হযরত আবু বকর (রাঃ) যুদ্ধে অংশগ্রহণ – হুদায়বিয়ার সন্ধি

ঐ বছরই অর্থাৎ হিজরী ষষ্ঠ সালে হযরত রাসূলে কারীম (সাঃ) চৌদ্দশত সাহাবী সাথে নিয়ে কাবা শরীফ জিয়ারত করতে যান। মক্কার কাছে পৌছে জানা গেল যে, কুরাইশরা তাঁদের কাবায় জিয়ারত করতে দেবে না। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এ খবর শুনে সাহাবাগণের সাথে পরামর্শ করতে বসলেন।

হযরত আবু বকর (রাঃ) আরজ করেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আপনি নরহত্যা বা রক্তপাত করার উদ্দেশ্যে আসেন নি। বরং খানায়ে কাবা জিয়ারত করতে রওয়ানা হয়েছেন। তাই এগিয়ে চলুন! যদি কেউ বাধা দেয় তাহলে আমরা লড়বো।”

মুসলমানদের প্রস্তুতির খবর পেয়ে কুরাইশরা কিছুটা নরম হয়ে আসে। তারা উরুয়া বিন মাসউদকে আপোস করার জন্য দুত হিসেবে প্রেরিত করেন। সে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সাথে আলোচনা প্রশঙ্গে বলল, আমি তোমারদের সাথে এমন অনেক লোক দেখতে পাচ্ছি যে, বিপদের সময় তাঁরা তোমাকে ছেড়ে পালিয়ে যাবে।

উরুয়ার মন্তব্য সাহাবায়ে কেরামদের মনে তীক্ষ্ণ খোঁচা স্বরূপ বিঁধল। হযরত আবু বকর (রাঃ)  এর মতো গম্ভীর স্বভাবের লোকও উত্তপ্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি করে বুঝলে যে, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)  কে ছেড়ে যাব?”

উরুয়া পরিচয়হীনতার ভান করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ লোকটি কে?’

অন্য একজন বলল, ‘ইনি হলেন হযরত আবু বকর (রাঃ)।’

উরুয়া তাঁর প্রতি তাকিয়ে বলল, “আল্লাহর কসম! তুমি পূর্বে আমার যে উপকার করেছিলে, সেজন্য তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ, না হলে আমি তোমার প্রশ্নের কঠোর উত্তর দিতাম।”

হুদায়বিয়ার যে সন্ধি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল সে অনুসারে কাফিররাই বাহ্যত অধিক সুভিধা লাভ করেছিল। সে জন্য হযরত ওমর (রাঃ) অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে হযরত আবু বকর (রাঃ)  কে জিজ্ঞেস করেন, “এতটা নতি স্বীকার করে কেন সন্ধি করা হচ্ছে?”

হযরত আবু বকর (রাঃ) নবুওতের রহস্য সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তিনি বলেন, “হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল। তাঁর অবাধ্য হওয়া অবৈধ। তিনি সর্বদাই আমাদের পথ প্রদর্শক ও সাহায্যকারী।”

এ চুক্তির পর মক্কার কুরাইশদের সম্পর্কে কতকটা নিশ্চিত হয়ে সপ্তম হিজরিতে খায়বারে সৈন্যদল প্রেরন করা হয়েছিল। এ অভিযান প্রথমে হযরত আবু বকর (রাঃ)  এর নেতৃত্বেই পরিচালিত হয়। তাই খায়বার বিজয়ের কৃতিত্ব তিনিই লাভ করেছিলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) ঐ বছরই শাবান মাসে বনি কালবের দমন কাজে নিয়োজিত হন এবং সেখান থেকে সাফল্য অর্জন করে ফিরে আসার পর বনি ফাজারাহ গোত্রকে দমন করার জন্য একটি সৈন্যদলসহ রওনা হন। এ অভিযান শেষে অনেক কয়েদী এবং প্রচুর পরিমাণ গনীমতের সম্পদ নিয়ে ফিরে আসেন।

মক্কার কুরাইশদের চুক্তিভঙ্গের জন্য হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) অষ্টম হিজরীতে দশ হাজার সৈন্য নিয়ে মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং বিজয় শেষে মক্কায় প্রবেশ করেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) সে সময় হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)  এর সাথেই ছিলেন। মক্কায় পৌছানোর পর হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁর পিতা আবু কোহাফা উসমান ইবনে আমেরকে নবী করীম (সাঃ)  এর মজলিশে হাজির করেন। হযরত রাসূল (সাঃ) অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে বৃদ্ধের বুকে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে তাঁকে ঈমানের আলো দান করেন।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।