হযরত আবু বকর সায়দালানী (রঃ)
পারস্যের খোরাসান প্রদেশের অসাধারণ আলোকময় পুরুষ ছিলেন হযরত আবু বকর সায়দালানী (রঃ)। মানুষ তাঁকে সৌভাগ্যের সূর্য ও সাধনার ঝরনা স্বরূপ মনে করতেন। হযরত শিবলী (রঃ)- ও তাঁকে যথেষ্ট সম্মান করতেন। তার মৃত্যু হয় ৪৩০ হিজরী নিশাপুরে। কথিত আছে, তিনি নাকি আশ্চর্য সুদর্শন পুরুষ ছিলেন।
তার কথাগুলি খুবই জ্ঞানগর্ভ ও তত্ত্বপূর্ণ। যথাঃ
১। এ দুনিয়া এক তত্ত্বালয়। প্রত্যেকেই নিজ নিজ দৃষ্টির সূক্ষ্ণতা অনুসারে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করতে পারে। তোমরা আল্লাহর সাহচর্য অবলম্বন কর। তা যদি সম্ভব না হয় তা হলে এমন লোকের সান্নিধ্য অর্জন কর, যারা আল্লাহর বন্ধু। তারা তোমাদের আল্লাহর দরবারে পৌঁছে দেবেন। তোমাদের ইহকাল পরকালের বাসনা পূরণ করতে সক্ষম করবেন।
২। বিদ্বান ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশ পালন করার সঙ্গে সঙ্গে নিজের শিক্ষার আলোকে আধার থেকে দূরে সরে যায়, তবে যে শিক্ষা আল্লাহ থেকে দূরে নিয়ে যায়, সে শিক্ষার প্রতি কখনও ফিরে তাকানো উচিত নয়।
৩। আল্লাহ যত বেশী মখলুক সৃষ্টি করেছেন, তত বেশী তার কাছে পৌছানোর রাস্তাও সৃষ্টি করেছেন। মানুষ নিজ নিজ যোগ্যতা তার যেকোন একটি রাস্তার মাধ্যমে তার দরবারে হাজির হতে পারে।
৪। আল্লাহর তরফ থেকে দাসের দিকে রাস্তা রয়েছে। কিন্তু দাসের তরফ থেকে আল্লাহর দিকে কোন পথ নেই।
৫। আল্লাহর উপর নির্ভর করা, নিজ প্রবৃত্তির ক্রুটির প্রতি লক্ষ্য রাখা এবং আল্লাহর অসীম রহমতের সব সময় স্মরণ রাখা সব লোকের কর্তব্য,
৬। যে লোক শুধু প্রয়োজনে কথা বলে এবং অতিরিক্ত ও মন্দ কথা থেকে বিরত থাকে, সে-ই হল জ্ঞানী।
৭। যার স্বভাব নীরবতা নেই, সে বাচালতা দোষে দুষ্ট।
৮। মুরিদগণের লক্ষ্য হল, নিজের মাযহাব ও তরীকা ছাড়া অন্য মাযহাব ও তরীকত উদার চোখে দেখবে।
৯। দুনিয়ার যাবতীয় বস্তু আমাদের শত্রু আর আল্লাহ প্রাপ্তির পক্ষে পর্দাস্বরূপ।
১০। সৎ সাহস বজায় রাখতে হবে। কেননা, সৎ সাহস সবকিছুর মূল। যেকোন বিরাট কাজ সৎ সাহসের ওপর নির্ভরশীল।
১১। শিষ্যের জীবন হয়েছে রিপুর বিনাশ ও অন্তরাত্মার উজ্জীবনের বস্তু রিপুর মৃত্যু অন্তরাত্মার জীবনস্বরূপ এবং অন্তরাত্মার জীবনই রিপুর মৃত্যুতুল্য হয়।
১২। রিপুর কবল থেকে মুক্তি লাভ করাই হল দাসের জন্য সর্বাপেক্ষা বড় নেয়ামত। কেননা, আল্লাহ ও দাসের মধ্যে রিপুই হল পাঁচিলস্বরূপ। আর যতক্ষঈ না রিপুর মৃত্যু ঘটছে ততক্ষন আল্লাহর হাকীকত বা মূল তত্ত্ব জানা যায় না।
১৩। পারলৌকিক দরজার মধ্যে মৃত্যু হল প্রথম দরজা, যে দরজা ছাড়া আল্লাহর দরবারে উপসস্থিত হওয়া যায় না।
১৪। যে আমলে অহমিকার গন্ধ আছে, তা নিয়ে গর্ব করো না।
হযরত আবু বকর সায়দালানী (রঃ)-এর মৃত্যুর পর তার ভক্ত শিষ্যরা তার কবরের ওপর একখানা পাথর তুলে রাখলেন তার নাম-ধাম পরিচয় লেখে রাখবেন বলে। কিন্তু যতবারই রাখা হল, ততবারই পাথরখানা নিচে পড়ে যায়। এর কারন জানার জন্য শিষ্যরা বিখ্যাত সাধক হযরত আবু আলী দাক্কাক (রঃ) এর শরণাপন্ন হলেন। হযরত দাক্কাক (রঃ) বললেন, জিবিত অবস্থায় তিনি নিজের পরিচয় গোপন রেখেছিলেন। এ জন্য মৃত্যুর পরও আল্লাহ তাঁকে গোপনে রাখতে ইচ্ছা করেন।