হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (রাঃ) -এর ১২ পর্ব

হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (রাঃ) -এর ১১ পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

স্বামীর আনুগত্য ও অনুসরণ

ইসলামে স্ত্রীর অন্যতম গুণ হলো স্বামীর আনুগত্য ও অনুসরণ করা। হযরত ‘আয়িশা (রাঃ) স্বামী সাহচর্যের দীর্ঘ নয় বছরে তাঁর কোন নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করেননি; শারইঙ্গিতেও যদি তিনি কোন অপছন্দের ইঙ্গিত দিতেন, তাও ‘আয়িশা (রাঃ) সঙ্গে সঙ্গে তা পরিহার করতেন।

একবার তিনি অতি যতœসহ দরজায় একটি ছবিওয়ালা পর্দা টানালেন। রাসূল (সাঃ) ঘরে ঢুকতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় তাঁর দৃষ্টি পর্দার প্রতি পড়ল। সাথে সাথে তাঁর চেহারা মুবারক বিবর্ণ হয়ে গেল। এ দৃশ্য দেখে ‘আয়িশা (রাঃ) সবকিছু বুঝে ফেললেন। তিনি বললেন,
“আমায় ক্ষমা করুন! আমার অপরাধ কোথায় বলবেন কি?”

রাসূল (সাঃ) বললেন,
“যে ঘরে ছবি থাকে, সেখানে ফেরেশতা প্রবেশ করে না।”

এ কথা শুনে ‘আয়িশা (রাঃ) পর্দাটি ছিঁড়ে ফেললেন।

স্বামীর জীবদ্দশায় বহু স্ত্রীই স্বামীর পূর্ণ আনুগত্য ও অনুসরণ করে থাকে। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর হযরত ‘আয়িশা (রাঃ) যে পরিমাণ স্বামীর আনুগত্য এবং হুকুম পূরণ করেছেন, তার তুলনা পাওয়া কঠিন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ইনতিকালের পর তিনি দীর্ঘকাল জীবিত ছিলেন। এই দীর্ঘ সময়ে স্বামীর প্রতিটি আদেশ ও ইচ্ছা তেমনিভাবে পালন ও পূরণ করেছেন, যেমন তাঁর জীবনকালে করতেন।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হযরত ‘আয়িশাকে (রাঃ) দানশীলতার শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি এই গুণটি অতি নিষ্ঠার সাথে ধারণ করতেন। একবার তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট জিহাদের অনুমতি চাইলেন। রাসূল (সাঃ) বললেন,
“নারীদের জন্য জিহাদ হলো হজ্জ।”

এই বাণী শোনার পর থেকে তিনি এমন কঠোরতার সাথে তা পালন করতে থাকেন যে, তাঁর জীবনের খুব কম বছরই হজ্জ ছাড়া অতিবাহিত হয়েছে।

একবার এক ব্যক্তি কিছু কাপড় ও কিছু নগদ অর্থ হযরত ‘আয়িশার (রাঃ) নিকট পাঠালেন। তিনি প্রথমে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তা ফেরত পাঠালেন। পরে আবার লোকটিকে ডেকে এনে তা গ্রহণ করলেন এবং বললেন,
“আমার একটি কথা মনে এসেছে।”

একবার ‘আরাফাতের দিনে হযরত ‘আয়িশা (রাঃ) রোযা রাখলেন। প্রচণ্ড গরমের কারণে মাথায় পানির ছিটা দিচ্ছিলেন। একজন তাকে রোযা ভেঙে ফেলার পরামর্শ দিলেন। তিনি বললেন,
“আমি যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট থেকে শুনেছি যে, আরাফাতের দিনে রোযা রাখলে সারা বছরের পাপ মোচন হয়ে যায়, তখন তা কিভাবে ভাঙতে পারি?”

হযরত ‘আয়িশা (রাঃ) সারা জীবন রাসূলুল্লাহর (সাঃ) চাশতের নামায পড়তে দেখে সেই নামায নিয়মিত পালন করতেন। তিনি বলতেন,
“আমার পিতাও যদি কবর থেকে উঠে এসে আমাকে এই নামায পড়তে নিষেধ করেন, আমি তাঁর কথা শুনব না।”

একবার এক মহিলা হযরত ‘আয়িশাকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন,
“মেহেদী লাগানো কেমন?”

‘আয়িশা (রাঃ) উত্তর দিলেন,
“আমার প্রিয়তমের মেহেদীর রং খুব পছন্দ ছিল, তবে গন্ধ পছন্দ ছিল না। এটি হারাম নয়। ইচ্ছা করলে তুমি লাগাতে পারো।”

হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (রাঃ) -এর ১৩ পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

সম্পর্কিত পোস্ট

দুঃখিত!