হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (রাঃ) -এর ১২ পর্ব পড়তে ক্লিক করুন
গৃহ অভ্যন্তরে স্বামী-স্ত্রীর দীনী জীবন
হযরত ‘আয়িশার (রাঃ) ঘরটি ছিল নবীর আবাসস্থল। সেখানে ধন-দৌলতের কোন ছোঁয়া ছিল না। পার্থিব ঐশ্বর্যের প্রতি তাঁদের কোনো আকর্ষণ বা পরোয়া ছিল না। হযরত ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন ঘরে আসতেন, তখন একটু উঁচু গলায় বার বার নিম্নোক্ত কথা উচ্চারণ করতেনঃ
আরবি হবে:
“আদম সন্তানদের মালিকানায় যদি ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ দুইটি উপত্যকা থাকে, তাহলে সে তৃতীয়টির লোভ করবে। তার লোভের মুখ শুধুমাত্র মাটিই ভরতে পারে। আল্লাহ বলেন, ধন-সম্পদ আমি নামায কায়েম এবং যাকাত দানের জন্য সৃষ্টি করেছি। যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, আল্লাহও তার দিকে ফিরে আসেন।”
মানুষের লোভের শেষ নেই, এবং ধন-সম্পদের মূল উদ্দেশ্য কি তা স্মরণ করিয়ে দেওয়াই ছিল তাঁর আসল লক্ষ্য।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নামায আদায়ের পর ঘরে আসতেন, মিসওয়াক করে তাজ্জুদের জন্য প্রস্তুতি নিতেন। মাঝ রাতে জেগে তাজ্জুদ নামায আদায় করতেন। রাতে শেষ পর্যন্ত হযরত ‘আয়িশাকে (রাঃ) জাগিয়ে দিতেন। তিনি উঠে স্বামীর সাথে নামাযে অংশগ্রহণ করতেন। সবশেষে বিতর নামায আদায় করতেন। সুবহে সাদিকের সময়, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ফজরের সুন্নাত আদায় করে কিছুক্ষণ শুয়ে বিশ্রাম নিতেন এবং হযরত ‘আয়িশার (রাঃ) সঙ্গে কিছু কথা বলতেন। তারপর ফজরের ফরয আদায়ের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হতেন।
কখনো কখনো সারা রাত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও হযরত ‘আয়িশা (রাঃ) আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগীতে কাটাতেন। রাসূল (সাঃ) ইমাম হতেন, হযরত ‘আয়িশা (রাঃ) মুতাকাদ্দী। কুসূফ ও খুসূক (সূর্য বা চন্দ্র গ্রহণের সময়) নামাযের সময় রাসূল (সাঃ) দাঁড়ালে তিনি ও দাঁড়াতেন। রাসূল (সাঃ) মসজিদে জামা‘আতের ইমামতি করতেন, আর হযরত ‘আয়িশা (রাঃ) ঘরে ইকতিদা করতেন।
পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও তাহাজ্জুদ ছাড়াও হযরত ‘আয়িশা (রাঃ) নিয়মিত চাশতের নামায পড়তেন। প্রায়ই রোযা রাখতেন। মাঝে মাঝে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে একসাথে রোযা পালন করতেন। রমজানের শেষ দশদিনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মসজিদে ইতিকাফ করতেন। হযরত ‘আয়িশাও (রাঃ) এতে শরিক হতেন। মসজিদের আঙ্গিনায় তাঁবু টানিয়ে ইতিকাফের জন্য ঘিরে নিতেন। ফজরের নামাযের পর রাসূল (সাঃ) কিছু সময়ের জন্য সেখানে আসতেন।
হিজরী ১১ সালে হযরত ‘আয়িশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহর (সাঃ) বিদায় হজ্জের সফরসঙ্গী হন। হজ্জ ও উমরার নিয়তে ছিলেন কনের অবস্থায়। কিন্তু স্বাভাবিক নারী প্রকৃতির কারণে যথাসময়ে তাওয়াফ সম্পূর্ণ করতে পারেননি। এতে তিনি দারুণ কষ্ট অনুভব করে কাঁদতে শুরু করেন।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বাইরে থেকে এসে কাঁদতে দেখে কারণ জিজ্ঞাসা করলেন এবং তাঁকে করণীয় মাসায়ার (ধার্য্য) অনুযায়ী বাতলে দিলেন। এরপর হযরত ‘আয়িশা (রাঃ) ভাই হযরত ‘আবদুর রহমান ইবন আবী বকর (রাঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে অসমাপ্ত আবশ্যকীয় কাজ সম্পন্ন করলেন।
আমাদের মতো সাধারণ মানুষের মনে এমন প্রশ্ন দেখা দিতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) গৃহঅভ্যন্তরে আরাম ও বিম্রামের সময় রিসালাতের দায়িত্ব পালনে একটু শিথিলতা (নাউজুবিল্লাহ) দেখাতেন কি? এমন ধারণা সম্পূর্ণ অমূলক। পূর্বেই আমরা হযরত ‘আয়িশা (রাঃ)-এর মন্তব্য উল্লেখ করেছি—“রাসূল (সাঃ) আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন। আজানের ধ্বনি কানে যেতেই উঠে দাঁড়াতেন। তখন মনে হতো, তিনি যেন আমাদের চেনেনই না।”
একবার হযরত ‘আয়িশা (রাঃ) খুব চেষ্টা করে রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) খুশী করার জন্য ছবিওয়ালা পর্দা টানালেন। কিন্তু রাসূল (সাঃ) সন্তুষ্টির পরিবর্তে বিরক্তি প্রকাশ করলেন।
আরেকবার হযরত ‘আয়িশা (রাঃ) এক ইহুদীকে—যিনি তাঁকে মৃত্যুর অভিশাপ দিয়েছিলেন—কঠোর ভাষায় প্রত্যুত্তর করলেন। তখন রাসূল (সাঃ) সঙ্গে সঙ্গে বললেনঃ
“আয়িশা! আল্লাহ দয়াবান। তিনি দয়া ও কোমলতা পছন্দ করেন।”
একবার হযরত ‘আয়িশা (রাঃ) নিজ হাতে আটা পিষে রুটি বানিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। সেই সুযোগে প্রতিবেশীর একটি ছাগল ঘরে ঢুকে সব খেয়ে ফেলল। হযরত ‘আয়িশা (রাঃ) দৌড়ে ছাগলটি ধরে কয়েক ঘা বসাতে গেলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বাধা দিয়ে বললেনঃ
“আয়িশা! প্রতিবেশীকে কষ্ট দিও না।”
হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (রাঃ) -এর ১৪ পর্ব পড়তে ক্লিক করুন
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।