হযরত আবূ বকর (রাঃ) এর জীবনের দুটি ঘটনা
রাগিব থেকে বর্ণিত। একদা হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এর সম্মুখে হযরত আবূ বকর এর প্রসঙ্গ উত্থাপিত হলে হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এরুপ করতে করতে আক্ষেপ করে বললেন, হায়! আমার সারা জীবনের ইবাদত যদি হযরত আবূ বকর (রাঃ) এর একদিন ও এক রাতের ইবাদতের সমান হত।
এখানে হযরত আবূ বকর (রাঃ) এর নির্দিষ্ট একটি দিন ও একটি রাতের কথা বলা হয়েছে।
সেই নির্দিষ্ট রাত হলঃ হযরত আবূ বকর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে থেকে হিজরত করে মদীনার পথে ছুর পর্বতের গুহায় যে রাতটি যাপন করেছিল। বিস্তারিত ঘটনা হলো মদীনায় হিজরতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ঐ গুহার সম্মুখে হাজির হওয়ার পর হযরত আবূ বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বললেন, আপনি গুহার বাহিরে অপেক্ষা করুন এ ফাঁকে আমি গুহার ভিতরটা পরিষ্কার করে আসি। যেন, গুহার অভ্যন্তরে কষ্টদায়ক যা কিছু আছে তা থেকে আপনি নিরাপদ থাকেন এবং কষ্ট যা হওয়ার তা যেন আমারই হয়।
হযরত আবূ বকর (রাঃ) গুহার ভেতর প্রবেশ করে ভালভাবে গুহা পরিষ্কার করলেন এবং নিজের লুঙ্গি ছিড়ে গর্তের মুখগুলো বন্ধ করে দিলেন। কিন্তু কাপড়ের অভাবে দুটি গর্তের মুখ খোলায় রয়ে গেল। হযরত আবূ বকর (রাঃ) নিজের দু পায়ে দুটি গর্তের মুখ চাপা দিয়ে রাসূলুল্লাহ স (সাঃ) ভেতরে আসার আহবান জানালেন , গুহায় প্রবেশ করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হযরত আবূ বকর (রাঃ) এর উরুতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। ইত্যবসরে হযরত আবূ বকর (রাঃ) এর এক পায়ে গর্তের ভিরত থেকে বিশধর সাপ দংশন করলেন। কিন্তু রাসূলু এর নিদ্রার ব্যাঘাত সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় তিনি এক্টূও নড়াচড়া করলেন না। এদিকে বিষের তীব্র যন্ত্রনায় তার অল্পক্ষনের ভিতরে চোখে পানি গড়িয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর এর পবিত্র চেহারার পড়লে তার নিদ্রা ভঙ্গ হলো। বিস্তারিত বিবরণ শুনে তিনি হযরত আবূ বকর (রাঃ) এর ক্ষতস্থানে মুখের লালা লাগিয়ে দেয়ার সাথে সাথে তার কষ্ট দূর হয়ে গেল।
হযরত আবূ বকর (রাঃ) জিবনের অন্তিম সময়ে সেদিনের সেই বিষয়ের প্রতিক্রিয়া পুনরায় অক্রান্ত হন এবং তাতেই নিঃসন্দেহ তার মু’যিযা ছিল। আর হযরত আবূ বকরের জীবনের শেষ ভাগ এসে পুনরায় ঐ বিষের প্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার রহস্য হল – আল্লাহ পাক এ উছিলায় তাঁকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করলেন। এমনি ভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) খায়বার আক্রান্ত বিষের পুনঃপ্রতিক্রিয়া ইন্তেকাল করেছিলেন।
হযরত আবূ বকর (রাঃ) এর জীবনের যেই দিনটির কথা উল্লেখ করেছেন তা হলঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর এক দল বিদ্রোহ জাকাত আদায় করতে অস্বীকার করলে হযরত আবূ বকর (রাঃ) সেদিন ঘোষনা করেছিলেনঃ এমন একটি উটের রশিও কেউ জাকাত দিতে অস্বীকার করে; যা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর যুগে আদায় করা হত, তবে তার বিরুদ্ধে আমি জেহাদ ঘোষনা করব। হযরত ওমর (রাঃ) বলেন, হযরত আবূ বকর (রাঃ) উপরোক্ত ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে আমি তাঁকে কিছুটা শিথিল হওয়ার অনুরোধ করলে তিনি বলেছিলেন, ওমর! অন্ধকার যুগে তুমিতো বেশ কঠোর ছিলে, কিন্তু ইসলামের প্রবেশের পর তুমি এমন শিথিল হচ্ছ কেন? ওহীর আগমন বন্ধ হয়েছে এবং দ্বীনও পূর্ণতা লাভ করেছে। অতঃপর আমার জীবদ্দশাতেই দ্বীনের মধ্যে কমী ও ক্রটি আরম্ভ হবে