এ সময়ে জিব্রাইল (আঃ) হযরত আদম (আঃ)-কে ঘুম থেকে জাগ্রত করলেন। হযরত আদম (আঃ) জাগ্রত হয়ে সম্মুখে অপরূপ সুন্দরী, চন্দ্রের ন্যায় উজ্জ্বল এক যুবতীকে দেখে তন্ময় হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকলেন। হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন, ইনি হলেন আপনার জীবনসঙ্গিনী বিবি হাওয়া। হযরত আদম (আঃ) তাঁর জীবনসঙ্গিনীর সুসংবাদ শুনে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। তাঁর প্রাণের যে অতৃপ্তি ছিল তা যেন নিমিষে দূরীভূত হল। হৃদয়ের মাঝে অফুরন্ত প্রেমের বান ডেকে উন্নত তরঙ্গের ন্যায় চতুর্দিকে আছড়ে পড়তে লাগল। কী যে তৃপ্তি, কী যে আনন্দ, কী যে মায়া তখন তাঁর অন্তরে বিরাজ করছিল, তার বর্ণনা দেওয়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। কথিত আছে, পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালা কয়েকজন নারীকে অপরূপ সৌন্দর্য দান করেছিলেন। তন্মধ্যে বিবি হাওয়ার সৌন্দর্য ছিল অন্যতম।
হযরত আদম (আঃ) দীর্ঘসময় বিবি হাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার উদ্দেশে সম্মুখে অগ্রসর হলেন। তখন জিব্রাইল (আঃ) বাধা দিয়ে বললেন, তাঁকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার পূর্বে তাঁর নিকটবর্তী হওয়া আপনার জন্য জায়েজ নেই। অতএব প্রথমে আল্লাহর দরবারে বিবাহের জন্য আবেদন করুন। হযরত আদম (আঃ) জিব্রাইলের শিখানো পদ্ধতিতে হাওয়াকে বিবাহ করার জন্য আল্লাহর দরবারে আরজ করলেন। আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আঃ)-এর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদম–হাওয়ার বিবাহের মঞ্চ ঠিক করার জন্য ফেরেশতাগণকে হুকুম দিলেন। ফেরেশতাগণ অত্যন্ত আনন্দসহকারে স্বর্ণ, রৌপ্য, হিরা-জহরত ও মণিমুক্তা দ্বারা এক বিরাট মঞ্চ তৈরি করলেন। এ মঞ্চটি তৈরি করা হল বেহেশতের মধ্যকার সবচেয়ে আরামের জায়গায়। তুষা নামক ছায়াদানকারী এক বিশাল বৃক্ষের নিচে সকল ফেরেশতাগণকে দাওয়াত দেওয়া হল এ বিবাহ মজলিশে। আল্লাহ তায়ালা আরশ থেকে এ মঞ্চ পর্যন্ত সব পর্দা উঠিয়ে দিলেন, যাতে সব ফেরেশতা ও আদম–হাওয়া যেন বেহেশতের মধ্যকার সবচেয়ে অধিক তৃপ্তিকর জিনিস আল্লাহ তায়ালার দিদার লাভ করে অশেষ আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। অতঃপর আল্লাহ তায়ালার স্বয়ং সংক্ষিপ্ত খোতবা দান বিবাহের কার্য সমাধা করে দিলেন।
বিবাহের খুৎবায় আল্লাহ তায়ালা যে কথাগুলো উচ্চারণ করেছেন তা সব প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার; গৌরব ও অহংকার তাঁর ভূষণ। নবী ও রাসুলগণ তাঁর প্রেরিত বান্দা; তাদেরকে মানুষের মুক্তির দূত হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর একান্ত বন্ধু ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল। আল্লাহ তায়ালা সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। সবাইকে শেষ পর্যন্ত তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে। ফেরেশতাগণ তাঁর আজ্ঞাবহ। যে ফেরেশতাগণকে সাক্ষী রেখে আদম ও হাওয়ার বিবাহ বন্ধন সম্পন্ন করেন, তিনি এদের দ্বারা সৃষ্টির আরেক অধ্যায়ের সূচনা করলেন। এ বিবাহের মহরানা হবে দুরুদ ও তাসবীহ। আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো শরিক নেই।
অতঃপর আদম (আঃ)-কে বলা হল, হে আদম! তুমি ও তোমার বিবি বেহেশতে পরম আনন্দে বসবাস কর। সেখানের ফলমূল ভক্ষণ কর, কিন্তু নির্দিষ্ট ঐ গাছটির কাছে যেও না। যদি যাও তবে তা হবে অন্যায় ও পাপের অন্তর্ভুক্ত কাজ। অতএব তোমরা সাবধান থেকো। শয়তান তোমাদের পরম শত্রু। তোমাদের উপর আল্লাহর বরকত ও রহমত নাযিল হোক। হযরত আদম ও হাওয়া বিবাহ অনুষ্ঠানের পরে পাঠ করলেন, হে মহান প্রভু! আমরা তোমার গুণগান করে জীবন কাটাতে চাই। তুমি মহান, তুমি ছাড়া আমাদের আর কোনো উপাস্য নেই। তোমার সাহায্য ছাড়া কারো রক্ষার পথ নেই। তুমি আমাদেরকে তোমার রহমতির ছায়া দান করো। আমিন।
বিবাহের পরে হযরত আদম (আঃ) বিবি হাওয়াকে স্পর্শ করার জন্য যখন অগ্রসর হলেন, তখন তাঁকে বাধা দেওয়া হল এবং বলা হল প্রথমে বিবির মহরানা আদায় কর, তার পরে তাঁকে স্পর্শ কর। তখন হযরত আদম (আঃ) বললেন, হে খোদা! আমি কী দিয়ে এ মহরানা আদায় করব? তখন তাঁকে বলে দেওয়া হল, তুমি শেষ নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর অন্তত দশ বার দুরুদ শরীফ পাঠ করো। তাহলে তোমার পক্ষ থেকে মহরানা আদায় হয়ে যাবে। তখন আদম (আঃ) দশ বার দুরুদ শরীফ পাঠ করলেন এবং নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কলেমা পাঠ করে তাঁর দ্বীন গ্রহণ করলেন। মানব জাতির মধ্যে সর্বপ্রথম হযরত আদম (আঃ) নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর ইমান আনেন এবং তাঁর উম্মতের অন্তর্ভুক্ত হন।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত আদম (আঃ) এর বিবাহ-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
"আলোর পথ"-এ প্রকাশিত গল্পসমূহ ও লেখনী মূলত পাঠক, শুভাকাংখী এবং সম্মানিত আবেদনকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এই কনটেন্টগুলোর উপর আমরা কোনো মেধাসত্ত্ব (copyright) দাবি করি না। যদি কোনো গল্প, ছবি বা তথ্যের কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়ে আপনার প্রশ্ন, সংশয় বা আপত্তি থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে আমাদের যোগাযোগ পৃষ্ঠায় যোগাযোগ করুন। আমরা যথাযথ আইনানুগ পদ্ধতিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।