হযরত ইউনুস (আঃ) -এর শহর ত্যাগ – ১ম পর্ব

নবী মনের কষ্টে একদিন শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। অনেক দূর পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে দেখলেন এক নদীর তীরে একটি জাহাজ বাঁধা। লোকজন সে জাহাজে আরোহণ করছে। নবী একজনকে জিজ্ঞেস করলেন, এ জাহাজ কোথায় যাবে। সে বলল, শহর থেকে অনেক দূরে যাবে। যদি আপনি আমাদের সাথে যেতে চান তবে জাহাজে উঠে পড়ুন। নবী লোকটির কথা শুনে জাহাজে উঠে পড়লেন।

কিছু সময় পরে জাহাজ ছেড়ে দেয়া হল। নির্বিঘ্নে জাহাজ চলছিল। একাধারে তিন দিন চলার পরে হঠাৎ জাহাজ থেমে গেল। সম্মুখে অগ্রসর না হয়ে একই স্থানে ঘুরছিল। সারেং মিস্ত্রি ও অন্যান্য কারিগরেরা জাহাজের বিফলতা দুরীকরণার্থে সর্বাত্মক চেষ্টা করল কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। জাহাজ একই স্থানে শুধু ঘুরছিল।

সব রকম চেষ্টায় ব্যর্থ হয় পরিচালকেরা সকল যাত্রীকে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে বলল। সকলে জীবন রক্ষার তাগিদে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি আরম্ভ করল, দোয়া দুরুদ পাঠ শুরু হল। অনেক যাত্রী জীবনের আশা ত্যাগ করে খুবই ভেঙ্গে পড়ল।

জাহাজে ছিল দুইজন নজ্জুম অর্থাৎ গনক। তাঁরা জাহাজের এ ঘটনায় গণনার কাজ আরম্ভ করে দেখল যাত্রীদের মাঝে এমন এক পাপী ব্যক্তি আছে যে নিজ প্রভুর নিকট থেকে পালিয়ে এসে জাহাজে উঠেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত এ ব্যক্তি জাহাজে অবস্থান করবে ততক্ষণ জাহাজ ঠিকভাবে চলবে না। গণকেরা এ খবর অবগত হয়ে কাপ্তানকে এবং সমস্ত আরোহীদেরকে জানাল। তখন সকলে সচেতন হয়ে এ ধরণের লোকের সন্ধান করতে লাগল।

হযরত ইউনুস (আঃ) প্রথমে নিজের বিষয় এ ধরণের অপরাধের কথা আদৌ চিন্তা করেন নি। যাত্রীরা যখন কেউ এ ধরণের অপরাধের কথা স্বীকার করল না তখন তাঁরা কোরা ঢেলে অর্থাৎ লটারীর মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিকে বের করার চেষ্টা করল। দুতিন দিন যাবত চেষ্টা করে তাঁরা কারো নাম খুঁজে পেল না। তখন সকলে নিরুৎসাহ হয়ে পড়ল এবং আহার নিদ্রা ত্যাগ করে দিবারাত্র কেঁদে কাটাতে আরম্ভ করল।

হযরত ইউনুস (আঃ) নবী রাত্রি বেলায় স্বপ্নে দেখলেন কে যেন তাঁকে বলছে, হে নবী! জাহাজের আরোহীদের মধ্যে একমাত্র তুমিই তোমার প্রভুর নিকট থেকে পালিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছ। অতএব সকলের নিকট নিজের দোষ স্বীকার কর। হযরত ইউনুস (আঃ) স্বপ্ন দেখে গভীর রাত্রে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। ভোর বেলা তিনি সকলের নিকট বললেন “ আমি অপরাধী। তোমরা কোরা ঢেলে পুনরায় পরখ কর। তখন তাঁরা কোরা ঢেলে দেখল বাস্তবিক হযরত ইউনুস (আঃ) দোষী হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। তাঁরা কয়েক বার চেষ্টা করল। প্রতি বারই তাঁর নাম আসল। তখন সকল যাত্রী ও জাহাজ কতৃপক্ষ সিদ্ধান্ত করল এ ব্যক্তিকে সমুদ্রে নিক্ষেপ ব্যতীত জাহাজ চলবে না। অতএব এ সিদ্ধান্ত কার্যকরী করার পূর্বে এক বার অপরাধীর মতামত জিজ্ঞেস করে নেয়া উচিৎ। তাই তাঁরা নবীর নিকট তাঁদের সিদ্ধান্তের কথা বলল। নবী বললেন, আলহামদুলিল্লাহ! আমার জন্য এতগুলো লোকের জীবন বিপন্ন হবে সেটা সম্ভব নয়। অতএব আপনাদের সিদ্ধান্ত কার্যকর করুন।

এ ব্যাপারে কেউ কোন মন্তব্য করছেন না দেখে নবী বললেন, আমার ব্যাপারে যখন আপনারা কোন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না তখন আমাকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা কার্যকর করণের ব্যবস্থা নিতে হবে। এই বলে তিনি অন্ধকারে দু রাকাত নামাজ আদায় করলেন এবং নিজ পোশাকে খুসবু লাগিয়ে জাহাজের পাশে শুয়ে পড়লেন। তারপরে একটু গড়াগড়ি দিয়ে সমুদ্রে পতিত হলেন। জাহাজের যাত্রীরা সকলে দৃশ্য দেখল। সমুদ্রে পতিত হবার পরে আর কেউ কোন খোজ-খবর জানল না। তখন থেকে জাহাজ নির্বিঘ্নে চলতে আরম্ভ করল।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

হযরত ইউনুস (আঃ) -এর শহর ত্যাগ – ২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।