হযরত ইউনুস (আঃ) -এর শহর ত্যাগ – ৩য় পর্ব
হযরত ইউনুস (আঃ) -এর শহর ত্যাগ – ২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সে বালুময় চরাভূমিতে হযরত ইউনুস (আঃ) অবস্থান করছিলেন। তাঁর অদূরে ছিল জনবসতি। সেখানের জনগণ লোকমুখে নবীর দাওয়াতের কথ শুনে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে দেখার ভাগ্য তাদের হয়নি। তারা দীর্ঘ দিন যাবত নবীর আগমনের প্রতীক্ষায় দিন গুনছিল। নবীর নিকট দ্বীন কবুল করে মুসলমান হবার দুর্দমনীয় আকাঙ্ক্ষা তাদের ব্যাকুল করে তোলে। নবী আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ অনুসারে বালুময় চরাভূমি ছেড়ে জনবসতির দিকে রওয়ানা করলেন। একদিন এক রাত পথ চলার পরে তিনি এসে লোকালয় পৌঁছালেন। সেখানে লোকেরা নবীর পরিচয় পেয়ে তাঁকে যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করলেন। নবীর খেদমতে মানুষ সর্বদা লেগেই থাকত। নবী তাদেরকে ইমানের দাওয়াত দিলেন। তারা দলে দলে এসে নবীর নিকট কালেমা পাঠ করে মুসলমান হল এবং শরীয়তের যাবতীয় নিয়ম নীতি শিখতে আরম্ভ করে দিল। এক রকম দিবারাত্র নবীকে তালীমের কাজেই ব্যস্ত থাকতে হল। এভাবে কয়েকদিন অতিবাহিত হবার পরে একদিন কোথা থেকে যেন নবীর স্ত্রী ও ছোট ছেলে এসে সেখানে উপস্থিত হল। নবী তাদেরকে দেখে অবাক হলেন এবং আল্লাহর দরবারে অশেষ শুকরিয়া আদায় করলেন। অতঃপর স্ত্রীর নিকট তাদের বেঁচে থাকার ঘটনা জানতে চাইলেন।
নবীর স্ত্রী বললেন, আমরা আপনার হাত থেকে ছুটে পানির মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম। পানির প্রবল স্রোতে কখন আমাদেরকে তলিয়ে নিত আবার কখনও ভাসিয়ে রাখত যাতে করে আমরা অত্যন্ত ভীত হলেও বেঁচেছিলাম। এভাবে কয়েক ঘন্টা থাকার পরে আমাদের পায়ে মাটি ঠেকে। তখন সেখানে শক্ত করে দাঁড়াই। এ সময় স্রোতের প্রবলতা কিছুটা কমে যায়। একটু পরে আমরা দেখলাম সেখানের পানি সম্পূর্ণ শুকিয়ে গিয়েছে। তখন আমরা সেখান থেকে উঁচু দিকে হাটতে আরম্ভ করলাম। কিছুদূর হাঁটার পরে কয়েক জন মানুষকে দেখতে পেলাম। তারা আমাদেরকে অসহায় অবস্থায় দেখে নিকটে আসল এবং আমাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করল। আমি তখন আপনার নাম বলে পরিচয় দিলাম।
তারা আমাদের সম্মান প্রদর্শন করে তাদের সাথে নিয়ে চলল। আমরা তাদের সাথে তাদের বাড়ীতে গিয়ে পৌঁছলাম। সেখানে তারা আমাদেরকে আশ্রয় দিল এবং আমাদের থাকা খাওয়ার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করে দিল। অতঃপর তারা আমার নিকট থেকে দ্বীনের দাওয়াত সম্বন্ধে অবগত হল এবং কালেমা পাঠ করে দ্বীন কবুল করল। প্রতিদিন আমার নিকট কয়েকশত লোক এসে ইসলাম গ্রহণ করল এবং শরীয়তের মাসআলা মাসায়েল সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করত। এখানের সমস্ত মানুষেরা বলাবলি করতে শুরু করল যে, নবীর স্ত্রী যখন আমাদের এলাকায় এসেছেন তখন নবী ও যথা শীঘ্র আমাদের মাঝে আসবেন এতে সন্দেহ নেই।
এছাড়া আমি একদিন স্বপ্নেও দেখেছি একজন শুভ্র পোশাক পরিহিত ব্যক্তি আমাকে লক্ষ করে বলল, হে নবীর স্ত্রী! তোমার স্বামীর উপর আল্লাহ তায়ালার পরীক্ষা শেষ হয়েছে। অল্প দিনের মধ্যে তাঁর সাথে তোমাদের সাক্ষাৎ হবে। তুমি যেভাবে দ্বীনের কাজ করেছ তাতে আল্লাহ তায়ালা তোমার কার্যে সন্তুষ্ট হয়েছেন। তাই তিনি দয়া করে তোমার সুখের দ্বীন ফিরিয়ে দিবেন। স্ত্রীর নিকট নবী তাদের কাহিনী শুনে আল্লাহর দরবারে শোকরানা নামাজ আদায় করলেন।
নবী আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ অনুসারে সারা অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে মানুষকে তালীম দিতে লাগলেন। এভাবে কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পরে একদা এক ব্যক্তি নবীর বড় ছেলেকে নিয়ে নবীর নিকট হাজির হল। নবীর যে ছেলেকে বাঘে নিয়েছিল এ সেই ছেলে। নবী ছেলেকে দেখে চিৎকার দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। কিছু সময় পরে সঙ্গের ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলেন। আপনি এ ছেলেকে কোথায় পেলেন। সে তখন বলল, হুজুর! আমরা কয়েক বন্ধু একত্রিত হয়ে দেশ-বিদেশে বাণিজ্য করে থাকি।
একদিন নিনোয়া এলাকা আমরা যাচ্ছিলাম। এমন সময় জঙ্গলের ধারে বাঘের মুখে এ ছেলেটিকে দেখতে পেয়ে আমরা বাঘকে তাড়া করি। বাঘ আমাদের ভয়ে ছেলেটিকে রেখে জঙ্গলে চলে যায়। আমরা তখন ছেলেটিকে উদ্ধার করি। অতঃপর তাঁর শুশ্রূষা করি এবং আমাদের সঙ্গে রাখি। ছেলেটি তার পিতার পরিচয় দিলে তাকে স্নেহ মায়া করি এবং আপনার নিকট তাকে পৌঁছে দেয়ার চিন্তা করি। আমরা এ জন্য খুবই উদ্বিগ্ন ছিলাম। হঠাৎ গতদিন এ অঞ্চলে আপনার আগমনের সংবাদ অবগত হই। তাই আজকে তাকে আপনার নিকট পৌঁছে দিতে এসেছি। নবী আগন্তুকের কথা শুনে অনেক ধন্যবাদ দিলেন এবং দ্বীনের দাওয়াত কবুল করার আমন্ত্রণ জানলেন। আগন্তুক এক বাক্যে দাওয়াত কবুল করে কালেমা পাঠ করল এবং সে নবীকে প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, তার বংশাবলীর সকলকে সে নবীর নিকট হাজির করে মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত করে নিবেন।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত ইউনুস (আঃ) -এর শহর ত্যাগ – ৪র্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন