হযরত ইউসুফ (আঃ) এর সৎ ভাইদের আরজ – ১ম পর্ব

হযরত ইউসুফ (আঃ) মিশরের খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে সমাসীন হবার পরে তিনি সারা দেশে খাদ্য সংগ্রহ অভিযান আরম্ভ করলেন। কারণ তখন থেকে সাত বছর দেশে অধিক ফলন আসবে এবং পরবর্তী সাত বছর দেখা দিবে দুর্ভিক্ষ। তাই তিনি সকল দেশের বড় বড় গুদাম তৈরি করে খাদ্য মজুদের ব্যবস্থা করেন। হযরত  ইউসুফ (আঃ)-এর আইন-কানুন আচার-ব্যবহার মানুষের নিকট অত্যন্ত প্রিয় হয়ে ওঠে। এজন্য খাদ্য সংগ্রহ অভিযান পরিচালনা করা খুব সহজসাধ্য হয়।

 সেচ্ছায় দেশবাসী প্রতিযোগিতামূলক উৎপাদন আরম্ভ করে। অধিক উৎপাদনের জন্য খাদ্যমন্ত্রী অনেকগুলো বড় বড় পুরষ্কার ঘোষণা দিলেন, যাতে মানুষের আগ্রহ, উৎসাহ অনেক বৃদ্ধি পেল এবং স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকগুণ বেশী শস্য উৎপন্ন হয়। এভাবে তিনি অধিক ফসল ফলিয়ে দেশের সমস্ত গুদাম ভর্তি করে ফেলেন। পরে স্থান অভাবে সকল সরকারী ভবনের এক অংশ গুদাম হিসেবে কাজে লাগালেন।

এভাবে এক এক করে সাত বছর পার হয়ে গেল। ইতোমধ্যে আজিজ মেছের ইন্তেকাল করেন এবং হযরত ইউসুফ (আঃ) প্রধানমন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রীর সম্পূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে আরম্ভ করেন। বাদশা রায়হান অধিক বৃদ্ধ হয়ে পড়েন। তিনি একদিন হজরত  ইউসুফ (আঃ) ডেকে তাঁর মাথায় রাজ অধিরাজের মুকুটটি পরিয়ে দেন এবং বলেন বাবা। “ তোমার ন্যায় একজন সচ্চরিত্রবান ছেলের নিকট আমার বিরাট দায়িত্বটি অর্পণ করার সুযোগ পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালা সঠিকাভাবে তোমাকে এ দায়িত্ব পালন করার সৌভাগ্য দান করুন।”

হযরত ইউসুফ (আঃ) রাজার কথা শুনে বললেন, হে মহাসম্মানিত রাজা! আপনার বদান্যতার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। তবে আপনি যতদিন জীবিত আছেন, ততদিন এ মুকুট আপনার নিকট থাকবে। আমি আপনার আজ্ঞাবহ হিসেবে রাজ্যের সমুদয় কার্যকে এগিয়ে নিয়ে যাব। আপনি আমার জন্য দোয়া করবেন।

রাজা হযরত ইউসুফ (আঃ) এর কথা শুনে বললেন, বাবা! এবার আমার পকালের মুক্তির জন্য আমাকে তোমার ধর্মের দীক্ষা দান কর। হযরত ইউসুফ (আঃ) তখন তাঁকে কালেমা পাঠ করালেন এবং ইসলামের আদেশ নিষেধ প্রতিপালনের উপদেশ দেন। রাজা ইসলামের আহকাম শিক্ষার জন্য একজন উপযুক্ত আলেম নিয়োগ করার কথা হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে বলে দিলেন। হজরত ইউসুফ (আঃ) তখন তাঁর বন্দী জীবনের সাথী একজন যোগ্য ব্যক্তিকে এ কাজে নিযুক্ত করে দিলেন। যিনি রাজা রায়হানকে ইসলামের যাবতীয় বিষয় অবগত করবেন।

হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর অতি কর্ম ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে ফসল উৎপাদনের সাত বছর কেটে গেল। পরবর্তী বছর থেকে আরম্ভ হল দুর্ভিক্ষ। মানুষ প্রথম দিকে ঘটনাটি খুব কঠিন বলে বিশ্বাস করতে পরে নি। কিন্তু দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাসে সারা পৃথিবী ব্যাপী আরম্ভ হল হাহাকার। খাদ্যের অভাবে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ছুটতে আরম্ভ করল দেশ-দেশান্তরে।

 এক বছরের মধ্যে জনসাধারণের মজুদকৃত সকল শস্য ফুরিয়ে গেলে মানুষের আর্তনাদ ও চিতকারে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে গেল। রাস্তাঘাটে আনহারী মানুষের লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেল এবং বুভুক্ষু মানুষের দল এসে ভীড় জমাতে লাগল হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর দরবারে। তখন হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর স্বপ্ন তাবীরের প্রতি বিশ্বাস হল সকল মানুষের।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

হযরত ইউসুফ (আঃ) এর সৎ ভাইদের আরজ – ২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।