হযরত আবদুল্লাহ আহমদ মাগরেবী (রঃ) ছিলেন বিখ্যাত সাধক দরবেশগণের শিক্ষাগুরু। আল্লাহর প্রতি তাঁর নির্ভরতা ছিল অপরিসীম। তাঁর দুই বিখ্যাত শিষ্যের নাম হযরত ইব্রাহীম খাওয়স (রঃ) ও হযরত ইব্রাহীম শারবানী (রঃ)-এর যাবতীয় গুণাবলীর মধ্যে তাঁর আধ্যাত্মিকতার পরিচয় ফুটে ওঠে। অসংখ্য অলৌকিক কাণ্ডও তাঁর সুদীর্ঘ জীবনে দেখা যায়। হযরত আবদুল্লাহ একশ কুড়ি বছরের দীর্ঘ আয়ও লাভ করেন।
বিভিন্ন গাছের শেকড় ও ঘাস ছিল তাঁর খাদ্য। মানুষের হাতে ছোঁয়া লেগেছে এমন খাদ্য তিনি কখনও গ্রহণ করেননি। আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি তাঁর বিশেষ লক্ষ্য ছিল। পোশাক-পরিচ্ছদ কখনও ময়লা হতে দিতেন না। নখ কিংবা চুলও বড় হতে পারত না। তিনি সব সময় এহরামের পোশাক পরে থাকতেন।
পৈতৃক বাড়ীখানি পঞ্চাশ দীনারে বিক্রি করে তিনি হজ্জ যান। মরুপথে এক বেদুইন জানতে তিনি তার দীনারগুলি বেদুইনকে দান করে দিলেন। বেদুইন তার হাবভাব বুঝল, ইনি এক অসাধারণ ব্যক্তি। সুতরাং মুহূর্তের মধ্যে তাঁর মানসিকতার পরিবর্তন ঘটল। দীনারগুলি ফিরিয়ে দিয়ে বেদুইন তাঁকে উটের পিঠে তুলে নিল। আর পৌঁছে দিল মক্কায়। বেদুইন হযরত আবদুল্লাহ (রঃ)-এর প্রতি এত বেশী আকৃষ্ট হয়েছিল যে, সে আর তাঁর সঙ্গ পরিত্যাগ করল না। অপকর্ম থেকে বিরত হয়ে তওবা করে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করল। পরবর্তীকালে সে-ও এক বিখ্যাত দরবেশে পরিণত হয়।
হযরত আবদুল্লাহ মাগরেবী (রঃ)-এর চারটি পুত্র ছিল। তাদের প্রত্যেককেই তিনি কারিগরী শিক্ষায় শিক্ষিত করেন। ছেলেদের এই শিক্ষা দেয়াটা কি তাঁর পক্ষে শোভনীয়? বহু লোকের জীবিকার জন্য এরা কারোর নিকট হাত বাড়াবে না। দুই, আমার জন্য মনে মনে গর্ব অনুভব করে পাপী হবে না।
তিনি তাঁর ছেলেদের যে উপদেশ দিয়েছেন তা নিম্নরুপঃ
১. সেই খাঁটি বান্দা যে কামনা-বাসনা পরিত্যাগ করে আল্লাহর এবাদতে রত হয়।
২. নিকৃষ্ট দরবেশ তিনিই, যিনি আমীর-ওমরাদের তোষামোদ করেন। আর উৎকৃষ্ট বান্দা তিনিই, যিনি মানুষের সঙ্গে সদাচরণ করেন।
৩. ধর্মজ্ঞানীরা আল্লাহর রহমতস্বরূপ। তাঁদের জন্য আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হয় এবং আযাব ও গজব সমূহ বাধা পায়।
৪. সংসারবিরাগীদের সামান্যতম এবাদত সংসার ভক্তদের সারা জীবনের এবাদত অপেক্ষাও মূল্যবান।
৫. যারা সংসারের প্রতি আসক্ত, সংসারও তাদের প্রতি আসক্ত। আর যারা দুনিয়ার প্রতি অনুরাগী নয়, দুনিয়াও তাদের প্রতি আকৃষ্ট নয়।
৬. দুনিয়াতে সুফীয়ায়ে কেরামই সর্বাধিক জ্ঞানী যারা প্রেমের আগুনে বিলীন হয়ে চির অমরত্ব লাভ করেছেন।
হযরত আবদুল্লাহ আহমদ মাগরেবী (রঃ) বিখ্যাত তুরে সায়না নামক পাহাড়ী এলাকায় মৃত্যুবরণ করেন এবং সেখানেই সমাহিত হন।
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।