হযরত আদম (আঃ)-এর প্রথম অপরাধ -৫ম পর্ব
হযরত আদম (আঃ) বিবি হাওয়াকে জিজ্ঞেস করলেন তুমি আমাকে সেই নিষিদ্ধ গাছের ফল আমার অলক্ষে খাইয়ে দিয়েছে? বিবি হাওয়া বললেন, হ্যাঁ, প্রাণপ্রিয় স্বামী! আমি সাপ রূপধারী ফেরেস্তার পরামর্শ অনুসারে সুকৌশলে তোমাকে সেই গন্ধম ফল খাইয়ে দিয়েছি। এখন আমাদের কি হবে? হযরত আদম (আঃ) বললেন, এখন আল্লাহ্র দরবারে কাঁদ আর এস্তেগফার পাঠ কর। কিছুক্ষণের মধ্যে হযরত জিব্রাইল (আঃ) সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আদম! আপনি ও আপনার স্ত্রী আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ লঙ্ঘন করেছেন। এখন আপনারা বেহেস্তের বাইরে অবস্থান নিন। পরে আল্লাহ আপনাদের সম্পর্কে যে ফয়সালা দিবেন সে অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হযরত আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়া আল্লাহ তায়ালার আদেশ অমান্য করার পর পাগল প্রায় হয়ে চতুর্দিকে আরম্ভ করলেন। হঠাৎ আল্লাহ তায়লা হযরত আদম (আঃ) কে ডাকলেন। হযরত আদম (আঃ) কৃত অপরাধের কারণে এতই লজ্জিত হলেন যে, আল্লাহ তা’য়ালার ডাকে তিনি সাড়া দিলেন না। তখন জিব্রাইল (আঃ) তাঁর কাছে এসে বললেন, হে আদম! আল্লাহ তায়ালা আপনাকে ডেকেছেন। তখন হযরত আদম (আঃ) বললেন, হে মহান প্রভু! আমি আপনার কাছে বড়ই লজ্জিত। আপনার ডাকে সাড়া দিতে সাহস পাই না। তখন আল্লাহ তায়ালা বললেন, আমি কি তোমাদিগকে ঐ গাছ সম্বন্ধে নিষেধ প্রদান করি নাই? এবং বলি নাই যে শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? তখন আদম ও বিবি হাওয়া কেঁদে কেঁদে বললেন, হ্যাঁ প্রভু! আপনি বলেছেন। এ সত্ত্বেও আমরা নিজেরা নিজেদের উপর জুলুম করেছি। এখন যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন তবে আমরা বরবাদ হয়ে যাব। আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আঃ)-এর আরজের জবাবে বললেন আপাতত তোমরা সকলে একে অপরের শত্রু হয়ে পৃথিবীতে নেমে যাও। সেখানে তোমাদের কিছু দিন জীবন কাটিয়ে আসতে হবে। যারা আমার খুশি অর্জন করে আসবে তাঁদের জন্য বেহেস্ত এবং যারা আমার অবাধ্য হবে তাঁদের জন্য কঠিন আজাব নির্ধারিত থাকবে। পৃথিবীতে তোমরা নির্দিষ্ট সময় বাচবে তারপর তোমাদেরকে নিয়ে আসা হবে।
আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আঃ) ও হাওয়াকে এ গাছের কাছে যেতে ও ফল খেতে কেন নিষেধ করেছিলেন তাঁর সঠিক কোন জবাব পাওয়া যায় না। তবে তাফসীরকারকগণ অনেকে অনেক কথা লিখেছেন। জনৈক প্রসিদ্ধ তাফসীরকার তাঁর বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন যে, একদা মুছা(আঃ) আল্লাহ তায়ালার নিকট জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে মহান প্রভু! আপনি আদম(আঃ)-কে যে গাছের ফল খেতে নিষধ করেছেন সে গাছটি ছিল এমন জায়গায় যেখানে হযরত আদম (আঃ) এর বাসস্থান ছিল।
হযরত আদম (আঃ)-এর এত কাছে গাছটি কেন রাখা হল? দ্বিতীয়ত হযরত আদম (আঃ)-এর বাসস্থানের চারপাশে প্রাচীর ছিল, প্রহরী ছিল, দারোয়ান ছিল। এমতবস্থায় শয়তান কি করে বেহস্তে প্রবেশ করে হযরত আদম (আঃ)-কে পথভ্রষ্ট করল? ব্যাপারটা বিশ্লষন করলে প্রমাণ হয় যে, শয়তান আপনার উপর দিয়ে খোদকারী করে সফল হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা হযরত মুছা(আঃ) এর জবাবে বললেন, এটা তকদীরের ব্যাপার এ সম্বন্ধে প্রশ্ন কর না। এ বিষয়ে তোমাদের চেয়ে আমি ভাল জানি।
তাফসীরকারক এ বিষয়ের আলোচনা প্রসঙ্গে আরো বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা হযরত আদম (আঃ) কে পৃথিবীতে প্রেরণের উদ্দেশেই সৃষ্টি করে ছিলেন। তিনি কোন কারণ ছাড়াই তাঁকে পৃথিবীতে প্রেরণ করতেন। পৃথিবীতে প্রেরণের সাথে গন্ধম খাওয়ার কোন সূক্ষ্ম সম্পর্ক নেই। গন্ধম খাওয়া দ্বারা তিনি এটাই প্রমাণ করেছেন যে, বনী আদম শয়তান ধোকায় পড়বে, ভুল করবে, অন্যায় করবে এবং অপরাধ করবে। আবার সে আল্লাহ্র দরবারে ক্ষমা প্রাথর্না করবে। আল্লাহ তায়ালা তাঁদের অপরাধ ক্ষমা করে দিবেন। অপরাধ করা ও ক্ষমা লাভ করার এ প্রামাণ্য চিত্র হযরত আদম (আঃ)-এর গন্ধম খাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ করাই ছিল আল্লাহ তায়ালার মহান উদ্দেশ্য।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী
হযরত আদম (আঃ)-এর প্রথম অপরাধ -১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন