হযরত আবু বকর শিবলী (রঃ) – পর্ব ২
হযরত আবু বকর শিবলী (রঃ) – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ)-এর দরবারে গিয়ে তিনি বলেন, আপানার দরবারে প্রেমের যে মুক্তা রয়েছে, তা আমাকে দান করুন, না হয় বিক্রি করুন। হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ)- জবাব দেন, যদি বিক্রি করি তা কেনার অর্থ নেই আপনার। আর যদি দান করি, তবে বিনা মূল্যে পেয়েছেন বলে আপনি তার কদর করবেন না। তাই বলি, বীরের মতো সাহস সঞ্চার করে তওহীদের সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। ধৈর্য ও চেষ্টার ফলে হয়ত তা আপনার করায়ত্ত হবে।
তা হলে, এখন আমাকে কী করতে হবে? হযরত শিবলী (রঃ) জিজ্ঞেস করলেন। হযরত জুনায়েদ (রঃ) তাঁকে গন্ধকের ব্যবসা করতে বললেন। সে কাজ সম্পন্ন হলে তাঁকে একবছর দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করতে বললেন। হযরত শিবলী (রঃ) তাই করলেন। ভিক্ষুক বেশে বাগদাদের পথে পথে ঘুরে বেড়ালেন। কিন্তু কেউ তাঁকে কিছু দিল না।
একবছর পরে ফিরে এসে তিনি হযরত জুনায়েদ (রঃ)-কে সে কথা বললেন। ভিক্ষুক বেশে বাগদাদের পথে ঘুড়ে বেড়ালেন। কিন্তু কেউ তাঁকে কিছু দিল না। একবছর পরে ফিরে এসে তিনি হযরত জুনায়েদ (রঃ)-কে সে কথা বললেন। তাঁর কথা শুনে তিনি বললেন, এখন তো বুঝতে পারলেন, সৃষ্টির কাছে আপনার দাম কতখানি? তাই বলি, সৃষ্টির প্রতি আর আসক্ত হবেন না। সৃষ্টির কোন বস্তুকেও গুরুত্ব দেবেন না। আপনি এক সময় শাসক ছিলেন। সুতরাং মানুষের প্রতি কিছু অন্যায়-অবিচার হতে পারে। অতএব, আপনি জনগনের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে আসুন।
হযরত শিবলী (রঃ) তাও করলেন। কেবল এক বাড়িতে কেউ না থাকায় ক্ষমা চাওয়া হল না। তবে এর বদলে তিনি গরীব-দুঃখীদের এক লাখ দিরহাম দান করলেন। কিন্তু তবুও তাঁর মন পরিষ্কার হল না। আর এ কথা তিনি নিবেদন করলেন হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ)-কে। হযরত জুনায়েদ (রঃ) বললেন, আপনার অন্তরে এখনও পদমর্যাদার স্পৃহা রয়েছে। অতএব, আরও একবছর ভিক্ষা করতে হবে। তিনিও ভিক্ষা করতে শুরু করলেন। প্রতিদিন যা পান, তুলে দেন হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ)-এর হাতে।
আর বাগদাদী (রঃ) তা বিলিয়ে দেন তাঁর আশ্রিত শিষ্যদের। হযরত শিবলী (রঃ) রয়ে যান অভুক্ত। এভাবে আরও একবছর কেটে গেল। এবার হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) তাঁকে তাঁর দরবারে উপযুক্ত বলে ঘোষণা করলেন। আদেশ দিলেন, তাঁকে দরবারের দরবেশদের পরিচর্যা করতে হবে। হযরত শিবলী (রঃ) তাও করলেন। হযরত জুনায়েদ (রঃ) এবার জিজ্ঞেস করলেন, এখন আমাকে সবচেয়ে অধম ও হীন মনে হচ্ছে। এ উত্তর শুনে হযরত জুনায়েদ বাগদাদী (রঃ) বললেন, এবার আপনার ঈমান পরিণত হয়েছে।
শুরু হল দরবেশী জীবন। শুরুতে কেউ যদি তাঁর সামনে আল্লাহ্ নামটি উচ্চারণ করত, তো চিনি দিয়ে তিনি তাঁর মুখ ভর্তি করে দিতেন। শিশুদের মধ্যে শিরণী বন্টন করে দিয়ে বলতেন, তোমরা বেশী করে আল্লাহ্র যিকির কর। পরে অবস্থা এমন হল যে, আল্লাহ্র নামোচ্চারণকারীদের সোনা, রূপা ও টাকাকড়ি দান করতে শুরু করলেন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া