হযরত আবু বকর শিবলী (রঃ) – পর্ব ৩
হযরত আবু বকর শিবলী (রঃ) – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ক্রমান্বয়ে বদলে গেলেন তিনি। পরিবর্তিত অবস্থায় হাতে খোলা তরবারি নিয়ে তিনি বলতে লাগলেন, আমার সামনে কেউ যদি আল্লাহ্র নাম উচ্চারণ করে, আমি তার মাথা দু’ফাক করে দেব। লোকে বলতে লাগল, এ কেমন অভিনয়? আল্লাহ্র নাম উচ্চারণ করলে আপনি সোনাদানা দিতেন, আর এখন মাথা কাটতে চাইছেন? তার উত্তরঃ আমার ধারণা ছিল, যারা আল্লাহ্র যিকির করে, তাঁরা তা করে অবশ্যই ভক্তি ও শ্রদ্ধার সঙ্গে। কিন্তু এখন দেখছি, তা নয়। বরং অবহেলা অমনোযোগ ও অভ্যাসবশে তাঁরা আল্লাহ্র নাম মুখে আনে। এর মধ্যে কোন একাগ্রতা বা আন্তরিকতা নেই। অতএব আল্লাহ্র নামের প্রতি এরূপ অবজ্ঞাকারীকে হত্যা করাই শ্রেয় বলে মনে করি। অবশ্য এ সময় কোথাও আল্লাহ্র নাম লিখিত আছে দেখলে তা পরম ভক্তিভরে চুমু দিতেন।
অতঃপর তিনি এক অদৃশ্য বাণী শোনেন। তাঁকে বলা হয়, আল্লাহ্র নামের প্রতি আসক্ত না থেকে তিনি যেন আল্লাহ্র অনুসন্ধান করেন। আর এই বাণী তাঁকে প্রেমোন্মত্ত করে তুলল। তিনি সমুদ্রে ঝাঁপ দিলেন। সমুদ্র তাঁকে গ্রহণ করল না। সমুদ্রের ঢেউ তাঁকে তুলে দিয়ে গেল তীরে। আগুন ঝাঁপ দিলেন। আগুন তাঁকে দগ্ধ করল না। আত্মনাশের বহু চেষ্টা তিনি করলেন। আল্লাহ্ তা হতে দিলেন না। তাতে তার অস্তিরতা আরও বেড়ে গেল। তিনি চিৎকার করে বলতে লাগলেন, পানি, আগুন, পাহাড়, হিংস্র পশু কেউ আমাকে হত্যা করল না। পরিতাপের বিষয়!
অদৃশ্য উত্তর এলঃ স্বয়ং আল্লাহ্ যাকে হত্যা করেছেন সে আবার অন্যদের দ্বারা হত্যা হবে কিভাবে?
আত্মনাশের চেষ্টা করে তিনি ব্যর্থ হলেন বটে; কিন্তু তাঁর ব্যাকুলতা বৃদ্ধি পেল চরম। আর মানুষের কাছে তিনি পাগল বলে সাব্যস্ত হলেন। লোকে তাঁকে কেশ কয়েকবার শেকল দিয়ে বেঁধে রাখল। দেয়া হল পাগলা গারদে। তিনি কিন্তু বলতেন, আমি তোমাদের কাছে পাগল হতে পারি, কিন্তু তোমরাও আমার নিকট পাগল ছাড়া আর কিছু নও।
পাগলা গারদে কিছু লোক তাঁর সাথে দেখা করতে গেলে তিনি বললেন, তোমরা কে? তাঁরা বলল, আমরা তোমার বন্ধু। তখন তিনি তাঁদের দিকে পাথর ছুঁড়তে উদ্যত হলেন। তাঁরা ছুটে পালাল। তাঁদের উদ্দেশ্যে তাঁর মন্তব্যঃ মিথ্যাবাদীর দল। আমার সঙ্গে বন্ধুত্বের কথা বলছে, অথচ আমার থেকে সামান্য কষ্ট স্বীকার করতে প্রস্তুত নয়।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া