কিন্তু হালাল রুজির অন্বেষণ করা ফরজ।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া