হযরত ইউসুফ (আঃ) এর সৎ ভাইদের যুদ্ধ-২য় পর্ব
হযরত ইউসুফ (আঃ) এর সৎ ভাইদের যুদ্ধ-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তিন দিন পরে হযরত ইউসুফ (আঃ) ভাইদেরকে ডেকে বললেন, তোমাদের কার্যকলাপের দরুন রাজা তোমাদেরকে যাবজ্জীবন জেলে দিবার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আমি দেখলাম তোমরা ভাল লোকের সন্তান। অভাবের তাড়নায় তোমরা এখানে এসেছ। অভাবের তাড়নায় তোমরা চুরি করেছ। যদি তোমরা ধনসম্পদের মালিক থাকতে তা হলে চুরি করতে না। তাই আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। তোমরা যেখানে ইচ্ছা চলে যাও।
ভাইয়েরা আর একবার বনিয়ামিনকে ফিরে পাবার প্রার্থনা জানাল। কিন্তু হযরত ইউসুফ (আঃ) তা প্রত্যাখ্যান করলেন। অতঃপর ভাইয়েরা খালি হাতে দেশের দিকে রওয়ানা করল। ভাইদের মধ্যে শমুন দেশে ফিরে যেতে রাজি হল না। সে বলল, একবার ইউসুফকে নিয়ে পিতার সঙ্গে বেঈমানি করেছি। এবার আবার তাঁর ভাইকে নিয়ে অন্যায় করব আমি তা পারব না। আমি এখানে থেকে যাব, যতদিন ওকে নিয়ে আসতে না পারব। হযরত ইয়াকুব (আঃ) পথিমধ্যে লোক মোতায়েন করে রেখেছিলেন ছেলেদের আগমন বার্তা দ্রুত জানার জন্য।
সে লোক এসে হযরত ইয়াকুব (আঃ)-কে খবর দিল, আপনার ছেলেরা ফিরে এসেছে তবে তাঁরা সংখ্যায় নয়জন। হযরত ইয়াকুব (আঃ) এ খবর পেয়ে খবই হতাশ বোধ করলেন এবং সজোরে কাঁদতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পরে তাঁর ছেলেরা এসে পিতার নিকট সমস্ত বৃত্তান্ত খুলে বলল। পিতা বললেন, তোমরা মিথ্যা কথা বলছ। তখন তাঁরা বার বার কছম করে তাঁদের কথা বলে যেতে লাগল। তাঁরা আরো বলল, পিতা! আমাদের কথা আপনার বিশ্বাস না হয়, মিশর থেকে আগত যে কোন মানুষের নিকট জিজ্ঞাসা করুন। হযরত ইয়াকুব (আঃ) বললেন, আমার আর জিজ্ঞাসার প্রয়োজন নেই। সব কিছু আল্লাহ তায়ালার উপর নির্ভর করে আমি ধৈর্য ধারণ করলাম। আল্লাহ ধৈর্যধারণকারীদের সাহায্য করে থাকেন।
ইয়াকুব (আঃ) ছেলেদের প্রতি লক্ষ্য করে দেখলেন, তাঁরা সর্বদা বিমর্ষ থাকে এবং মাঝে মাঝে কান্না করে। তখন তাঁর মনে হল, ছেলেদের বর্ণনা সত্য হতে পারে। তাই তিনি একদিন ছেলেদেরকে ডেকে বললেন, তোমরা পুনরায় মিশরে চলে যাও এবং আমার বরাত দিয়ে বেনিয়ামিনকে ফেরত আনার আবেদন করে। ছেলেরা পিতার কথায় সম্মত হল এবং বলল, “ পিতা আপনি দয়া করে আজিজ মেছেরর নিকট একখানা পত্র লিখে দিন। যা আমাদের বলার চেয়ে অধিক কার্যকারী হবে। ইয়াকুব (আঃ) তাতে রাজি হলেন এবং লিখলেন-
দয়াময় আল্লাহ তায়ালার নামে আরম্ভ করছি। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার। আমি ইয়াকুব ইস্রাইলুল্লাহ বিন ইসহাক ছফিউল্লাহ। যার ভাই ইসমাইল জবিহুল্লাহ বিন ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ। আমি রাজা রায়হানের প্রধানমন্ত্রী আজিজ মেছেরের কাছে লিখছি যে, আমরা আল্লাহর ঘরের পরশি। আমরা এক এক সময় ভীষণ পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে থাকি। আমার দাদা ইব্রাহীম (আঃ)-কে আল্লাহ তায়ালা আগুনের পরীক্ষা করে মুক্তি দিয়েছেন। আমার চাচা হযরত ইসমাইল (আঃ)-কে জবেহ করার ন্যায় কঠিন পরীক্ষা করা হয়। আমার কথা বলতে গেলে, সন্তান হারা বিচ্ছেদের এক অনল পরীক্ষায় আমার চক্ষু দুটি ঝলসে গেছে। এ হারান সন্তানের ছোট ভাইটি চুরির অভিযোগে আপনার হাতে বন্দী। আপনি বিশ্বাস করুন, আমি কোন দিন চুরি করি নি। আমার যতদূর বিশ্বাস এ ছেলেটিও চুরি করা জানে না। অতএব বিষয়টি আপনার বিবেচনাধীন থাকল। যদি ছেলেটিকে মুক্তি দেন তবে হাশরের দিনে আপনি এ পুরষ্কার পাবেন। আমিন।”
হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর ভাইয়েরা পত্রখানি নিয়ে মিশরে রওয়ানা হল। দীর্ঘ সময় পথ চলার পরে তাঁরা মিশর রাজদরবারে গিয়ে পৌঁছল। রাজ মহলে গিয়ে পত্রখানি হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর নিকট দিল। হযরত ইউসুফ (আঃ) পত্রখানি নিয়ে নিজের খাস রুমে চলে গেলেন এবং পত্রখানি মনযোগ সহকারে পাঠ করলেন। পত্রখানি বুকে মুখে লাগালেন আর কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। দীর্ঘ সময় অতীত সৃতি স্মরণ করতে লাগলেন এবং পিতার বর্তমান অবস্থা মনে করে বার বার দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন। অতঃপর পিতার পত্রের একখানি জবাব লিখে গোপনে পাঠিয়ে দিলেন। পত্রে তিনি লিখলেন।।
পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার নামে লিখছি। যিনি আমার প্রতি রহমত বর্ষণ করেছেন এবং আপনাকে ধৈর্য ধারণের তৌফিক দান করেছেন। আমি আপনার পত্র পেয়েছি। সে মর্মে পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা করছি। আপনি আপনার পত্রে পুর্ব পুরুষের ধৈর্যের যে উদাহরণ উল্লেখ করেছেন, তাতে আমি গর্বিত। পুর্ব পুরুষ ধৈর্যের যে শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন তা অনুসরণ করার মধ্যেই সর্বরকম কল্যাণ নিহিত। আপনার আশীর্বাদ চাই। আজকে এ পর্যন্ত রাখি। আল্লাহ তায়ালার উপর নির্ভর করার মধ্যেই মঙ্গল নিহিত, ইতি।
এ পত্রখানি হযরত ইয়াকুব (আঃ)-এর হাতে পৌঁছামাত্র তিনি আনন্দে চিৎকার করে উঠেন। সজোরে বলতে থাকেন এ পত্র আমার ইউসুফের লিখা। কারণ নবীর পত্রের যথাযথ উত্তর নবী ব্যতীত আর কেউ দিতে পারে না। এতটা বুদ্ধি ও গায়েবী এলেম সাধারণ মানুষের থাকে না।
সূত্রঃ আল কোরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত ইউসুফ (আঃ) এর সৎ ভাইদের যুদ্ধ-৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন