হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (রাঃ) -এর ৬ পর্ব

হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (রাঃ) -এর ৫ পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

একবার ওয়াজ-নসীহতের সময় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ

“কিয়ামতের দিন সকল মানুষ নগ্ন অবস্থায় উঠবে।”

আয়িশা (রাঃ)-এর মনে খটকা লাগলো। তিনি বলে উঠলেনঃ

“ইয়া রাসূলুল্লাহ! নারী-পুরুষ এক সঙ্গে উঠবে। তাহলে একে অপরের প্রতি কি দৃষ্টি পড়বে না?”

রাসূল (সাঃ) বললেনঃ

“সময়টা হবে অতি ভয়ংকর। অর্থাৎ একজনের অন্যজনের ব্যাপারে কোনো খবরই থাকবে না।”

একদিন আয়িশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন,

“কাফির-মুশরিকরা যে ভালো কাজ করে, তার সাওয়াব তারা পাবে কি?”

আবদুল্লাহ ইবন জাদ‘আন নামে মক্কায় একজন সৎ স্বভাব ও কোমল অন্তরের মুশরিক ছিলেন। তিনি ইসলাম-পূর্ব যুগে কুরাইশদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-মীমাংসার উদ্দেশ্যে কুরাইশ নেতৃবৃন্দকে একটি বৈঠকে সমবেত করতেন। তাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ছিলেন।

আয়িশা (রাঃ) প্রশ্ন করলেনঃ

“ইয়া রাসূলুল্লাহ! আবদুল্লাহ ইবন জাদ‘আন জাহিলী যুগে মানুষের সাথে সদয় ব্যবহার করতো। দরিদ্র ও অনাহার ক্লিষ্টদের আহার করাতো। তার এ কাজ কি উপকারে আসবে না?”

রাসূল (সাঃ) জবাব দিলেনঃ

“না, আয়িশা। সে কখনো একথা বলেনি—‘হে আল্লাহ! কিয়ামতের দিন তুমি আমাকে ক্ষমা করো।’”

জিহাদ ইসলামের একটি অন্যতম ফরয। আয়িশা (রাঃ)-এর ধারণা ছিল, অন্য ফরযের ক্ষেত্রে যেমন নারী-পুরুষের কোনো প্রভেদ নেই, তেমনি এ ক্ষেত্রে ও তা হবে। একদিন তিনি রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) প্রশ্ন করলেন এবং উত্তর পেলেনঃ

“হজ্জ হলো নারীদের জিহাদ।”

আর একদিন আয়িশা (রাঃ) প্রশ্ন করলেনঃ

“ইয়া রাসূলুল্লাহ! জিহাদ হচ্ছে সর্বোত্তম আমল। আমরা নারীরা কি জিহাদ করবো না?”

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ

“না। তবে সর্বোত্তম জিহাদ হচ্ছে হজ্জে মাবরূর।”

বিয়েতে বর-কনে উভয়ের সম্মতি থাকা একটি শর্ত। কুমারী মেয়েরা অনেক সময় লজ্জায় মুখে সম্মতি প্রকাশ করতে পারে না। এ কারণে আয়িশা (রাঃ) একদিন প্রশ্ন করলেনঃ

“ইয়া রাসূলুল্লাহ! বিয়েতে তো মেয়ের সম্মতি প্রয়োজন।”

রাসূল (সাঃ) বললেনঃ

“হ্যাঁ, প্রয়োজন।”

আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ

“মেয়েরা তো লজ্জায় চুপ থাকে।”

রাসূল (সাঃ) বললেনঃ

“তার চুপ থাকাই সম্মতি।”

একদিন রাসূল (সাঃ) তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের পর বিতর না পড়েই বিশ্রামের জন্য শুয়ে যেতে ইচ্ছা করলেন। আয়িশা (রাঃ) বলে উঠলেনঃ

“ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি বিতর না পড়েই শুয়ে যাচ্ছেন?”

রাসূল (সাঃ) বললেনঃ

“আমার চোখ তো ঘুমায়, কিন্তু অন্তর ঘুমায় না।”

বাহ্যত আয়িশার (রাঃ) এ ধরনের প্রশ্ন বেয়াদবী বলে মনে হতে পারে। কিন্তু তিনি সাহস দেখাননি হলে উম্মতে মুহাম্মাদী নুবুওয়াতের গূঢ় রহস্য থেকে অজ্ঞ থেকে যেত।

ইসলামে প্রতিবেশীর বহু অধিকারের কথা এসেছে। কিন্তু যদি প্রতিবেশী একাধিক হয়, তাহলে কাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে? একদিন আয়িশা (রাঃ) প্রশ্ন করলেন।

রাসূল (সাঃ) জবাব দিলেনঃ

“যে প্রতিবেশীর দরজা তোমার ঘরের কাছে অধিক নিকটবর্তী, তাকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে।”

একবার রাসূল (সাঃ) বললেনঃ

“যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ পছন্দ করে, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর যে আল্লাহর সাক্ষাৎ পছন্দ করে না, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন না।”

আয়িশা (রাঃ) প্রশ্ন করলেনঃ

“ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের মধ্যে তো কেউ মৃত্যুকে পছন্দ করে না?”

রাসূল (সাঃ) বললেনঃ

“আমার কথার এই অর্থ নয়। অর্থ হলো, মুমিন ব্যক্তি যখন আল্লাহর রহমত, রিজ্জি ও জান্নাতের অবস্থার কথা শোনে, তখন তার অন্তর আল্লাহর জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে। আল্লাহও তার আগমনের প্রতীক্ষায় থাকেন। আর কাফির ব্যক্তি যখন আল্লাহর আজাব ও অসন্তুষ্টির কথা শোনে, তখন সে আল্লাহর সামনে যেতে অপছন্দ করে। আল্লাহও তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন।”

একবার এক ব্যক্তি যখন রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সাথে সাক্ষাৎ করতে এলো, তিনি অনুমতি দিয়ে বললেনঃ

“তাকে আসতে দাও। সে তার গোত্রের খুব খারাপ লোক।”

লোকটি এসে বসলো। রাসূল (সাঃ) অত্যন্ত ধৈর্য, মনযোগ ও আন্তরিকতার সঙ্গে তার সাথে কথা বললেন। আয়িশা (রাঃ) খুব অবাক হলেন। লোকটি চলে গেলে তিনি বললেনঃ

“ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি তো লোকটিকে ভালো জানতেন না। কিন্তু সে যখন এলো, তার সাথে এমন আন্তরিকতা ও নম্রভাবে কথা বললেন।”

রাসূল (সাঃ) বললেনঃ

“আয়িশা! সবচেয়ে খারাপ মানুষ হলো ঐ ব্যক্তি যার ভয়ে মানুষ তার সাথে মেলামেশা ছেড়ে দেয়।”

একবার এক ব্যক্তি এসে কিছু সাহায্য চাইলো। হযরত আয়িশার (রাঃ) ইঙ্গিতে দাসীরা কিছু জিনিস দিতে চললেন।

রাসূল (সাঃ) বললেনঃ

“আয়িশা! গুনে গুনে দিবে না। তাহলে আল্লাহও তোমাকে গুনে গুনে দিবেন। আর একটি টুকরাও যদি থাকে, ভিক্ষুককে তাই দিয়ে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। যদি সেই একজন ক্ষুধার্ত মানুষ খায়, তার পেট ভরে যাবে। এর থেকে বড় কোনো উপকার হতে পারে কি?”

হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (রাঃ) -এর ৭ পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!