হযরত আবুল হাছান শাজালী
হযরত শায়েখ কবীর আবুল হাছান শাজালী (রহঃ) বলেন, একবার আমি সফর অবস্থায় একটি টিলার উপর আরোহন করে ঘুমাতে ছিলাম। ঐ সময় বনের হিংস্র প্রাণীরা সকাল পর্যন্ত আমার চারদিকে ঘোরাফেরা করে কাটাল। ঐ রাতটি আমি যতটা সুখ ও আত্মা-প্রশান্তিতে কাটিয়েছি পরবর্তীতে আমার জীবনে আর এমন সুন্দর রজনীর আগমন ঘটেনি।
যাই হোক ঐ রজনী শেষে সকাল বেলা আমার মনে এমন ধারণা সৃষ্টি হতে লাগল যে, আমার মধ্যে বুজুর্গ অর্জন শুরু করেছে। অতঃপর আমি ঐ টিলা ত্যাগ করে একটি উপত্যকায় গিয়ে দেখতে পেলাম, সেখানে প্রচুর সাদা পা বিশিষ্ট পাখী হেঁটে বিচরণ করছে। কিন্তু তারা আমার সাড়া পাওয়ামাত্র সবগুলো উড়ে গেল। পাখীদের এ আচরণে আমার মনে কেমন যেন ভয় ভয় করতে লাগল। এমন সময় কে যেন বলে উঠল, হে ইনসান! গতকালও তো বনের হিংস্র প্রাণীদের সাথে তোমার সখ্যতা ছিল। আজ তোমার কি হল যে, পাখিদের দেখে তুমি ভয় পাচ্ছ? তাঁর কারণ হল, গতকাল পর্যন্ত তোমার মন আমার দিকে মনোযোগী ছিল। কিন্তু আজ যেহেতু তুমি স্বীয় নফসের দিকে ঝুঁকে পড়েছ, সুতরাং তোমার অন্তরে মাখলুকের ভয় প্রবেশ করেছে।
হযরত আবুল হাছান শাজালী অপর এক ঘটনায় উল্লেখ করে বলেন, একবার আমি ক্রমাগত আশি দিন অভুক্ত থাকার পর আমার ধারণা হল যে, আমার মধ্যে বুজুর্গী অর্জন হতে শুরু করেছে। এমন সময় আমার সামনে গর্ত হতে এক অপরুপ নারী বের হয়ে এল। তাঁর রুপের ছটা যেন আকাশের সূর্যের মতো আলো বিকিরন করছিল। সে আমাকে লক্ষ্য করে বলতে লাগল। ঐ ব্যক্তি বড় হতভাগা, যে মাত্র তিন দিন অভুক্ত থাকার পরই আল্লাহ পাকের উপর নিজের আমলের প্রভাব খাটাচ্ছে। সে যেন শুনে রাখে যে, আমি গত ছয় মাস যাবৎ কিছুই আহার করিনি।
হযরত শাজালী অন্য এক ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, একবার আমি ভ্রমণের অবস্থাতে আল্লাহ পাকের দরবারে আরজ করালাম, হে পরওয়ারদিগার ! আমি কোন অবস্থায় নিজেকে তোমার শুকুর গুজার বান্দা মনে করব? সাথে সাথে গায়েব হতে আওয়াজ আসল, যখন তুমি এ কথা মনে করবে যে, দুনিয়াতে তোমাকে ব্যতীত অন্য কারো উপর নেয়ামত নাজিল হয়নি। আমি পুনরায় আরজ করলাম, হে রব্বুল আলামীন! আমি কেমন করে এ কথা মনে করবো যে, আমি ব্যতীত অন্য কারো উপর নেয়ামত নাজিল হয়নি।
অথচ তুমি আম্বিয়ায়ে কেরাম, উলামায়ে কেরাম এবং দুনিয়ার রাজা বাদশাহদের উপর অসংখ্য নেয়ামত নাযিল করেছ। সাথে সাথে উত্তর এল, হে আল্লাহর বান্দা! যদি আলেমদেরকে সৃষ্টি না করা হত, তবে তুমি আল্লাহ ও রাসূলের প্রদর্শিত সঠিক পথের সন্ধান পেতে না। এমনিভাবে যদি বাদশাহদের কে পয়দা করা না হতো, তবে আইন শৃঙ্খলার অভাবে তুমি শান্তি ও নিরাপত্তা পেতে না। অর্থাৎ এ সবই তোমার উপর নেয়ামত হিসাবে নাজিল করা হয়েছে।
হযরত শায়েখ আরো বলেন, একবার আমি এবং আমার জন্য এক সঙ্গী আল্লাহ পাকের নৈকট্য হাসিলের উদ্দেশ্যে এক গুহার দিকে যাচ্ছিলাম, আর মনে মনে বলছিলাম, আগামীকাল অথবা পরশু আমরা আল্লাহ পাকের নৈকট্য অর্জন করতে পারব। এমন সময় হঠাৎ আমাদের সামনে একজন মানুষ এসে হাজির হল। তাঁর চোখে মুখে ভয়ের ছাপ ছিল সুষ্পষ্ট। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম।
আপনি কে? তিনি জবাব দিলেন, আমি আব্দুল মালেক! আমার স্থির বিশ্বাস হল যে, তিনি নিশ্চয়ই কোন আল্লাহ ওয়ালা হবেন, আমি আরজ করলাম, আপনি কি অবস্থায় আছেন বলুন। তিনি উত্তর দিলেন, ঐ ব্যক্তির আর কি অবস্থা হবে। যে এ কথা বলে যে, আগামীকাল অথবা পরশু আল্লাহ পাকের নৈকট্য অর্জন হবে। বরং সে ব্যক্তি বেলায়েত ও কামিয়াবী কিছুই অর্জন হবে না। সুতরাং হে নফস! আল্লাহর এবাদত শুধু আল্লাহর জন্যই কর।
হযরত শায়েখ বলেন, বুজুর্গ উপরোক্ত বক্তব্য শুনে আমি সাথে সাথে সর্তক হয়ে গেলাম এবং নিজের অন্যায় ধারণার কথা স্মরণ করে আল্লাহর দরবারে তওবা করলাম। পরে আমার বুঝে আসল যে, আল্লাহ পাক কি জন্য ঐ বুজুর্গকে আমাদের নিকট প্রেরণ করেছিলেন।