হযরত আবু মুহাম্মদ জারীর (রঃ) – পর্ব ১
হযরত আবু মুহাম্মদ জারীর (রঃ) এক শীর্ষস্থানীয় সাধক। তাঁর সম্বন্ধে হযরত জুনায়েদ (রঃ) মন্তব্য করেন, আবু মুহাম্মদ আমার পরে আমার স্থলাভিষিক্ত হবে। বলাবাহুল্য, এই তত্ত্বদর্শী অক্লান্ত সাধক শরীয়ত, মারেফাত ও অন্যান্য শাস্ত্রসমূহে গভীর ব্যুৎপত্তি লাভ করে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী সফল করেছিলেন।
হযরত আবু মুহাম্মদ (রঃ) বাগদাদবাসী ছিলেন। কেবল একটি বছর পবিত্র মক্কা নগরীতে কাটান। সেই একটি বছর কাবার সম্মানে তিনি বিনিদ্র ছিলেন। কারও সঙ্গে কথাবার্তা বলেননি, পা ছড়িয়ে বসেননি। এমনকি কাবা ঘরের দিকে পিঠ রাখেননি। পবিত্র ইচ্ছা ও সৎ উদ্দেশ্যই তাঁকে এত কষ্ট সহ্য করার শক্তি যুগিয়েছিল। কথিত আছে, হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ)- এর ওফাতের পর তিনিই তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। হযরত আবদুল্লাহ তশতরী (রঃ)-এর সঙ্গেও তাঁর সাক্ষাৎ হয়।
হযরত জারীর (রঃ) একবার একটি সাদা বাজ পাখি দেখেন। সেই থেকে চল্লিশ বছর ধরে তিনি শিকার করার চেষ্টায় ছিলেন। কিন্তু বাজটিকেই আর কোনদিনই দেখা যায়নি। একদিন একটা লোক এল তাঁর দরবারে। জীর্ণ-শীর্ণ চেহারা, এলোমেলো চুল। সে তাঁর সঙ্গে আসরের নামাজ পড়ল। তারপর মাথা নিচু করে বসে রইল। মাগরিবের ওয়াক্ত হলে সে মাগরিবের নামাজ পড়ল। আর আগের মতো চুপচাপ বসে রইল। সেদিন বাদশাহ দরবেশগণকে দাওয়াত করেন। লোকটিকে সে কথা বলা হল। কিন্তু তিনি বললেন, আমার তো দরবেশ কিংবা বাদশাহর সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই। তারপর সে জারীর (রঃ)-কে বললেন, আপনি যদি ইচ্ছা করেন, আমার জন্য কিছু হালুয়া আনতে পারেন।
হযরত জারীর (রঃ) তাকে অমুসলিম ভেবে কোন গুরত্ব দিলেন না। কাজেই হালুয়া আনার কোন প্রয়োজনও বোধ করলেন না। দাওয়াত খেয়ে ফিয়ে দেখেন, লোকটি ঐ একইভাবে চুপচাপ বসে আছে। ঐ রাতে হযরত আবু মুহাম্মদ (রঃ) স্বপ্ন দেখলেন, ঐ লোকটির ডানে বামে রাসূল (সাঃ) সহ হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ও হযরত মূসা (আঃ)-সহ কুড়ি হাজার একশ জন নবী ও রাসূল সমবেত হয়েছেন। হযরত আবু মুহাম্মদ (রঃ) যখন রাসূল (সাঃ)-এর কাছে গেলেন, তখন তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আর এর কারণ জিজ্ঞেস করায় বললেন, আমার এক প্রিয় বন্ধু তোমাকে হালুয়া আনতে বলল, অথচ তুমি গ্রাহ্য করলে না।
স্বপ্ন ভেঙ্গে গেল। হযরত জারীর (রঃ) দেখলেন, ঐ লোকটি উঠে চলে যাছে। তিনি তাঁকে ডেকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বললেন। এখনই তোমার জন্য হালুয়া এনে দিচ্ছি। তাঁর কথা শুনে সে বলল- বিশ হাজার একশ জন নবীর সুপারিশের পর এখন আপনার মনে হালুয়া আনার ইচ্ছা হল? এটা আগে হল না কেন? এ কথা বলে সে বাইরে কোথায় যেন চলে গেল। তারপর থেকে তিনি তাঁকে খুঁজছেন। কিন্তু তাঁর দেখা পাচ্ছেন না।
বাগদাদের জামে মসজিদে এক দরাবেশ এবাদত করছিলেন। তাঁর পরনে ছিল একটিই পোশাক। কী শীতে কি গ্রীষ্মে। এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আগে শীত, গ্রীষ্মের জন্য তাঁর নানারকম পোশাক ছিল। নানা রঙ-বে-রঙের পোশাক। তখন এক রাতে তিনি স্বপ্ন দেখেন সুদৃশ্য পোশাক পরিহিত একদল জান্নাতি লোক জান্নাতের মধ্যে খেতে বসেছেন। তিনিও তাঁদের সঙ্গে খেতে বসলেন। হঠাৎ এক ফেরেশতা তাঁকে উঠিয়ে দিলেন। বললেন, তুমি এদের সঙ্গে খানা খাওয়ার উপযুক্ত নও। কারণ, তুমি রকমারি পোশাক ব্যবহার কর। আর এরা সব সময় মাত্র একটি পোশাক পরেন। ঐ স্বপ্ন দেখার পর দরবেশ জীবনে আর দ্বিতীয় জামা গায়ে চড়াননি।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত আবু মুহাম্মদ জারীর (রঃ) – শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন