হযরত আদম (আঃ) – এর সৃষ্টির কাহিনী-২য় পর্ব
হযরত আদম (আঃ) এর কাহিনী-এর পূর্বের পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তখন আল্লাহ তায়ালা তার উপর ফেরেস্তাদের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব অর্পণ করলেন । সে এক এক বিষয় নিয়ে এক এক ধরনের ফেরেশ্ততাদেরকে তালীম দিত । বিভিন্ন ধরনের দায়িত্ব পালনকারী ফেরেস্তাদেরকে তাদের দায়িত্বের বিষয় বিশদভাবে বুঝিয়ে সুষ্ঠু দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলত । কোন কোন ফেরেস্তার উপর বহু রকম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকত । তাদেরকে সকল বিষয় সম্বন্ধে জ্ঞান দান করত ।
আজাজিল বাইতুল মামুরে রক্ষিত বিদ্যা ভান্ডার থেকে যতখানি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল ইতিপূর্বে ফেরেশতাদের মধ্যে কেউই তার সমকক্ষতা লাভ করতে সক্ষম হয় নি । আজাজিল এবাদত বন্দেগীর ক্ষেত্রে ও যথেষ্ট অগ্রগামী হয়েছিল । যে কোন কাজ আরম্ভ করার পূর্বে ও পরে নফল নামাজ আদায় করতে বিস্মরণ হত না । দিবারাত্র মুখে আল্লাহ তায়ালার তাসবিহ আদায় করত । এক কথায় একজন শ্রেষ্ঠ আবেদ ও বিদ্বান হিসেবে চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে সে সক্ষম হয়েছিল । এ জন্য বড় বড় ফেরেশতাগণও যেমন জিব্রাইল (আঃ) , মিকাইল (আঃ) , ইসরাফিল (আঃ) , ও আজরাইল (আঃ) , সকলে তার নিকট নিয়মত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতেন । কোন বিষয় কোন ফেরেস্তার কোন প্রশ্ন থাকলে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আজাজিল তার সুষ্ঠু জবাব দিয়ে দিত ।
এভাবে সে বেহেশতের মধ্যে এক বিরাট সম্মানের অধিকারি হয়েছিল । কয়েক লক্ষ্য বছর এভাবে তার জীবন অতিবাহিত হয় । এর মধ্যে বেহেস্ত লক্ষ লক্ষ তালিমগাহে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং কোটি কোটি ফেরেস্তার সংকট নিরসন কল্পে পরামর্শ দিয়েছে । যার সঠিক হিসেব নির্ণয় করা সম্ভব নয় । আজাজিল বাইতুল মামুরের বিদ্যা ভান্ডারের অধিকাংশ বিদ্যা আয়াত্ত করতে সক্ষম হয়েছিল বটে কিন্তু আরশে আজীমের সাথে যে সব কালাম উৎকীর্ণ ছিল তার সঠিক মর্ম আয়াত্ত করতে সক্ষম হয় নি । এ কালামসমূহের মর্ম আয়াত্ত করার অনুমতি ও তার জন্য ছিল না ।
তাই অনেক সময় দূর থেকে এসব কালাম পাঠ করে সে একাকী অস্বস্তি বোধ করত এবং মনে মনে চিন্তা করত কারা নুরে মুহাম্মাদির মালিক, কারা আল্লাহ্র খলিফা এবং কারা আল্লাহ্র হুকুম অমান্যকারি শয়তান। এ সব কালাম বুঝার ক্ষমটা আল্লাহ তায়ালা তাকে দান করেন নি বলে সে আল্লাহ তায়ালার উপর কিছুটা অসুন্তুষ্টি ছিল । আবার মাঝে মাঝে চিন্তা করত যে বিদ্যা আয়াত্ত করা বা যে কালাম বুঝা তার পক্ষকে সম্ভব হল না সে বিদ্যা বুঝার মত আর কোন ব্যক্তি আছে , যার মান তার চেয়ে উপরে । এ বিষয় চিন্তা ভাবনা করতে গিয়ে তার মধ্যে অহংকারের সৃষ্টি হয় । এ অহংকার ধীরে ধীরে দানাবাধে একদিন আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে সে মোকাবেলা তর্কে অবতীর্ণ হয় এবং তার জীবনের পরিসমাপ্তি ও ধ্বংস ডেকে আনে ।
একদিন আল্লাহ তায়ালা ফেরেস্তাদের মজলিশে ঘোষনা দিলেন “আমি পৃথিবীতে আমার খলিফা (প্রতিনিধি) তৈরি করতে যাচ্ছি । “ফেরেস্তারা বলল, “আপনি আবার কেন আর এক জাতীয় প্রানী সৃষ্টি করতে চান । যারা পৃথিবীতে গিয়ে ঝগড়া, ফ্যাসাদ ও খুন খারাবীতে লিপ্ত হবে । তার চেয়ে আমরাই তো আপনার গুণকীর্তন ও পবিত্রতা বর্ণনায় দিনরাত ব্যস্ত থাকি । এটি উত্তম নয় কি? “আল্লাহ তায়ালা তদত্তরে বললেন, আমি যা জানি তোমারা তা যান না ।”
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী