হযরত আহমদ হারব (রঃ) – পর্ব ১

হযরত আহমদ হারব (রঃ) সর্বকালের এক মহান সাধক। তাঁর ভক্ত ও শিষ্যের সংখ্যা ছিল অসংখ্যা। তিনি যে কত উন্নত মর্যাদার অধিকারী ছিলেন তা উপলব্ধি করা যায় অন্য এক আলোকিত পুরুষ হযরত ইয়াহইয়া ইবনে মাআয (রঃ)-এর মন্তব্য। হযরত মাআয তাঁর সম্বন্ধে একবার বলেন, আমার মৃত্যুর পর মাথাটি যেন হযরত আহমদ হারবের পায়ের ওপর রাখা হয়।

তাঁর ধর্মনিষ্ট কিংবদন্তীতুল্য। একবার তাঁর মা মুরগির গোশত রান্না করে তাঁকে খেতে দেন। বলেন, এটি তাঁর পোষা মুরগি। অতএব এর মধ্যে কোনরূপ সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ নেই। কিন্তু হযরত হারব (রঃ) সে গোশত স্পর্শ করলেন না। বললেন, আমি নিজের চোখে দেখেছি, মুরগিটির প্রতিবেশীদের ছাদের ওপর গিয়ে তার শস্য-দানা খেয়েছিল। কাজেই এ গোশত আমি কিছুতেই খেতে পারি না। আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।

আল্লাহর ধ্যান-এবাদতে তিনি এত বেশী মশগুল থাকতেন যে, তাঁর সময়ের বড় অভাব দেখা দিত। একবার এক বন্ধু তাঁকে একখানি চিঠি দেন। কিন্তু সময়াভাবে তিনি উত্তর দিতে পারলেন না। অনেক দিন কেটে গেল। চিঠির জবাব না পেয়ে বন্ধু আবার লিখলেন। কিন্তু সে চিঠিরও উত্তর দেবার ফুরসত হল না। অবশেষে তিনি তাঁর এক শিষ্যকে বললেন, আমার বন্ধুকে লিখে দাও, সে যেন আমাকে আর চিঠি না লিখে। কেননা আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকার কারণে চিঠির উত্তর দেবার অবসর আমার নেই। আমি তোমাকেও বলছি, আল্লাহর যিকিরে তুমিও যেন এভাবে বিভোর হয়ে যাও।

তাঁর ধ্যানের ধরণ সত্যিই বিস্ময়কর ছিল। ক্ষৌরকার ক্ষৌরকর্ম করছে আর সেই অবসরে তিনিও আল্লাহর যিকির করছেন। ক্ষৌরকার বলল, কিছুক্ষণের জন্য আপনার ঠোঁট দুটি বন্ধ রাখুন। হযরত হারব (রঃ) বললেন, তুমি তোমার কাজ কর আমি আমার কাজ করছি। অর্থাৎ আল্লাহর যিকির থেকে তিনি বিরত হলেন না। আর তাতে তাঁর ঠোঁটের কিছু অংশ কেটে-কুটে রক্তাক্ত হয়ে গেল।

এক আশ্চর্য কৌশলে তিনি তাঁর ছেলেকে তাওয়াক্কুল বা আল্লাহ নির্ভরশীল শিক্ষা দেন। ঘরের দেওয়ালে একটি ছিদ্র করে ছেলেকে বললেন, তোমার যখন যা দরকার তুমি এই ছিদ্রের কাছে এসে বলবে। এদিকে তিনি তাঁর স্ত্রীকে শিখিয়ে দিলেন, ছেলে যা চায় তা যেন ঐ ছিদ্র দিয়ে দেওয়া হয়। তবে সাবধান! ছেলে যেন মাকে দেখে না ফেলে। আড়াল থেকে সব কিছু করতে হবে। সেভাবে কাজ চলতে লাগল কিন্তু মা একদিন অনুপস্থিত। কোন কাজে বাইরে গেছেন। ছেলে যথারীতি ছিদ্রের কাছে এসে খাবার চাইল। আর তা পেয়েও গেল। মা ফিরে এসে দেখেন, ছেলে দিব্যি খেতে বসেছে। অবাক হয়ে তিনি বলেন, এ খাবার তুমি পেলে কোথায়? ছেলের চটপট উত্তরঃ রোজ যেখান থেকে পাই।

সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া

হযরত আহমদ হারব (রঃ) – পর্ব ২  পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।