আল্লাহ প্রেমে আত্ম নিবেদিত একজন মহান তাপস হলেন হযরত আলী সহল ইস্পাহানী (রঃ)। মানুষের মনের মধ্যে যে ব্যাধি আছে, ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, তিনি তা দেখতে পেতেন। অদৃশ্য জগতের গুঢ় তত্ত্বও তাঁর জানা ছিল। তিনি হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) ও হযরত আবু তুরাব (রঃ)-এর সমসাময়িক ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ইস্পাহানী শব্দটি যুক্ত হয়েছে। কেননা, তাঁর জন্মস্থান ছিল ইস্পাহানে। বিভিন্ন সময়ে হযরত আলী সহল (রঃ) যেসব উক্তি করতেন তা যেমন ছিল যুক্তিপূর্ণ, বুদ্ধিদীপ্ত তেমনি মূল্যবান। তাঁর প্রায় ত্রিশ হাজার দিরহাম ঋণ ছিল। মুহাম্মদ ইবনে ওসমান (রঃ) ঐ ঋণ পরিশোধ করেন।
তাঁর তত্ত্বকথাসমূহঃ
১. এবাদতের দিকে মনের আকর্ষণ আল্লাহর পক্ষে থেকে তওফীক লাভের লক্ষণ এবং কারো বিরোধিতার পরোয়া না করা উদারতা লক্ষণ।
২. মারেফাতের সম্মান রক্ষা করা অন্তরের চেতনার লক্ষণ। অহঙ্কার-অহমিকা প্রকাশ করা বোকামী ও মূর্খতার লক্ষণ।
৩. প্রথমে মনের ইচ্ছাকে পবিত্র করতে হয়, না হলে পরে শান্তি ও সুখ থেকে বঞ্চিত হতে ছয়।
৪. তিনি বলেন, যিকিরের গোপন কথা হলোঃ যে ব্যক্তি নিজেকে খুব কাছে বলে মনে করে, সে নিঃসন্দেহে খুব বেশী দূরে। যেমন, কোন বালক আয়নার মধ্যে সূর্যের আলো দেখে তা ধরবার জন্য তাড়াতাড়ি হাত বাড়ায় আর মুঠো বন্ধ করে। আর মনে করে যে চমৎকার আলোর ছটা সে তার মুঠোয় ধরে ফেলেছে। কিন্তু মুঠো খুললে কিছু দেখা যায় না। যে নিজেকে আল্লাহর কাছাকাছি বলে মনে করে তার অবস্থাও তেমনি।
৫. আল্লাহকে উপস্থিত জানা তাঁর প্রতি বিশ্বাস রাখা অপেক্ষা শ্রেয়। কেননা, আল্লাহর উপস্থিতি অন্তরে স্থান লাভ করলে আলস্য সেখানে অবস্থান করতে পারে না। অথচ বিশ্বাস কখনও বা অন্তরে বিরাজ করে, কখনও করে না। আল্লাহকে যিনি ধারণ করেন তিনি সর্বদা আল্লাহর দরবারে, আর বিশ্বাসী ব্যক্তি যেন ঐ দরবারের দরজায় অবস্থান করেন।
৬. ধন পাওয়া যায় বিদ্যায়, গৌরব দারিদ্র্য, সুখ সংসারত্যাগে, অন্যের দোষ খোঁজ না করে চুপ করে থাকাতে এবং নিবিড় শান্তি দুনিয়ার প্রতি নিরাশ হওয়াতে নিহিত আছে।
৭. তোমরা কী ধারণা কর, আমার মৃত্যু তোমাদের মৃত্যুর মতো হবে? তোমাদের যেমন রোগ ব্যাধি এবং তোমাদের সেবা-শুশ্রূষা করতে আসে, আমারও ঐরকম অবস্থা হবে? তা কখনই নয়। আমাকে তিনি ডাক দেওয়া মাত্র আমি চলে যাব।
একদিন তিনি পথ চলেছেন। হঠাৎ বলে উঠলেন। লাব্বাইক আমি হাজির। আর এ কথা বলে নিজের মাথা মাটিতে স্থাপন করলেন। অর্থাৎ শুয়ে গেলেন। হযরত শেখ আবুল হুসাইন (রঃ)
বলেন, তখন আমি তাকে বললাম, কালেমা শাহাদাত পাঠ করুন। তিনি মৃদু হেসে বললেন, তুমি আমাকে কালেমা পাঠ করতে বলছ! আমি তাঁর সম্মানের কসম করে বলছি, তার ও আমার মধ্যে এখন সম্মানের পর্দা ছাড়া আর কোন পর্দা নেই। বলতে বলতেই তাঁর শেষ নিঃশ্বাস বেরিয়ে গেল।
আর আবুল হুসাইন (রঃ) অনুতপ্ত স্বরে বললেন, হায়! আমার মতো অতি তুচ্ছের পক্ষে আল্লাহর এক খাস বন্ধুকে কালেমার তালকিন দিতে যাওয়া ধৃষ্টতার কথা। আবুল হুসাইন (রঃ) কাঁদতে শুরু করলেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া