হযরত আবদুল্লাহ মানাযেল (রঃ)
হযরত হামদুন কাচ্চার (রঃ)-এর সুযোগ্য শিষ্য হযরত আবদুল্লাহ মানাযেল (রঃ) সমকালীন যুগের এক বিখ্যাত তাপস ছিলেন। তিনি ছিলেন নির্জনতাপ্রিয়। একা-একা গভীর সাধনায় মগ্ন থাকতেন। এজন্য আসলে তাঁকে দুনিয়াত্যাগী বলা যায়। তিনি নিজে ছিলেন কাচ্ছারিয়া ও মালামতিয়া শাখার মুর্শিদ।
তাঁর মৃত্যু বড় আশ্চর্যজনক। একদিন কথা বলছিলেন আবু আলী (রঃ)-এর সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি আবু আলী (রঃ)-কে বললেন, মৃত্যুর জন্য তৈরি হয়ে যাও। কেননা, তার থেকে রক্ষা পাওয়ার কোন উপায় নেই। আবু আলী (রঃ)-ও বলে ফেললেন, আপনি তৈরি হন না কেন? ব্যাস। সঙ্গে সঙ্গে আবদুল্লাহ (রঃ) নিজের হাতে মাথা রেখে বলে উঠলেন, তবে দেখ আমি বিদায় নিলাম। আর এ কথা বলে তিনি সত্যিই মৃত্যুবরণ করলেন। এতে আবু আলী (রঃ) দারুণ লজ্জা পেলেন আর মর্মাহত হলেন। অবশ্য তিনি পার্থিব নানা বিষয়ে জড়িত ছিলেন। হযরত আবদুল্লাহ ছিলেন সংসারবিরাগী সাধক। সুতরাং তাঁর সঙ্গে প্রতিযোগিতার কোন প্রশ্ন ওঠে না।
একবার এক ব্যক্তি তাঁকে একটি বিষয় জিজ্ঞেস করলেন। তিনি তাঁর উত্তরও দিলেন। কিন্তু প্রশ্নকর্তা বললেন, আর একবার বলুন। তিনি বললেন, আর দুবার কি বলব। একবার যে বললাম, তার জন্যই তো দুঃখ হচ্ছে। কেননা, আমি খুবই ব্যস্ত। আমার সময় কোথায়?
তাঁর উপদেশবাণীসমূহঃ
১. যে ব্যক্তি ফরজ কাজ ত্যাগ করে, সে তো সুন্নত অবশ্যই ত্যাগ করবে। আর যে সুন্নত ত্যাগ করে, খুব তাড়াতাড়ি তার অসিদ্ধ লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা।
২. যখন তোমার মন রিপুর তাড়না থেকে ও অন্যের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা থেকে মুক্ত, তখনই তোমার জন্য উত্তম সময়।
৩. যে লোক লজ্জা-শরম সম্বন্ধে আলোচনা করে, কিন্তু আল্লাহ্র কথা শুনলে লজ্জা বোধ করে না, তার সম্বন্ধে আমি আশ্চর্য বোধ করি।
৪. আমি (আল্লাহ্র দরবারে) জ্ঞান বিদ্যার চেয়ে শিষ্টাচারের জন্যই বেশী মুখাপেক্ষী।
৫. যে ব্যক্তি লোকের চোখে সম্মান বেশী দেখাতে চায়, সে যেন নিজের প্রবৃত্তির প্রতি হীন ও ঘৃণার চোখে দৃষ্টিপাত করে।
৬. আনুগত্য ও অহমিকা কখনই একই সময়ে এক্ত্র হতে পারে না।
৭. মাহান্ধ ব্যক্তি নিজের জ্ঞান দ্বারা কখনও নিজের দোষ দেখাতে পায় না।
৮. সামার্থ নেই বলে যে ফকীর সাজে, তাতে তার গৌরব নেই।
৯. অদৃশ্য বস্তু পৃথিবীর কাছে উন্মুক্ত নয়। যে তার দাবী করে সে মিথ্যাবাদী।
১০. অতীত বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা সম্পূর্ণ অর্থহীন।
১১. দাসত্ব অবলম্বন ইচ্ছাকৃত নয়, বরং তা বাধ্যবাধকতার কাজ।
১২. যে দাসত্বের স্বাদ পেতে চায় সে কখনও পার্থিব ভোগ- বিলাসের প্রত্যাশী নয়।
১৩. প্রকৃত দাস দে-ই, যে নিজে কোন দাস রাখে না। আর যে তাই করতে গেল, সে দাসত্বের বদলে প্রভুত্বের দাবীদার হয়ে গেল।
১৪. যে প্রবৃত্তির বাসনাকে শেষ করে দিয়েছে সে-ই প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন করেছে।
১৫. আল্লাহ্র নির্দেশ অনুযায় যে রুজি-রোজগার করে, সে নির্জন তাপস অপেক্ষাও শ্রেয়-যে রূজি উপার্জন করা ছেড়ে দিয়েছে।
১৬. এক মুহুর্তের জন্য অহমিকা ত্যাগ করা আজীবন এবাদতের চেয়ে উত্তম।
১৭. আরীফ বা তত্ত্বজ্ঞানী সেই, যে যা-কিছু দেখে তা আশ্চর্য বা অভাবিত বলে মনে করে না।
১৮. একবার আল্লাহ্ আপনার ইচ্ছা পূরণ করুন বলে এ লোক তাঁকে দোয়া করেন। তিনি বলেন ইচ্ছার দরজা তো মারেফাতের পরে। অর্থাৎ, মারেফাত যখন অর্জিত হয়, আকাঙ্ক্ষা বা ইচ্ছা আসে তখনই।
আহমদ ইবনে আসওয়াদ বলেন, তিনি এক ব্যক্তিকে স্বপ্নে দেখেন, বলেছেন, আবদুল্লাহকে
বলুন তিনি যেন মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হন। এক বছরের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হবে। তাঁকে এ সংবাদ দিলে তিনি বলেন, সময়টা বড় দীর্ঘ। কার সাধ্য অতদিন অপেক্ষা করে?
হযরত আবদুল্লাহ (রঃ) নিশাপুরেই পরলোকগমন করেন। তাঁকে নিশাপুরের সাধারণ কবরস্থানেই সমাহিত করা হয়।