হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর বিবাহ-২য় পর্ব
হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর বিবাহ-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত ইউসুফ (আঃ) এ দৃশ্য দেখে সেখানে দাড়ালেন। তখন দূরবর্তী মহিলাগণ ছুটে এসে হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর নিকট আরজ করে বলল, হুজুর! আমরা জোলাখার সেবিকা। তিনি আমাদেরকে বলেছেন, “ সে রাস্তা দিয়ে ইউসুফ যাত্রা করবেন সে রাস্তার মাঝখানে আমাকে শুয়ে দাও যেন হযরত ইউসুফ (আঃ) এর অশ্ব আমাকে পদদলিত করে যায়। তাহলে হয়ত আমার হৃদয়ের প্রজ্বলিত অগ্নি কিছুটা নির্বাপিত হবে। তাই তাঁর আদেশ অনুসারে আমরা তাঁকে এখানে এনে রাস্তায় শুয়াইয়ে দিয়েছি। তিনি বর্তমানে সম্পূর্ণ উন্মাদ, তাঁর কোন হিতাহিত জ্ঞান নেই। আপনার নাম যে উচ্চারণ করে যে ব্যক্তি তাঁর কাছে যায় তাঁকে সে চুম্বন করেন এবং প্রচুর অর্থ প্রদান করেন। নিজের খাওয়া-দাওয়া শোয়া বিশ্রামের প্রতি তাঁর কোন দৃষ্টি নেই। তিনি ঘর ছেড়ে নির্জন বনে থাকতে ভালবাসেন।
আমরা তাঁর সেবিকা হিসেবে সর্বদা তাঁর সেবা যত্ন করে থাকি। তিনি তাঁর ধনসম্পদ প্রায়ই উজাড় করে দিয়েছেন। নিজ সহায় সম্পদ রক্ষার প্রতি তাঁর কোন আগ্রহ নেই। বর্তমানে তাঁর একজন দূরবর্তী আত্মীয় তাঁর মহল ও বিষয় সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করছেন। তিনি যদি এ সময় এ দায়িত্ব না নিতেন তাহলে হয়ত এতদিনে তাঁর সমুদয় সম্পদ হাতছাড়া হয়ে যেত। ইতোপূর্বে বহু লোক প্রতারণা করে আপনার সাক্ষাতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বহু টাকা পয়সা আত্মসাত করেছে। যে জোলেখা এক সময় মিশরের অন্যতম ধনী ছিলেন। তিনি আজ একজন সাধারণ মানুষে পরিণত হয়েছেন।
হযরত ইউসুফ (আঃ) মহিলাদের কথা শুনে জিজ্ঞেস করলেন, জোলেখার এরূপ হবার কারণ কি? মহিলারা উত্তর দিল, হুজুর আমাদের বেয়াদবী মাফ হোক। জোলেখা আপনাকে হৃদয় দিয়ে ভালবেসে ছিলেন। কিন্তু আপনাকে লাভ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। এ বিরহ বেদনাই তাঁর উন্মত্ততার প্রধান কারণ। হযরত ইউসুফ (আঃ) তখন অশ্বপৃষ্ট হতে অবতরণ করে জোলেখার নিকট গিয়ে ডাক দিলেন, জোলেখা তুমি কেমিন আছ? জোলেখা তখন উন্মত্তের ন্যায় লাফিয়ে উঠে বললেন, ইউসুফ তুমি এসেছ? তুমি একটু সময় বস, তোমাকে একবার শেষ বারের মত দেখে নেই। তুমি আমার অন্তরে যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছ তাতে পুড়ে আমি অঙ্গারে পরিণত হয়েছি। তবু ও অগ্নি শিখার দহন বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয়নি। তুমি আমার নাকের সম্মুখে হাত দিয়ে দেখ, কি ভীষণ সে অগ্নিশিখা যা দীর্ঘ ত্রিশ বছর যাবত আমার হৃদয় মাঝে অনির্বাণ শিখা হিসেবে বিরাজমান রয়েছে।
হযরত ইউসুফ (আঃ) তখন নিজের হাত খানা জোলেখার নাকের নিকট নিল। জোলেখার নিশ্বাসের অসহ্য উষ্ণতায় হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর হাত ঝলসে গেল। তিনি তৎক্ষণাৎ অসহ্য যন্ত্রনায় হাত সরিয়ে নিলেন। জোলেখা তখন দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বললেন, তুমি আমার জীবন যৌবন সমস্ত কিছু ভূলুণ্ঠিত করেছ। একদিন আমি ছিলাম মিশরের অদ্বিতীয় সুন্দরী আর আজ আমি পৃথিবীর সর্বনিকৃষ্ট কদাকার এক জংলী প্রাণী। এজন্য সম্পূর্ণ দায়ী তুমি। এ জন্য তোমার মহান প্রভুর নিকট তোমাকে জবাবদিহি করতে হবে।
জোলেখার আহাজারি ও আবেগপূর্ণ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে হযরত ইউসুফ (আঃ) জিজ্ঞেস করলেন, এখন আমি তোমার কি উপকার করতে পারি? জোলেখা বললেন, ইউসুফ! আজ আমি আমার কোন উপকারই করতে পারবে না। তবে তোমার কারণে আমার জীবন যৌবন ও রূপ সৌন্দর্যের যে পতন ঘটেছে। সেটা আমাকে পুনরায় ফিরিয়ে দাও। তোমার খাদ্য যদি সত্য হয় তবে এ আবদার পূরণ কর।
হযরত ইউসুফ (আঃ) জোলেখাকে বললেন, চল তোমার মহলে চল। জোলেখা তখন উঠে মহলের দিকে রওয়ানা করলেন। হযরত ইউসুফ (আঃ) তাঁর পিছনে পিছনে মহলে এসে পৌঁছলেন। চতুর্দিকে তাকিয়ে দেখলেন সর্বত্র যেন এক ভীষণ মলিনতা বিরাজ করছে। তিনি জোলেখাকে বললেন, অজু গোসল করে আস।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী