১. মামুলি পোশাক পরা, প্রবৃত্তি দমন করা, দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি ও সুন্নাতের অনুসরণ এই হল তাসাউফ। আর সূফী হলেন তিনি, যাকে আল্লাহ তাঁর দরবার থেকে শতবার বহিষ্কৃতি করলেও তিনি আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন না।
২. যে মুরিদ পাঁচদিনের ক্ষুধা সহ্য করতে পারে না, তাকে বাজারে ভিক্ষা করতে পাঠানো উচিত।
৩. আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় না করাই হল প্রকৃত ভয়।
৪. নিজেকে সম্পূর্ণরূপে প্রেমিকের ওপর ছেড়ে দেয়াকেই বলে প্রেম।
৫. যে বিশ্বাস একমাত্র আল্লাহকেই মহান বলে চোখের সামনে প্রতীয়মান করায়, আর তিনি ছাড়া সব কিছুকে হেয় বলে দেখা, সে বিশ্বাসই প্রকৃত উপকারী।
৬. আল্লাহ সাহসীদের পছন্দ করেন। কেননা সাহসী দাসরাও তাঁকে খুব ভালোবাসে।
৭. হৃদয় যখন দুনিয়ার প্রেম ও মোহ থেকে মুক্ত, তখন আল্লাহর মারেফাতের উদয় হয়। তখন প্রবৃত্তির দ্বারা সেবা ও আত্মার দ্বারা আল্লাহর তত্ত্ব প্রকাশ পায়।
৮. মানুষের বিপদ আসে তিনটি বস্তু থেকে। যথাঃ (ক) স্বাভাবিক রোগ, (খ) অভ্যাসগত রোগ, (গ) অসৎ সঙ্গজনিত রোগ। সন্দেহযুক্ত অবৈধ খাদ্য থেকে স্বাভাবিক রোগ হয়। নিষিদ্ধ ও ত্রুটিযুক্ত বস্তুর প্রতি দৃষ্টি ও পরনিন্দা শোনার অভ্যাস থেকে অভ্যাসগত রোগের উৎপত্তি। আর রিপুর দাসত্ব থেকে অসৎ সঙ্গজনিত রোগ দেখা দেয়।
৯. মনের দৃঢ়তায় হল তাওহীদ। আর ইয়াকীনে কালেমার অর্থ হল আল্লাহকে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী মনে করা।
১০. নবী-রাসূলের প্রতি যেমন মোজেজা প্রকাশ করার আদেশ আছে। তাপস দরবেশগণের প্রতি তেমনি অলৌকিক ক্ষমতা গোপন রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
১১. আমি সেমা বা কাওয়ালী পছন্দ করি না এ জন্য যে, ওর মধ্যে অনেক আপদ রয়ে গেছে।
১২. লজ্জা অন্তরাত্মার উপদেশস্বরূপ। আল্লাহর সঙ্গে লজ্জা করা হল সবচেয়ে বেশী ভালো।
১৩. প্রকৃত শিষ্য তিনিই, যিনি আল্লাহ খুশীতে খুশী থাকেন। বীর বা সাহসী তিনিই, যিনি ইহলোক, পরলোক আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর আকাঙ্ক্ষী নন।
মৃত্যু আসন্ন হয়ে এলে হযরত আবু আলী আহমদ (রঃ) তাঁর বোনের হাঁটুতে মাথা রেখে চোখ খুলে বলতে লাগলেন, ঐ আসমানের দরজা খুলে গেছে। জান্নাত সাজানো হয়েছে ফেরেশতাগণ আমাকে ডেকে বলছেন, তোমাকে আমরা এমন জায়গায় নিয়ে যাব, যার কথা জীবনে তুমি চিন্তাও করনি। জান্নাতের হুরগণ অধীর আগ্রহে আমার অপেক্ষা করছেন। কিন্তু আমার মন বলছে, হে প্রভু! আপনার শপথ নিয়ে বলছি, আপনি ছাড়া আর কারও দিকে আমি দৃষ্টি দেব না, ঘুষ সদৃশ অন্য যেকোন বস্তুর বিনিময়ে আমি সে আশা থেকে পিছপা হবো না।
এ পর্যন্ত বলার পরেই তিনি প্রাণত্যাগ করলেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
সূত্রঃ তাযকিরাতুল আউলিয়া
হযরত আবু আলী আহমদ ইবনে মুহাম্মদ রোদবারী (রঃ) – পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন